ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাল শাপলার মোহনীয় রূপে সেজেছে তারাপুরের ফসলের মাঠ

Screenshot

তারাপুর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটির ফসলের মাঠে বর্তমানে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও সামান্য পানি- এর মধ্যেই বিস্তীর্ণ মাঠ সেজে রয়েছে লাল শাপলায়। গ্রামটির ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধুই লাল শাপলার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। তাই তো লাল শাপলার মোহনীয় রূপ তারাপুরের ফসলের মাঠকে দিয়েছে নতুন ভিন্ন এক পরিচিতি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বিগত সময়ে কখনোই গ্রামটির মাঠে এভাবে লাল শাপলা দেখেননি তারা।কুমিল্লা গর থেকে তারাপুর গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে গ্রামটিতে প্রবেশের সময়ই চোখে পড়ল একদল তরুণ এসেছেন লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। লাল শাপলায় সেজে থাকা তারাপুরের ফসলের মাঠটিও মহাসড়ক লাগোয়া।

ওই তরুণদের বেশিরভাগই পাশের বরুড়া উপজেলার। একটু পরেই চোখে পড়লো আরো বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী এসেছেন। তাদের কেউ গ্রামীণ রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কাদা মাড়িয়ে নেমে পড়ছেন মাঠে পানির মধ্যে।
কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। আবার কেউ লাল শাপলা ফুল ছিঁড়েও বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।ওই তরুণদের একজন বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের ছোট লক্ষ্মীপুর গ্রামের হৃদয় রাজ।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিনোদনমূলক ফেসবুক পেজের জন্য ভিডিও করতে এসেছি। সূর্যোদয়ের পর মাঠজুড়ে ফুটে থাকা এই শাপলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যে কারো নজর কাড়ে। লাল শাপলা ফুল সকালের প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। যার কারণে সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোর থেকেই বিভিন্ন মানুষ এখানে আসতে দেখেছি।’লিমন হোসেন নামে আরেক তরুণ বলেন, ‘লাল শাপলার পাশাপাশি এই মাঠে অল্প পরিমাণে সাদা শাপলাও রয়েছে। পানি ও কাদাপানির ওপর অনেকটা থালার মতো বিছিয়ে থাকা গোলাকার বেগুনী পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়ে থাকা লাল শাপলাগুলো নিজের সৌন্দর্য প্রকৃতিতে যেন উজাড় করে দিয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময়ও যে কারোই চোখ পড়ে এই মাঠটির দিকে। লাল শাপলা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই।’

তারাপুরের পাশের গাজীপুর গ্রাম থেকে আসা আরেক তরুণ শাহরিয়ার রিফাত বলেন, ‘আমি প্রায় দিনই সকালে লাল শাপলাগুলো দেখতে আসি। যাওয়ার সময় কয়েকটি ছিঁড়ে নিয়ে যাই বাড়িতে বসেও সৌন্দর্য দেখবো বলে। শাপলা ফুলগুলো ভোরবেলা ফোটে আর দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো বুজে যায়।’

শাহনাজ পারভীন নামে এক তরুণী বলেন, ‘অসংখ্য পাপড়ির বিন্যাসে প্রতিটি শাপলা ফুল যে কারোই মন কেড়ে নেয়। লাল শাপলা ফুলের স্পর্শ নিতে এখানে এসেছি। লাল শাপলার সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ।’

তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব দুলাল দাস বলেন, ‘প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে এই শাপলা জন্মেছে। আমি ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বাস করি। এখনোই ধানের জমিতে এই লাল শাপলা দেখিনি। এ বছর বন্যার কারণে জমিতে ফসল নেই। বন্যার পানি কমার কিছুদিন পরই এই লাল শাপলা জন্মেছে। বর্তমানে ভোর থেকেই বিভিন্ন স্থানের মানুষ এই শাপলা দেখতে আসছেন।’

গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই লাল হাপলা (শাপলা) কেমনে আছে আংগো খেতো জানি না। তবে হাপলাগুলা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কত মানুষ আঁইয়ে ছবি তোলনের লাই। মাইনসে খুশি, আনরাও খুশি।’

লাকসামের বিজরা রহমানিয়া চিরসবুজ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘অতীতে এই এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এভাবে লাল শাপলার হাতছানি দেখা যায়নি। লাল শাপলা গ্রামবাংলার প্রকৃতির জন্য এক অনবদ্য সৌন্দর্যের প্রতীক। তারাপুর গ্রামের পুরো ফসলের মাঠের চারদিকে ফুটে থাকা এসব শাপলার রং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। আমি নিজেও ঘুরে দেখে এসেছি। ভোর বেলায় শাপলা ফুলের পাঁপড়িতে হালকা শিশিরের ছোঁয়া এদের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘বন্যার কারণে এই লাল শাপলা লাকসামের পাশাপাশি মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতেও জন্মেছে। কিছুদিন পরেই এসব জমিতে বোরো আবাদ হবে। এই শাপলার পাতা, কাণ্ড পচে গেলে মাটিতে জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করবে। মূলত লাল শাপলা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়। ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষরা এতে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

লাল শাপলার মোহনীয় রূপে সেজেছে তারাপুরের ফসলের মাঠ

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে
তারাপুর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটির ফসলের মাঠে বর্তমানে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও সামান্য পানি- এর মধ্যেই বিস্তীর্ণ মাঠ সেজে রয়েছে লাল শাপলায়। গ্রামটির ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধুই লাল শাপলার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। তাই তো লাল শাপলার মোহনীয় রূপ তারাপুরের ফসলের মাঠকে দিয়েছে নতুন ভিন্ন এক পরিচিতি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বিগত সময়ে কখনোই গ্রামটির মাঠে এভাবে লাল শাপলা দেখেননি তারা।কুমিল্লা গর থেকে তারাপুর গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে গ্রামটিতে প্রবেশের সময়ই চোখে পড়ল একদল তরুণ এসেছেন লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। লাল শাপলায় সেজে থাকা তারাপুরের ফসলের মাঠটিও মহাসড়ক লাগোয়া।

ওই তরুণদের বেশিরভাগই পাশের বরুড়া উপজেলার। একটু পরেই চোখে পড়লো আরো বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী এসেছেন। তাদের কেউ গ্রামীণ রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। আবার কেউ কাদা মাড়িয়ে নেমে পড়ছেন মাঠে পানির মধ্যে।
কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। আবার কেউ লাল শাপলা ফুল ছিঁড়েও বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।ওই তরুণদের একজন বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের ছোট লক্ষ্মীপুর গ্রামের হৃদয় রাজ।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিনোদনমূলক ফেসবুক পেজের জন্য ভিডিও করতে এসেছি। সূর্যোদয়ের পর মাঠজুড়ে ফুটে থাকা এই শাপলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যে কারো নজর কাড়ে। লাল শাপলা ফুল সকালের প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। যার কারণে সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোর থেকেই বিভিন্ন মানুষ এখানে আসতে দেখেছি।’লিমন হোসেন নামে আরেক তরুণ বলেন, ‘লাল শাপলার পাশাপাশি এই মাঠে অল্প পরিমাণে সাদা শাপলাও রয়েছে। পানি ও কাদাপানির ওপর অনেকটা থালার মতো বিছিয়ে থাকা গোলাকার বেগুনী পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়ে থাকা লাল শাপলাগুলো নিজের সৌন্দর্য প্রকৃতিতে যেন উজাড় করে দিয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময়ও যে কারোই চোখ পড়ে এই মাঠটির দিকে। লাল শাপলা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই।’

তারাপুরের পাশের গাজীপুর গ্রাম থেকে আসা আরেক তরুণ শাহরিয়ার রিফাত বলেন, ‘আমি প্রায় দিনই সকালে লাল শাপলাগুলো দেখতে আসি। যাওয়ার সময় কয়েকটি ছিঁড়ে নিয়ে যাই বাড়িতে বসেও সৌন্দর্য দেখবো বলে। শাপলা ফুলগুলো ভোরবেলা ফোটে আর দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়িগুলো বুজে যায়।’

শাহনাজ পারভীন নামে এক তরুণী বলেন, ‘অসংখ্য পাপড়ির বিন্যাসে প্রতিটি শাপলা ফুল যে কারোই মন কেড়ে নেয়। লাল শাপলা ফুলের স্পর্শ নিতে এখানে এসেছি। লাল শাপলার সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ।’

তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব দুলাল দাস বলেন, ‘প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে এই শাপলা জন্মেছে। আমি ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বাস করি। এখনোই ধানের জমিতে এই লাল শাপলা দেখিনি। এ বছর বন্যার কারণে জমিতে ফসল নেই। বন্যার পানি কমার কিছুদিন পরই এই লাল শাপলা জন্মেছে। বর্তমানে ভোর থেকেই বিভিন্ন স্থানের মানুষ এই শাপলা দেখতে আসছেন।’

গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই লাল হাপলা (শাপলা) কেমনে আছে আংগো খেতো জানি না। তবে হাপলাগুলা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কত মানুষ আঁইয়ে ছবি তোলনের লাই। মাইনসে খুশি, আনরাও খুশি।’

লাকসামের বিজরা রহমানিয়া চিরসবুজ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘অতীতে এই এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এভাবে লাল শাপলার হাতছানি দেখা যায়নি। লাল শাপলা গ্রামবাংলার প্রকৃতির জন্য এক অনবদ্য সৌন্দর্যের প্রতীক। তারাপুর গ্রামের পুরো ফসলের মাঠের চারদিকে ফুটে থাকা এসব শাপলার রং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে। আমি নিজেও ঘুরে দেখে এসেছি। ভোর বেলায় শাপলা ফুলের পাঁপড়িতে হালকা শিশিরের ছোঁয়া এদের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘বন্যার কারণে এই লাল শাপলা লাকসামের পাশাপাশি মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতেও জন্মেছে। কিছুদিন পরেই এসব জমিতে বোরো আবাদ হবে। এই শাপলার পাতা, কাণ্ড পচে গেলে মাটিতে জৈব পদার্থ হিসেবে কাজ করবে। মূলত লাল শাপলা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়। ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষরা এতে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।’