ঢাকা , বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

জুমা আরবি শব্দ। এর অর্থ সমবেত হওয়া, একত্র হওয়া। শুক্রবারকে আরবিতে ‘এওমুল জুমা’ বা জুমার দিন বলা হয়। যেহেতু সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে সেদিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে জুমার নামাজ বলা হয়।

জুমার দিনের গুরুত্ব : ইসলামে জুমার দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এ দিন প্রতিটি মুসলমানের জন্য একটি বিশেষ দিন। সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বটে। এ দিনের গুরুত্ব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৮) এ দিনটির অশেষ গুরুত্ব থাকায় আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি সুরাও নাজিল করেছেন। এ সুরাটিতে জুমার দিনের করণীয় ও ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা বন্ধ করো। এটিই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সুরা জুমা ৯)

জুমার ফজিলত : জুমার দিন ও জুমার নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দুজন করে ফেরেশতা অবস্থান করেন এবং তারা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিখতে থাকেন। জুমার দিনে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মসজিদে উপস্থিত হয়, সে একটি উট কোরবানি করার সওয়াব লাভ করে। দ্বিতীয় জন একটি গরু এবং তৃতীয় জন একটি দুম্বা কোরবানি করার সওয়াব পায়। আর চতুর্থ জন একটি মুরগি এবং পঞ্চম জন একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। সাহল ইবনে আবু সাহলের বর্ণনায় আরও আছে, ‘এরপর যে ব্যক্তি মসজিদে আসে সে কেবল নামাজ পড়ার সওয়াব পায়।’ অতঃপর ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগসহ খুতবা শুনতে থাকেন।’ (সহিহ বুখারি ৮৮১)

জুমার দিনে মৃত্যুর ফজিলত : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের ফেতনা (কবরের প্রশ্ন ও আজাব) থেকে নিরাপদে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ) অন্যত্র রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন মৃত্যুবরণ করে, তার কবরের আজাব ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং সে একজন শহীদের মর্যাদা লাভ করে।’ (মিশকাত)

জাহান্নামের শাস্তি বাড়ানো হয় না : প্রতিদিন দ্বিপ্রহরের সময় জাহান্নামের আগুনের তেজ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। কিন্তু জুমার দিন দ্বিপ্রহরে জুমার বরকতে জাহান্নামের আগুনের তেজ বাড়ানো হয় না। (ইয়াহইয়াউল উলুম)

জুমার দিনের আমল : জুমার দিন হাতের নখ কাটা, সুন্দর করে গোসল করা, পরিষ্কার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মসজিদে আগে যাওয়া এবং দাঁত মেসওয়াক করা সুন্নত। মসজিদে প্রবেশ করেই (বসার আগে) প্রথমে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’-এর নামাজ আদায় করা এবং ইমামের দিকে মুখ করে বসে মনোযোগসহ ইমামের খুতবা শোনা উত্তম। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, অতঃপর সে নামাজ আদায় করবে এবং চুপ করে মনোযোগসহ ইমামের খুতবা শুনবে, তাহলে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কার তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ ৪৭৯)

অন্যত্র রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে উত্তমরূপে গোসল করে আগে আগে মসজিদে যায় এবং বাহনে না চড়ে পায়ে হেঁটে যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, অনর্থক কোনো কাজ করে না, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের নফল রোজা পালন ও নফল নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি ৪৫৬)

মনোযোগসহ খুতবা শোনা : খুতবা আরবি শব্দ। এর অর্থ বক্তৃতা, ভাষণ, ঘোষণা ইত্যাদি। জুমার খুতবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। জুমার দিন মুসল্লিদের জন্য ইমামের খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই ইমাম যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করবেন, তখন মুসল্লিরা মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করবেন। এ সময় কথা বলা, পানাহার, তসবিহ পাঠ, সালাম দেওয়া, হাঁচি বা সালামের জবাব দেওয়া নিষেধ। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত বা নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ করো’, এ কথাও বলা যাবে না। কারণ হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন ইমামের খুতবা প্রদানের সময় যদি তুমি তোমার পাশের মুসল্লিকে বলো, ‘চুপ করো’, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে।’ (সহিহ বুখারি ৯৩৪)

দরুদ পাঠ করা : রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা একটি মর্যাদাপূর্ণ আমল। দরুদ পাঠের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে তার প্রতি দরুদ পাঠ করা আমাদের কর্তব্য। আর জুমার দিন রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব। দরুদ পাঠের মধ্যে মুমিনদের জন্য অনেক কল্যাণ, রহমত ও বরকত নিহিত রয়েছে। দরুদ শরিফ গুনাহ ক্ষমা হওয়া এবং সব দুঃখ-কষ্ট ও বিষণœতা থেকে মুক্তি অর্জনের উপায়। দরুদ পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তার ওপর দরুদ পড়ো এবং তার প্রতি যথাযথভাবে সালাম প্রেরণ করো।’ (সুরা আহজাব ৫৬)

দোয়া করা : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। দোয়া হলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার অতুলনীয় মাধ্যম। দোয়া মুমিনের প্রাপ্তি ও মুক্তির হাতিয়ার। দোয়াও একটি ইবাদত। জুমার দিন দোয়া করা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। এ ছাড়া ওই সময় যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তা দান করেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে মুহূর্তটি অতি স্বল্প।’ (সহিহ মুসলিম ১৮৫৮) জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সঠিক মুহূর্ত নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ সম্পর্কে ৪৫টি মত পাওয়া যায়। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে যে মুহূর্তটিতে দোয়া কবুলের আশা করা যায়; তোমরা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সেই মুহূর্তটি তালাশ করো।’ (তিরমিজি ৪৮৯)

জুমার নামাজ ত্যাগ করার গুনাহ : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শরিয়তসম্মত কোনো ওজর ছাড়া জুমার নামাজ ত্যাগ করে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন কিতাবে লেখা হয়, যে লেখা মুছে ফেলা যায় না এবং তা পরিবর্তনও করা হয় না।’ (মিশকাত ১৩৭৯) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, যেসব লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার প্রচণ্ড ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যেসব লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই।’ (সহিহ মুসলিম ৬৫২)

সর্বোপরি জুমা হলো মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এ নামাজের প্রতি আমাদের খুব যতœবান হতে হবে। অযথা অলসতা করে কোনো মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ ত্যাগ করা উচিত হবে না। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করার তওফিক দান করুন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

আপডেট টাইম : ০১:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

জুমা আরবি শব্দ। এর অর্থ সমবেত হওয়া, একত্র হওয়া। শুক্রবারকে আরবিতে ‘এওমুল জুমা’ বা জুমার দিন বলা হয়। যেহেতু সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে মুসলমানরা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্র হয়ে জামাতের সঙ্গে সেদিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে জুমার নামাজ বলা হয়।

জুমার দিনের গুরুত্ব : ইসলামে জুমার দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এ দিন প্রতিটি মুসলমানের জন্য একটি বিশেষ দিন। সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বটে। এ দিনের গুরুত্ব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৮) এ দিনটির অশেষ গুরুত্ব থাকায় আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি সুরাও নাজিল করেছেন। এ সুরাটিতে জুমার দিনের করণীয় ও ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা বন্ধ করো। এটিই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সুরা জুমা ৯)

জুমার ফজিলত : জুমার দিন ও জুমার নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দুজন করে ফেরেশতা অবস্থান করেন এবং তারা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিখতে থাকেন। জুমার দিনে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মসজিদে উপস্থিত হয়, সে একটি উট কোরবানি করার সওয়াব লাভ করে। দ্বিতীয় জন একটি গরু এবং তৃতীয় জন একটি দুম্বা কোরবানি করার সওয়াব পায়। আর চতুর্থ জন একটি মুরগি এবং পঞ্চম জন একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। সাহল ইবনে আবু সাহলের বর্ণনায় আরও আছে, ‘এরপর যে ব্যক্তি মসজিদে আসে সে কেবল নামাজ পড়ার সওয়াব পায়।’ অতঃপর ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগসহ খুতবা শুনতে থাকেন।’ (সহিহ বুখারি ৮৮১)

জুমার দিনে মৃত্যুর ফজিলত : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের ফেতনা (কবরের প্রশ্ন ও আজাব) থেকে নিরাপদে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ) অন্যত্র রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন মৃত্যুবরণ করে, তার কবরের আজাব ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং সে একজন শহীদের মর্যাদা লাভ করে।’ (মিশকাত)

জাহান্নামের শাস্তি বাড়ানো হয় না : প্রতিদিন দ্বিপ্রহরের সময় জাহান্নামের আগুনের তেজ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। কিন্তু জুমার দিন দ্বিপ্রহরে জুমার বরকতে জাহান্নামের আগুনের তেজ বাড়ানো হয় না। (ইয়াহইয়াউল উলুম)

জুমার দিনের আমল : জুমার দিন হাতের নখ কাটা, সুন্দর করে গোসল করা, পরিষ্কার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মসজিদে আগে যাওয়া এবং দাঁত মেসওয়াক করা সুন্নত। মসজিদে প্রবেশ করেই (বসার আগে) প্রথমে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’-এর নামাজ আদায় করা এবং ইমামের দিকে মুখ করে বসে মনোযোগসহ ইমামের খুতবা শোনা উত্তম। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, অতঃপর সে নামাজ আদায় করবে এবং চুপ করে মনোযোগসহ ইমামের খুতবা শুনবে, তাহলে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কার তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ ৪৭৯)

অন্যত্র রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে উত্তমরূপে গোসল করে আগে আগে মসজিদে যায় এবং বাহনে না চড়ে পায়ে হেঁটে যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, অনর্থক কোনো কাজ করে না, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের নফল রোজা পালন ও নফল নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি ৪৫৬)

মনোযোগসহ খুতবা শোনা : খুতবা আরবি শব্দ। এর অর্থ বক্তৃতা, ভাষণ, ঘোষণা ইত্যাদি। জুমার খুতবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। জুমার দিন মুসল্লিদের জন্য ইমামের খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই ইমাম যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করবেন, তখন মুসল্লিরা মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করবেন। এ সময় কথা বলা, পানাহার, তসবিহ পাঠ, সালাম দেওয়া, হাঁচি বা সালামের জবাব দেওয়া নিষেধ। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত বা নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ করো’, এ কথাও বলা যাবে না। কারণ হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন ইমামের খুতবা প্রদানের সময় যদি তুমি তোমার পাশের মুসল্লিকে বলো, ‘চুপ করো’, তাহলেও তুমি অনর্থক কথা বললে।’ (সহিহ বুখারি ৯৩৪)

দরুদ পাঠ করা : রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা একটি মর্যাদাপূর্ণ আমল। দরুদ পাঠের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। রাসুল (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে তার প্রতি দরুদ পাঠ করা আমাদের কর্তব্য। আর জুমার দিন রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব। দরুদ পাঠের মধ্যে মুমিনদের জন্য অনেক কল্যাণ, রহমত ও বরকত নিহিত রয়েছে। দরুদ শরিফ গুনাহ ক্ষমা হওয়া এবং সব দুঃখ-কষ্ট ও বিষণœতা থেকে মুক্তি অর্জনের উপায়। দরুদ পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তার ওপর দরুদ পড়ো এবং তার প্রতি যথাযথভাবে সালাম প্রেরণ করো।’ (সুরা আহজাব ৫৬)

দোয়া করা : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। দোয়া হলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার অতুলনীয় মাধ্যম। দোয়া মুমিনের প্রাপ্তি ও মুক্তির হাতিয়ার। দোয়াও একটি ইবাদত। জুমার দিন দোয়া করা অন্যান্য দিনের তুলনায় অধিক মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। এ ছাড়া ওই সময় যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তা দান করেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে মুহূর্তটি অতি স্বল্প।’ (সহিহ মুসলিম ১৮৫৮) জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সঠিক মুহূর্ত নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ সম্পর্কে ৪৫টি মত পাওয়া যায়। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে যে মুহূর্তটিতে দোয়া কবুলের আশা করা যায়; তোমরা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সেই মুহূর্তটি তালাশ করো।’ (তিরমিজি ৪৮৯)

জুমার নামাজ ত্যাগ করার গুনাহ : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শরিয়তসম্মত কোনো ওজর ছাড়া জুমার নামাজ ত্যাগ করে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন কিতাবে লেখা হয়, যে লেখা মুছে ফেলা যায় না এবং তা পরিবর্তনও করা হয় না।’ (মিশকাত ১৩৭৯) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, যেসব লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার প্রচণ্ড ইচ্ছা হয় যে, আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যেসব লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই।’ (সহিহ মুসলিম ৬৫২)

সর্বোপরি জুমা হলো মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এ নামাজের প্রতি আমাদের খুব যতœবান হতে হবে। অযথা অলসতা করে কোনো মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ ত্যাগ করা উচিত হবে না। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করার তওফিক দান করুন।