বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং ভোগান্তি এবারও পিছু ছাড়ছে না শিক্ষার্থীদের। একদিকে আসন সংকটের কারণে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে যেমন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে, তেমনি গুচ্ছ বা সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু না হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে এখন ভর্তি পরীক্ষা নামক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছুটে বেড়াতে হবে। অভিভাবকদেরও ভোগান্তি পোহাতে হবে, করতে হবে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে এই দ্বিমুখী সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন। এছাড়া গতবারের উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীও রয়েছে, যারা এবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেবে। সে হিসাবে এবার সাড়ে ৮ লাখ বা তার বেশি উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য ভর্তি-যুদ্ধে অংশ নেবে। এছাড়া এ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন ছাত্রছাত্রী। এছাড়া জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে রয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৭, জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থেকে ৩ এর মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭৮। এসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ছুটবে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এত ছোটার পরও কতজনের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন-পূরণ হবে? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪১৩টি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৮৯ হাজার।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৬৮৮। এছাড়া শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১ হাজার ৩০টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ২৫২, জগন্নাথে ২ হাজার ৮৫০, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭২২, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৭৪, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১০২ , বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার দুইশ আসন রয়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য। এছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৯৫, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৫৫, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১৩৫, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১ হাজার ২৩০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২ হাজার ২২, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ১ হাজার ৩৪০, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় ১ হাজার ১৯৬টি আসন রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ১ হাজার, কয়টিতে ৫শরও নিচে। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে আসন আছে চার হাজার তিনশ ৪৪টি। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে আসন সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩০টি।
গুচ্ছ পদ্ধতি এবারও হচ্ছে না : গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা না হওয়ায় বিগত বছরগুলোর মতো এবারও দুর্ভোগ পোহাতে হবে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপাচার্যদের সভায় বেশিরভাগ উপাচার্য সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছিলেন। এরপর এ নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। কিন্তু ফলাফল এখন পর্যন্ত শূন্য। দু বছর আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছেন।
পরীক্ষার তারিখ ও স্থানের কারণে ভোগান্তি :
ভর্তি পরীক্ষার তারিখ বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর। আবার রাজশাহীর অপর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১৭ নভেম্বর। কোনো শিক্ষার্থী এই দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইলে তাকে রাজশাহীতেই দুবার যেতে হবে।
আবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ নভেম্বর। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ ও ১৮ নভেম্বর। যারা এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় তবে তারা কী করবে?
অভিভাবকদের প্রশ্ন, দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো যদি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয়-ভাবে পরীক্ষা নিয়ে ফলাফলের ভিত্তিতে কে কোন মেডিক্যালে পড়বেন, তা ঠিক করে দিতে পারে, তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন তা পারবে না? এ ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, সরকার যদি একযোগে মাসব্যাপী আট-নয় লাখ শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন শিক্ষার্থীদের একযোগে পরীক্ষা নিতে পারবে না? এ ক্ষেত্রে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ভর্তি ফরম পূরণ করার সময় ক্রমান্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও পছন্দের বিষয়ের তালিকা দিতে পারে।