ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র আজ সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলবে।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপি ও তাদের সমমনা আন্দোলনের শরিকদের দ্বিমত আছে। বৈঠকে গেলেও এ মুহূর্তে ঘোষণাপত্র দেওয়া ঠিক হবে না বলে বিএনপি জোট তাদের অবস্থান জানাবে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, প্রথমে বৈঠকে না যাওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের সিদ্ধান্ত ছিল। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। কারণ বৈঠকে না গেলে ড. ইউনূসকে বর্জন করা হয়েছেÑ এমন নেতিবাচক বার্তা যাবে। তাই বৈঠকে গিয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়াপত্র পেয়েছি। তিনি আমাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে একদিনের নোটিশে এটা করা সম্ভব নয়। আমরা (দলে) এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আরও আলোচনা করব। অন্যান্য দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কারণ সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেগুলো আমাদের দেখতে হবে।

দলটির নেতারা জানান, মির্জা ফখরুল ইসলামের এই বক্তব্যে বিএনপির অবস্থান উঠে এসেছে। এই বক্তব্য বৈঠকেও উল্লেখ করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দেওয়া খসড়া ঘোষণাপত্রের বেশ কিছু বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। বিএনপি এ বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করেছে। তা ছাড়া বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দায়সারাভাবে গত ১৫ বছরের গুম, খুন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করছে দলটি। এ ছাড়া বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল বা সংশোধনের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে খসড়া ঘোষণাপত্রে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এর মানে বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল করার লক্ষ্য নিয়েই এই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে সঠিক সময়ে (গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত) আমন্ত্রণ না পাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে বেশকিছু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, একটা বিষয়ে কথা বলতে গেলে জোট, মোর্চা বা সমমনা প্ল্যাটফর্মে আলোচনার বিষয় থাকে। কিন্তু একদিন আগেও আমন্ত্রণ না পাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো সেই আনুষ্ঠানিকতা করতে পারেনি। ফলে ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করলেও জোটের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু তাই নয়, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া কিছু দলের কাছে পাঠানো হয়েছে আবার কিছু দলের কাছে পাঠানো হয়নি। এ নিয়েও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষোভ আছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ঘোষণাপত্রই তো দেখলাম না। আমন্ত্রণ বা কিসের কীÑ তাই তো জানি না।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গত রাতে জানান, ঘোষণাপত্রের খসড়া তাদেরকেও দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ভায়া হয়ে তার কাছে এসেছে। তা ছাড়া তার দল বা গণতন্ত্র মঞ্চও বৈঠকের আমন্ত্রণ পায়নি। ফলে ব্যক্তিগতভাবে কেউ অংশ নিলে নিতে পারে, তবে মঞ্চগতভাবে (গণতন্ত্র মঞ্চ) অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু রাতে জানান, তারাও আমন্ত্রণ পাননি। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র বিষয়ক একটা খসড়া ড্রাফট পেয়েছি এবং আমাদের মতামত জানিয়েছি, এখনও সর্বদলীয় কোনো সভার সময়সূচি ঠিক হয়নি। ঘোষণাপত্রের বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। ঘোষণাপত্র হতে হবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং সে ঘোষণায় গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে।

গত ৩১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। মূলত বিএনপির বিরোধিতার কারণেই ঘোষণাপত্র দেওয়ার ওই কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয় বৈষম্যবিরোধীরা। পরে সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকার এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। এরই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হতে যাচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ বিবৃতি

এদিকে গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই প্রোক্লেমেশন জারি স্রেফ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সাংগঠনিক বিষয় নয়, এর সঙ্গে আমাদের পুরো জনগোষ্ঠীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব নির্ভরশীল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রোক্লেমেশন জারির দাবি জানিয়ে দেশ ও জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের কমিটমেন্ট রক্ষা করেছে।

বিবৃতিতে দুটি সংগঠন আরও উল্লেখ করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে প্রোক্লেমেশন জারির তারিখ ঘোষণা করুন। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও অভিমুখ নির্ধারণ করে, এমন বক্তব্য প্রোক্লেমেশনে রাখতে হবে। পাশাপাশি এই প্রোক্লেমেশন যেন অনাগত সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আসুন মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে আমরা এক হই। বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে টিকে থাকা এবং বিকশিত হতে গেলে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশন জারির প্রশ্নে ঐক্যের প্রয়োজন। এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ, উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, পাকিস্তান আন্দোলন, নব্বইয়ের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ এই জনগোষ্ঠীর সব বীরোচিত সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে, পূর্বতন ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর পরবর্তী বন্দোবস্তের সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতাকে পেরিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী বন্দোবস্ত সফল করতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থানের বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক দাবির মুখে সরকার প্রোক্লেমেশন জারির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাক্ষাৎ করতে যাবে। সেখানে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে অবিলম্বে প্রোক্লেমেশন করার তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কোনো প্রকারের কালক্ষেপণ ও গড়িমসি ছাত্র-জনতা বরদাশত করবে না। সারাদেশের সর্বস্তরের ছাবে। এরই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হতে যাচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র আজ সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট টাইম : ২ ঘন্টা আগে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলবে।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপি ও তাদের সমমনা আন্দোলনের শরিকদের দ্বিমত আছে। বৈঠকে গেলেও এ মুহূর্তে ঘোষণাপত্র দেওয়া ঠিক হবে না বলে বিএনপি জোট তাদের অবস্থান জানাবে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, প্রথমে বৈঠকে না যাওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের সিদ্ধান্ত ছিল। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। কারণ বৈঠকে না গেলে ড. ইউনূসকে বর্জন করা হয়েছেÑ এমন নেতিবাচক বার্তা যাবে। তাই বৈঠকে গিয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়াপত্র পেয়েছি। তিনি আমাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে একদিনের নোটিশে এটা করা সম্ভব নয়। আমরা (দলে) এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আরও আলোচনা করব। অন্যান্য দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। কারণ সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেগুলো আমাদের দেখতে হবে।

দলটির নেতারা জানান, মির্জা ফখরুল ইসলামের এই বক্তব্যে বিএনপির অবস্থান উঠে এসেছে। এই বক্তব্য বৈঠকেও উল্লেখ করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দেওয়া খসড়া ঘোষণাপত্রের বেশ কিছু বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। বিএনপি এ বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করেছে। তা ছাড়া বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দায়সারাভাবে গত ১৫ বছরের গুম, খুন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করছে দলটি। এ ছাড়া বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল বা সংশোধনের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে খসড়া ঘোষণাপত্রে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এর মানে বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল করার লক্ষ্য নিয়েই এই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে সঠিক সময়ে (গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত) আমন্ত্রণ না পাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে বেশকিছু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, একটা বিষয়ে কথা বলতে গেলে জোট, মোর্চা বা সমমনা প্ল্যাটফর্মে আলোচনার বিষয় থাকে। কিন্তু একদিন আগেও আমন্ত্রণ না পাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো সেই আনুষ্ঠানিকতা করতে পারেনি। ফলে ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করলেও জোটের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু তাই নয়, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া কিছু দলের কাছে পাঠানো হয়েছে আবার কিছু দলের কাছে পাঠানো হয়নি। এ নিয়েও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষোভ আছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ঘোষণাপত্রই তো দেখলাম না। আমন্ত্রণ বা কিসের কীÑ তাই তো জানি না।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গত রাতে জানান, ঘোষণাপত্রের খসড়া তাদেরকেও দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ভায়া হয়ে তার কাছে এসেছে। তা ছাড়া তার দল বা গণতন্ত্র মঞ্চও বৈঠকের আমন্ত্রণ পায়নি। ফলে ব্যক্তিগতভাবে কেউ অংশ নিলে নিতে পারে, তবে মঞ্চগতভাবে (গণতন্ত্র মঞ্চ) অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু রাতে জানান, তারাও আমন্ত্রণ পাননি। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র বিষয়ক একটা খসড়া ড্রাফট পেয়েছি এবং আমাদের মতামত জানিয়েছি, এখনও সর্বদলীয় কোনো সভার সময়সূচি ঠিক হয়নি। ঘোষণাপত্রের বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। ঘোষণাপত্র হতে হবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং সে ঘোষণায় গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে।

গত ৩১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। মূলত বিএনপির বিরোধিতার কারণেই ঘোষণাপত্র দেওয়ার ওই কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয় বৈষম্যবিরোধীরা। পরে সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকার এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। এরই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হতে যাচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ বিবৃতি

এদিকে গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই প্রোক্লেমেশন জারি স্রেফ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সাংগঠনিক বিষয় নয়, এর সঙ্গে আমাদের পুরো জনগোষ্ঠীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব নির্ভরশীল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রোক্লেমেশন জারির দাবি জানিয়ে দেশ ও জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের কমিটমেন্ট রক্ষা করেছে।

বিবৃতিতে দুটি সংগঠন আরও উল্লেখ করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে প্রোক্লেমেশন জারির তারিখ ঘোষণা করুন। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও অভিমুখ নির্ধারণ করে, এমন বক্তব্য প্রোক্লেমেশনে রাখতে হবে। পাশাপাশি এই প্রোক্লেমেশন যেন অনাগত সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আসুন মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে আমরা এক হই। বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে টিকে থাকা এবং বিকশিত হতে গেলে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশন জারির প্রশ্নে ঐক্যের প্রয়োজন। এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ, উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, পাকিস্তান আন্দোলন, নব্বইয়ের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ এই জনগোষ্ঠীর সব বীরোচিত সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে, পূর্বতন ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর পরবর্তী বন্দোবস্তের সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতাকে পেরিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তী বন্দোবস্ত সফল করতে হবে।

গণ-অভ্যুত্থানের বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক দাবির মুখে সরকার প্রোক্লেমেশন জারির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাক্ষাৎ করতে যাবে। সেখানে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে অবিলম্বে প্রোক্লেমেশন করার তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কোনো প্রকারের কালক্ষেপণ ও গড়িমসি ছাত্র-জনতা বরদাশত করবে না। সারাদেশের সর্বস্তরের ছাবে। এরই অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হতে যাচ্ছে।