নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। ফলে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে খেলা কিছুটা শঙ্কায় পড়ে সাবিনা খাতুন-রূপনা চাকমাদের। তবে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রতিবেশী দেশটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
পাকিস্তানকে ৫-২ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে ভারত। তাই বাংলাদেশ ম্যাচের আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। অন্যদিকে, ভারতের বিপক্ষে ৩ গোলের বেশি ব্যবধানে হারলেই সেমিফাইনালে খেলা হতো না বাংলাদেশের। তবে জয় দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। ২ ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪। আর পাকিস্তানকে হারানো ভারতের পয়েন্ট ৩। বিদায় নিয়েছে ১ পয়েন্ট পাওয়া পাকিস্তান।
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে আজ বল দখল, গতি কিংবা আক্রমণ; বাংলাদেশের ফুটবলারদের সঙ্গে কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারেনি ভারতের ফুটবলাররা। আজ দুই পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ফেরানো হয় মারিয়া মান্দা ও মাসুরা পারভিনকে। তাতেই যেন খেলার ধার বেড়ে যায়। আক্রমণের ঢেউ তুলে ভারতকে দিশেহারা করে ফেলেন তহুরা-শামসুন্নাহাররা। প্রথমার্ধেই ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে গোলের সূচনা করেন আফিইদা খন্দকার। ১৯তম মিনিটে জটলার মধ্যে থেকে দুর্দান্ত এক গোল আদায় করে নেন তিনি। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কর্নার ভারতের খেলোয়াড়রা ফিরিয়ে দিলে, সেই বল রিসিভ করে বাতাসে ভাসিয়ে গোল দেন প্রথমবারের মতো সাফে খেলতে আসা এই তারকা। ২৮ মিনিটের মাথায় ঋতুপর্নার ক্রসে দলের ব্যবধান বাড়ান তহুরা খাতুন। ভারতের গোলকিপারের ভুলে আসে এই গোল। এর কিছুক্ষণ পর সুযোগ পেলেও শামসুন্নাহার বল গোলবারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন।
৩৪তম মিনিটে বাংলাদেশের গোলকিপার রূপনা চাকমাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ভারতের নারী ফুটবলের কিংবদন্তি বালা দেবি। দুর্দান্ত সেভ করেন বাংলাদেশের গোলকিপার। ৪২তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন তহুরা। লেফট উইং থেকে শামসুন্নাহার সিনিয়রের থ্রু ধরে বক্সের ঠিক মাথায় শামসুন্নাহার জুনিয়র কাট ব্যাক করেন তহুরাকে। তার বুলেটগতির শটে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
প্রধমার্ধ জুড়ে দুর্দান্ত গোলকিপিং করলেও ৪৩ মিনিটের মাথায় ভুল করে বসেন রূপনা চাকমা। দূরপাল্লার শটে গোল পেয়ে যায় ভারত। প্রথমার্ধে ভারতের তিন শটের জায়গায় বাংলাদেশ শট নেয় ৬টি। লক্ষ্যে রাখা ৪ শটের মধ্যে ৩টিতেই গোল আদায় করে বাংলাদেশ। ভারত লক্ষ্যে শট রেখেছিল ৩টি। প্রথমার্ধে হলুদ কার্ড হজম করেন রূপনা।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলেরই আক্রমণের ধার কিছুটা কমে যায়। ৫৫তম মিনিটে ভারতের দারুণ একটি আক্রমণ রুখে দেন রূপনা। পুরো ম্যাচ জুড়েই দুর্দান্ত সব সেভ দেন তিনি। ভারতের হয়ে দারুণ খেলেন মনীষা কল্যাণ। শেষদিকে আরও একটি গোল পেতে পারত বাংলাদেশ। তবে ৮০তম মিনিটের শুরুতে স্বপ্না রাণীর দূরপাল্লার একটি শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশের গোল ব্যবধান বাড়াতে দেননি ভারতের গোলকিপার পান্থোই চানু।
ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন জোড়া গোল দেওয়া তহুরা খাতুন। এই পুরস্কার তিনি উৎসর্গ করেছেন সম্প্রতি মারা যাওয়া তার বন্ধুকে। বর্তমান কোচ পিটার বাটলার ছাড়াও ধন্যবাদ জানিয়েছেন গতবার চ্যাম্পিয়ন বানানো কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনকে।