দীর্ঘদিনের পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে গড়ে তোলা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বহুতল ভবন। ১০তলা এ ভবনে থাকবে ৬-৭তলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়। থাকবে কনফারেন্স হল, সেমিনার রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন ও সাংবাদিক লাউঞ্জ। থাকবে ডরমেটরি। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের জন্য বেশ পরিসরে পৃথক কক্ষ ও সঙ্গে বেলকনি থাকছে বলে জানা গেছে। পুরো কার্যালয়টি করা হবে ওয়াইফাই জোন। ইতিমধ্যে কার্যালয়ের নতুন ভবনের থ্রিডি নকশা অনুমোদন দিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন ভবনের কাজ শুরু হতে পারে। ভবনটির নির্মাণের মূল দায়িত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
গত ২৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নকশা অনুমোদন করেছেন। এটি বর্তমান ঠিকানা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নির্মিত হবে। আশরাফ আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার কথাও জানান। এদিকে গত ৩০ মের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবনটি খালি করার কথা ছিল। কিন্তু অস্থায়ী কার্যালয়ের জন্য সুবিধামতো জায়গা পাওয়া না যাওয়ায় আগামী ৩০ জুলাইর পর ভবনটি খালি করা হবে। নতুন ভবন নির্মাণের দায়িত্বপ্র্রাপ্ত্ব গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১০তলা এ ভবনটি নির্মাণের মূল দায়িত্বে থাকছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। মূল দায়িত্বে আমিই থাকছি। আমরা লেবার নিয়োগ দিয়ে কাজ করাব। সম্ভাব্য ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেট এখনো পুরোপুরি ঠিক করিনি। যেহেতু নিজেরাই করব সেহেতু যখন যা প্রয়োজন হবে তখন তা খরচ করা হবে। দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে দলের ফান্ডের টাকায় ব্যয় বহন করা হবে। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ বা অনুদান গ্রহণ করা হবে না। আওয়ামী লীগের একটি নিজস্ব ভবন করার আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলে আসছিল। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বহুতল ভবন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। নিজস্ব অর্থায়নে ভবন করার জন্য একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ইচ্ছা করলে ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করতে পারবেন। রাজধানীর গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এই ভবনটি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয় আওয়ামী লীগ। বহু পুরনো এবং জীর্ণ হওয়ায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় দলের নেতা-কর্মীদের। বর্তমানে এই কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ ও মহিলা লীগের অফিস। জানা যায়, প্রায় ৮ কাঠার ওপর গড়ে ওঠা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর চারতলা ভবনটি ইতিমধ্যেই ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য আওয়ামী লীগের নামে ছাড়পত্রও দিয়েছে গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়। দলের কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান জানান, অনুমোদনের আগে আওয়ামী লীগকে বকেয়া পানি ও বিদ্যুৎ বিলসহ নিয়মনীতি অনুসরণ করে এক কোটি টাকা দিতে হয়েছে সরকারকে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আসার আগ পর্যন্ত স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ৬৬ বছরের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগকে অফিস বদল করতে হয়েছে বার বার। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে আট থেকে নয়বার। পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর পালাক্রমে নেতৃস্থানীয় নেতাদের বাসায় বসে দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো। কোনো অফিস ছিল না। তবে ১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হতো। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস স্থাপন করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন। এর কিছু দিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছু দিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল।