দেশের ধান বিজ্ঞানীদের সাফল্যের ডানায় এবার যুক্ত হচ্ছে আরো একটি নতুন জাত-বিইউ সুগন্ধি হাইব্রিড ধান-১।
গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. এ. খালেক মিয়া ও অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী নিরলস গবেষণায় সম্ভাবনাময় এই ধানের জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন।
উদ্ভাবিত এই জাতটি একাধারে দুটি বিশেষ গুণের অধিকারী। বিইউ সুগন্ধি হাইব্রিড ধান-১ প্রথমত: বিশেষত্ব হলো এটি মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট (গৌণপুষ্টি উপাদান) আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ। দ্বিতীয়ত: এটি সুগন্ধি।
বিইউ সুগন্ধি হাইব্রিড ধান-১ এর উল্লেখযোগ্য আরও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- আমন ও বোরো মৌসুমে চাষ উপযোগি, মৌসুম ভেদে ফলন ৫-৬ টন, আমন মৌসুমে চাষ উপযোগি একমাত্র হাইব্রিড সুগন্ধি ধান।
অধ্যাপক ড. এম. এ. খালেক মিয়া জানান, আয়রন ও জিঙ্কসমৃদ্ধ সুগন্ধি ধানের জাতটি দেশের আমন মৌসুমের একমাত্র হাইব্রিড সুগন্ধি ধান। এ জাত নিজস্ব জার্মপ্লাজম (A, B এবং R লাইন) ব্যবহার করে উদ্ভাবিত। আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধান উৎপাদন করার উদ্দেশ্যেই প্রথম গবেষণা শুরু হয়। পরে পরীক্ষায় দেখা যায়, জাতটির চালে প্রচুর জিঙ্ক ও আয়রন রয়েছে, যা মানবদেহের আয়রন ও জিঙ্কের ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে। জাতটি আমন ও বোরো উভয় মৌসুমে আবাদযোগ্য।
জাতটির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী বলেন, এ জাতের ধানের ফলন আমন মৌসুমে হেক্টর প্রতি পাঁচ টন এবং বোরো মৌসুমে হেক্টর প্রতি ছয় টন। এ জাতের ধানের আমন মৌসুমে জীবনকাল ১০০-১১০ দিন এবং বোরো মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন। এর চাল খুবই চিকন ও লম্বা। প্রতি কেজি চালে ২২ মিলিগ্রাম জিঙ্ক ও ১০ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। জাতটি যেহেতু আগাম, তাই কৃষকরা আমন ধান কাটার পর রবিশস্যের আবাদ করতে পারবেন।
অধিক পরিমাণে এই ধান চাষাবাদে খাদ্য ও পুষ্টি নিরপাত্তা বিধানের পাশাপাশি রপ্তানি করেও লাভবান হওয়ার সুয়োগ রয়েছে জানিয়ে এই গবেষক আরও জানান, সুগন্ধি ধান একটি দানাজাতীয় খাদ্যশস্য। বাংলাদেশে প্রচুর সুগন্ধি ধান উৎপাদিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রচ্যের বাজারে সুগন্ধি চালের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশ থেকে সুগন্ধি চাল রফতানিও হচ্ছে। উচ্চফলন ও যথোপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে আরো অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।