বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শোকসভার আলোচনা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিশ^বিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ।
স্মারকলিপিতে ছাত্রলীগ বলে, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করছিল। একই সময়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহবুবুল হক ভুঁইয়া (তারেক) তার বিভাগের প্রথম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) ক্লাস নিচ্ছিলেন। যা জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধার পরিপন্থী। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার মতো দেশদ্রোহীর বহিষ্কারের দাবি করছি। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ কঠোর আন্দোলনে যাবে শাখা ছাত্রলীগ।’
এদিকে শোক দিবসের আলোচনা সভা উপেক্ষা করে শিক্ষকের ক্লাস নেয়া নিয়ে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘১৫ই আগস্ট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। শাখা ছাত্রলীগের প্রতিবাদের মুখে স্যার বললেন- স্টুডেন্ট এর পরীক্ষা নিচ্ছি। পরে বললেন কালকে পরীক্ষা তাই স্টুডেন্ট এর রিকুয়েস্টে ক্লাস নিচ্ছি।’
তার এই স্ট্যাটাসের কমেন্টে শিক্ষার্থীরা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাইদুর রহমান টিটু নামে এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, ‘যেখানে সারাদেশ শোকে মুহ্যমান সেখানে শোকের দিনে ক্লাস নেন। ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।’
ফয়সাল হাবিব নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘এই বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমরা আসলেই লজ্জিত। জাতির পিতা তুমি আমাদের ক্ষমা করে দিও। তোমর প্রয়াণ দিবসেও একাডেমিক ভবনে ক্লাস চলছে। রাজাকারের বীজ এখনো দেশে বিদ্যমান।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার মাহমুদ ফেসবুকে লেখেন, ‘উনি কী এই সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত? ১৫ আগস্ট কি তিনি জানেন না? ধিক্কার জানাই যারা স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের স্বাধীনতা হরনের চেষ্টা করছে।’
এদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের আগামীকাল বুধবার সেমিস্টার ফাইনাল তাই ক্লাস নেয়ার জন্য শিক্ষককে অনুরোধ করেন এবং তিনি ক্লাস নেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরা কিছু বিষয় না বোঝার কারণে আমার কাছে বুঝতে এসেছিল। তাই তাদের অনুরোধে স্বল্প সময়ের জন্য ক্লাস নিয়েছি।’
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশবাসী যখন শোক দিবসে শোকাহত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার মানুষেরা যখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করছেন এ সময়ে ‘নব্য রাজাকার’ মাহবুবুল হক ভূঁইয়া (তারেক) বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে ক্লাস নেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে অভিযুক্ত তারেকের বহিষ্কার দাবি করছি এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের নিকট তারেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী আশরাফ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি জেনেছি। একজন শিক্ষক শোক দিবসের আলোচনা সভায় অংশ না নিয়ে বিভাগে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ করে ছাত্রলীগ একটি স্মারকলিপি দিয়েছে এবং ওই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।