৯ বছর পেরিয়ে গেলেও গাইবান্ধায় সংঘটিত তিন সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শুরু হয়নি এখনও। মেলেনি রাষ্ট্রের কোনো আশ্বাসের প্রতিফলন।
গতকাল দুপুরে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ঘটনার করুণ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন নির্যাতিত সাঁওতালরা। অনেকেই উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন, কারো শরীরে রয়ে গেছে গুলির অংশ, যা তাদের প্রতিনিয়ত যন্ত্রণার মধ্যে রেখেছে। বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো বাস্তবায়ন আজও হয়নি।
সমাবেশে সাঁওতাল হত্যার সুষ্ঠু বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার, বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়াও, সাঁওতালদের রক্তে ভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবিও উঠে আসে তাদের বক্তব্যে।
বক্তারা বলেন, শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মারডি ও রমেশ টুডুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সাঁওতাল নেতা থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে স্থানীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এতদিন পেরিয়ে গেলেও বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। মামলার মূল আসামি সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দসহ অন্যান্য আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ছাড়াও, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকায় সাঁওতালদের বসবাসের জন্য পৈত্রিক ১,৮৪২ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এর আগে জয়পুর গ্রামে নির্মিত অস্থায়ী শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের অনুষ্ঠানমালা। পরে মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে সাঁওতালরা জাতীয় ও কালো পতাকা, তীর-ধনুক, বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার ও বিভিন্ন দাবিসম্বলিত ফেস্টুনসহ এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গানাসাস চত্বরে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও জনউদ্যোগ গাইবান্ধা যৌথভাবে এ সব কর্মসূচি পালন করে।