বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ তারা দেখেছে দিনের পর দিন নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশের দিকে বিষাদময় যাত্রা। এ যাত্রা ক্লান্তিকর, ক্ষুধাময়। তারা শুনেছে সৈনিক ও আততায়ীদের বন্দুকের নলে জড়িয়ে থাকা নৃশংসতার গল্প। যার দরুন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছে রাতের আঁধারে। তাদের এই দুর্দশা দেখে উত্তরে ময়মনসিংহ জেলার কিছু রিকশাওয়ালা, চায়ের দোকানি আর গ্রামবাসী সাহায্যের হাত প্রসারিত করলেন। এগিয়ে এলেন নিঃস্বার্থভাবে। নিজেদের মাঝ থেকেই তারা জড়ো করে ফেললেন দশ হাজার ডলারের তহবিল। যা তারা পৌঁছে দেবেন মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র ও সেবা দানকারী হাসপাতালগুলোতে। এ খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার অনলাইন দ্য স্টার। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের এ সংকট গত কয়েক দশকের মধ্যে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। যাকে খোদ জাতিসংঘ পরিকল্পিত জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাই বাংলাদেশিরা তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনটা বললেন আবদুল্লাহ আল কাফি, যিনি এই ত্রাণসংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে দাঁড়াতে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে এমন অসংখ্য ত্রাণসংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। তবে এ বিপুল পরিমাণ আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ বাড়ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এবং জনবহুল এ দেশটি আশঙ্কা করছে যে, এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের সম্পদের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করবে এবং অর্থনীতিকে নিয়ে যাবে প্রান্তসীমায়। মোহাম্মদ জাকারিয়া নামে জনপ্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। কিন্তু যখন আমি গভীরভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবি, তখন আমি অনিশ্চয়তা বোধ করি। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এটা কি আমার দেশের জন্য ভালো হচ্ছে? উত্তরটা আমি নিজেও জানি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে বলেছেন, যদি আমরা আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খেতে দিতে পারি, তবে ১০ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গাকে কেন পারবো না? তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমরা দিনে একবার ভরপেট খেয়ে বাকিটুকু তাদের (রোহিঙ্গাদের) জন্য বিলিয়ে দেবো। তবে বাস্তবতা হলো- এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশকে চরম আর্থিক মূল্য দিতে হচ্ছে। দেশটি লাখ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় এবং মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এর সাথে প্রতিনিয়ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আরো হাজার হাজার নতুন আশ্রয়প্রার্থী যোগ হচ্ছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনমনে এখন এ নিয়ে নানা শঙ্কা বিরাজ করছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা সহজেই অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে মূল আশঙ্কাটা অর্থনৈতিক। যদি রোহিঙ্গারা চিরতরে থেকে যায় তবে তা কর্মক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ, যে কাজ করতে একজন বাংলাদেশি দশ টাকা চাইবে, একজন রোহিঙ্গা খুব সহজেই পাঁচ টাকায় সেই কাজে রাজি হয়ে যাবে। এর ফলে দেশীয় কর্মক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা বাড়বে বলে মত দেন ওয়াসিম ইফতেখার নামের বিশিষ্ট এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গারা স্বীকৃতভাবে কোনো কাজে যোগ দিতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সাময়িকভাবে যদিও আমরা মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু দিনের পর দিন আমরা তাদেরকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না। তাই একসময় তারা কাজের বাজারে নেমে পড়বে এবং তাতে দেশীয় কর্মখাতে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। আরো অনেক খ্যাতনামা ব্যবসায়ী এ ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেন। এটা এখন সপষ্ট প্রতীয়মান যে, বাংলাদেশের এই মানবিক সহায়তা রোহিঙ্গা সংকটে একটি সাময়িক সমাধানমাত্র। এটা কখনোই চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র চূড়ান্ত সমাধান হবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া। যদি তা না হয়, তবে বাংলাদেশকে একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
সংবাদ শিরোনাম :
দাবানল: লস অ্যাঞ্জেলেসের কয়েকটি এলাকায় লাল সর্তকতা জারি
ছক্কায় আহত হয়ে ব্যাংককে রাজশাহীর মালিকের স্ত্রী, তাই পারিশ্রমিক পাননি ক্রিকেটাররা!
ঐতিহ্যবাহী ভাসমান সবজি চাষ
টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বললেন ইলন মাস্ক
সংস্কারে নতুন বাংলাদেশের চার্টার
৪৫০ টাকারও কমে গ্যালারিতে বসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচ
বলিউড অভিনেতার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন
আ.লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বিকালে
আজ কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানি, নেতৃত্ব দেবেন সারজিস
রোহিঙ্গাদের এ সংকট গত কয়েক দশকের বিষাদময় যাত্রা
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
- 325
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ