ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড়দের স্বার্থের বলি শিশু

পাঁচ বছরের ফুটফুটে মুনতাহা। নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তার কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই। তারপরও বড়দের চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে সিলেটের এই শিশুটিকে। যে হাতে ক খ লেখা শিখিয়েছিল গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মর্জিনা; সেই হাতই মুনতাহাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। মর্জিনাকে গৃহশিক্ষক থেকে বাদ দেওয়ার মতো সামান্য ঘটনার প্রতিশোধের শিকার হয়েছে মুনতাহা। খুনের পাঁচ দিন পর গত রবিবার মুনতাহার লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের ডোবায়। শুধু প্রতিশোধ নয়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোসহ নানা সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে খুনিদের টার্গেট হচ্ছে মুনতাহার মতো শিশুরা। এমনকি ধর্ষণের সাক্ষী গায়েব এবং অপরাধ আড়াল করতেও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। গত ৯ মাসে দেশে ৪৫৪টি শিশু হত্যা এবং ৫২১টি শিশু চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদক সেবন, নৈতিক অবক্ষয়, পরকীয়া, সাইবার দুনিয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তি ও পারিবারিক বিশৃঙ্খল জীবনে শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিবারে শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলছে। বড়দের ব্যক্তিস্বার্থ ও খামখেয়ালির কারণে নিষ্পাপ শিশুকে জীবন দিতে হচ্ছে প্রায়ই। বড়দের লোভ-দ্বন্দ্বের কাছে হেরে যায় কোমলমতি শিশুর স্বস্তির পৃথিবী। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো, প্রতিশোধ কিংবা অপরাধ আড়াল করতে কখনো মা-বাবাসহ আপনজন হয়ে উঠছেন শিশুদের ঘাতক।

চলতি বছরের শুরুতে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী-সানকিপুরের আট বছরের মরিয়ম খুন হয়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ সন্তানকে খুন করেন মা রিনা বেগম। এই পৈশাচিক হত্যাকা-ে তার সহযোগী ছিলেন নিহতের চাচা সেন্টু মৃধা। মা রিনা আদালতে স্বীকার করেন, প্রতিপক্ষ ও তার চাচা শ্বশুর রাজ্জাক মৃধাকে ফাঁসাতে নিজের সন্তানকে হত্যা করেন।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান আমাদের সময়কে বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলছে। নৈতিকতার জায়গাও দুর্বল হয়েছে। পরিবারের একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বের বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। ফলে শিশু খুনের মতো ঘটনা ঘটছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৪৫৪টি শিশু খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২৪টি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া ৫২১টি শিশুর তথ্য পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯৫টি মেয়ে শিশু এবং ২৯টি ছেলে শিশু। ধর্ষণের পর আলামত গায়েব করতে ১৫ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৈতিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে আপনজনদের হাতে শিশুদের খুনের মতো নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটছে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তা কমেছে। মাদক ও বিয়েবহির্ভূত নানা রকম সম্পর্কে জড়িয়ে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্য যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার, সেই সঙ্গে শাস্তির প্রচারও দরকার। আমরা অপরাধের প্রচার যত বেশি দেখি, শাস্তির প্রচারও যদি ততটা করা হতো, তাহলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করত। এ ধরনের ঘটনার কারণ ও উত্তরণের জন্য গবেষণাও দরকার।

তবে শিশুদের নিয়ে কাজ করা একাধিক বেসরকারি সংগঠন বলছে, শিশুদের ওপর নৃশংসতার তথ্য সংগ্রহ এবং এর প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা অর্থাভাবে ঠিকমতো হচ্ছে না। শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। প্রায় এক যুগ ধরে সংগঠনটি শিশুদের ওপর নৃশংসতার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহসহ বিভিন্ন গবেষণা করে আসছে। ২০২০ সালের পর থেকে তাদের ওয়েবসাইটে শিশুদের ওপর নৃশংসতার হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে তাদের এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, অপরাধীরা সব সময় দুর্বলকে টার্গেট করে। শিশুরা দুর্বল হওয়ায় লোভ ও স্বার্থের জন্য তাদের হত্যা করা হয়। আগে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও প্রতিশোধ নিতে শিশুদের খুন করা হতো বেশি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও আগে বেশি দেখা গেছে। বেশির ভাগ পরিচিতজন ও স্বজনদের দ্বারা এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারিবারিক কলহের জেরে মা-বাবার হাতে সন্তান খুনের ঘটনা বাড়ছে। পারিবারিক অস্থিরতা ও অসততার কারণে শিশু খুনের ঘটনা বাড়ছে।

শিশু হত্যার পাশাপাশি নবজাতক খুনের ঘটনাও বাড়ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ক্যান্টিনের পাশ থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। একদিন বয়সী ছেলে নবজাতকের পরিচয় গতকালও মেলেনি। কারা ফেলে গেছে, সেটাও জানতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈবাহিক জীবনের বাইরে নারী-পুরুষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে সমাজে তা গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এমন বাস্তবতায় পৃথিবীর আলো দেখার আগে কিংবা জন্মের পরপরই অনেক শিশু হত্যার শিকার হয়।

পুলিশ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তা সমাজ ও পরিবার মেনে নেয় না। সামাজিক অবক্ষয় ও সচেতনতার অভাবে অনাকাক্সিক্ষত জীবনের নৃশংস পরিণতি হচ্ছে। জন্মের পর পরই এসব নবজাতকের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে। দেশে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় ডিএনএ ব্যাংক না থাকায় রাস্তায়-নর্দমায় ফেলে দেওয়া নবজাতকদের পিতা-মাতার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেলে যাওয়া নবজাতকের মা-বাবার পরিচয় শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এ ধরনের ঘটনা কমে যেত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের সমাজ ও পরিবার শিশুবান্ধব নয়। স্বজনদের হাতে শিশু নির্যাতন এ দেশে খুবই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। হত্যার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় শিশুহত্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, নৈতিক, মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবের কারণে রাস্তা-নর্দমায় নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা কমছে না। বিশেষ করে পর্নোগ্রাফি, নরনারীর সম্পর্কের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি, দায়িত্বের অবহেলার কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেও।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বড়দের স্বার্থের বলি শিশু

আপডেট টাইম : ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

পাঁচ বছরের ফুটফুটে মুনতাহা। নিষ্পাপ, ফুলের মতো কোমল। কারও সঙ্গে তার কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই। তারপরও বড়দের চরম নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে সিলেটের এই শিশুটিকে। যে হাতে ক খ লেখা শিখিয়েছিল গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মর্জিনা; সেই হাতই মুনতাহাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। মর্জিনাকে গৃহশিক্ষক থেকে বাদ দেওয়ার মতো সামান্য ঘটনার প্রতিশোধের শিকার হয়েছে মুনতাহা। খুনের পাঁচ দিন পর গত রবিবার মুনতাহার লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের ডোবায়। শুধু প্রতিশোধ নয়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোসহ নানা সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে খুনিদের টার্গেট হচ্ছে মুনতাহার মতো শিশুরা। এমনকি ধর্ষণের সাক্ষী গায়েব এবং অপরাধ আড়াল করতেও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। গত ৯ মাসে দেশে ৪৫৪টি শিশু হত্যা এবং ৫২১টি শিশু চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদক সেবন, নৈতিক অবক্ষয়, পরকীয়া, সাইবার দুনিয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তি ও পারিবারিক বিশৃঙ্খল জীবনে শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিবারে শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলছে। বড়দের ব্যক্তিস্বার্থ ও খামখেয়ালির কারণে নিষ্পাপ শিশুকে জীবন দিতে হচ্ছে প্রায়ই। বড়দের লোভ-দ্বন্দ্বের কাছে হেরে যায় কোমলমতি শিশুর স্বস্তির পৃথিবী। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো, প্রতিশোধ কিংবা অপরাধ আড়াল করতে কখনো মা-বাবাসহ আপনজন হয়ে উঠছেন শিশুদের ঘাতক।

চলতি বছরের শুরুতে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী-সানকিপুরের আট বছরের মরিয়ম খুন হয়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ সন্তানকে খুন করেন মা রিনা বেগম। এই পৈশাচিক হত্যাকা-ে তার সহযোগী ছিলেন নিহতের চাচা সেন্টু মৃধা। মা রিনা আদালতে স্বীকার করেন, প্রতিপক্ষ ও তার চাচা শ্বশুর রাজ্জাক মৃধাকে ফাঁসাতে নিজের সন্তানকে হত্যা করেন।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান আমাদের সময়কে বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলছে। নৈতিকতার জায়গাও দুর্বল হয়েছে। পরিবারের একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্বের বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। ফলে শিশু খুনের মতো ঘটনা ঘটছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৪৫৪টি শিশু খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২৪টি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া ৫২১টি শিশুর তথ্য পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯৫টি মেয়ে শিশু এবং ২৯টি ছেলে শিশু। ধর্ষণের পর আলামত গায়েব করতে ১৫ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৈতিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে আপনজনদের হাতে শিশুদের খুনের মতো নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটছে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তা কমেছে। মাদক ও বিয়েবহির্ভূত নানা রকম সম্পর্কে জড়িয়ে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্য যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার, সেই সঙ্গে শাস্তির প্রচারও দরকার। আমরা অপরাধের প্রচার যত বেশি দেখি, শাস্তির প্রচারও যদি ততটা করা হতো, তাহলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করত। এ ধরনের ঘটনার কারণ ও উত্তরণের জন্য গবেষণাও দরকার।

তবে শিশুদের নিয়ে কাজ করা একাধিক বেসরকারি সংগঠন বলছে, শিশুদের ওপর নৃশংসতার তথ্য সংগ্রহ এবং এর প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা অর্থাভাবে ঠিকমতো হচ্ছে না। শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। প্রায় এক যুগ ধরে সংগঠনটি শিশুদের ওপর নৃশংসতার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহসহ বিভিন্ন গবেষণা করে আসছে। ২০২০ সালের পর থেকে তাদের ওয়েবসাইটে শিশুদের ওপর নৃশংসতার হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে তাদের এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, অপরাধীরা সব সময় দুর্বলকে টার্গেট করে। শিশুরা দুর্বল হওয়ায় লোভ ও স্বার্থের জন্য তাদের হত্যা করা হয়। আগে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও প্রতিশোধ নিতে শিশুদের খুন করা হতো বেশি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও আগে বেশি দেখা গেছে। বেশির ভাগ পরিচিতজন ও স্বজনদের দ্বারা এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারিবারিক কলহের জেরে মা-বাবার হাতে সন্তান খুনের ঘটনা বাড়ছে। পারিবারিক অস্থিরতা ও অসততার কারণে শিশু খুনের ঘটনা বাড়ছে।

শিশু হত্যার পাশাপাশি নবজাতক খুনের ঘটনাও বাড়ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ক্যান্টিনের পাশ থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। একদিন বয়সী ছেলে নবজাতকের পরিচয় গতকালও মেলেনি। কারা ফেলে গেছে, সেটাও জানতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈবাহিক জীবনের বাইরে নারী-পুরুষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে সমাজে তা গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এমন বাস্তবতায় পৃথিবীর আলো দেখার আগে কিংবা জন্মের পরপরই অনেক শিশু হত্যার শিকার হয়।

পুলিশ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তা সমাজ ও পরিবার মেনে নেয় না। সামাজিক অবক্ষয় ও সচেতনতার অভাবে অনাকাক্সিক্ষত জীবনের নৃশংস পরিণতি হচ্ছে। জন্মের পর পরই এসব নবজাতকের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে। দেশে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় ডিএনএ ব্যাংক না থাকায় রাস্তায়-নর্দমায় ফেলে দেওয়া নবজাতকদের পিতা-মাতার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেলে যাওয়া নবজাতকের মা-বাবার পরিচয় শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এ ধরনের ঘটনা কমে যেত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের সমাজ ও পরিবার শিশুবান্ধব নয়। স্বজনদের হাতে শিশু নির্যাতন এ দেশে খুবই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। হত্যার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় শিশুহত্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, নৈতিক, মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবের কারণে রাস্তা-নর্দমায় নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা কমছে না। বিশেষ করে পর্নোগ্রাফি, নরনারীর সম্পর্কের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি, দায়িত্বের অবহেলার কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেও।