বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রোহিঙ্গা সংকটের দ্বিপক্ষীয় সমাধান চায় চীন। বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা এবং যোগাযোগে উৎসাহ যোগাচ্ছে বেইজিং। তবে তারা কোনো ধরনের মধ্যস্থতা করতে চায় না। ঢাকা সফরকারী চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াং পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে এমন বার্তাই দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে সচিবের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূত। তবে বৈঠক শেষে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
অবশ্য পরে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। চীনা দূতকে উদ্ধৃত করে সচিব বলেন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়ে চীনের বন্ধু রাষ্ট্র। চীন চায় রোহিঙ্গা সমস্যাটি দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোপ-আলোচনায় সমাধান হোক। সচিব বলেন, প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদেরও অন্য কোনো সমস্যা নেই। আমাদের উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কেবল ওই একটি বিষয় ছাড়া (সিঙ্গেল ইস্যু)। রাখাইনে নির্যাতনের কারণে মিয়ানমারের নাগরিকরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসেছে। আমরা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তারা রাখাইনে তাদের নিজ নিজ বসতভিটায় ফিরে যাক। তাদের ফেরত পাঠাতে আমরা দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়েছি। মিয়ানমার দূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, তিনি ৬ মাস আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করতে ঢাকায় এসেছিলেন। আমরা আজ তাকে বলেছি, ৬ মাস আগে আপনি যখন এসেছিলেন তখন এখানে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ। ৬ মাসে সেটি এখন ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) পার হয়েছে। এটিই বাস্তবতা। এটি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাকে বলেছি আমরা যত দ্রুত সম্ভব সেই বোঝা লাঘব করতে চাই। আমরা চাই রাখাইনে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এবং তারা ফিরে যাক। সচিব বলেন, চীনের দূত মিয়ানমার হয়ে এসেছেন। তিনি ঢাকা সফর শেষে আবারো (কোনো এক সময়) মিয়ানমার যাবেন। তিনি হয়তো আমরা যা বলেছি তার ভিত্তিতে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলবেন। সচিবের কাছে প্রশ্ন ছিল- তাহলে কি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় মেডিয়েটর বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে? জবাবে সচিব বলেন, না তারা মধ্যস্থতা করছে না। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তাদেরও উদ্বেগ রয়েছে। তারা চায় দ্বিপক্ষীয়ভাবে এটি সমাধান হোক। আর এ জন্য তারা উভয়কে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। পরে একান্ত আলাপেও সচিব বলেন, চীন পুরো বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন। তারা চায় তাদের দুই বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসুক। সচিবের কাছে জিজ্ঞাসা ছিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চীন যাতে বাংলাদেশের পক্ষে থাকে আজকের আলোচনায় সেই অনুরোধ তিনি করেছেন কি-না? সচিব বলেন, যেখানে যা দরকার সেটি আলোচনা হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে। মিয়ানমার সফরে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আলোচনার ফল কি জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা সব সময় আশাবাদী। আশা করি, ভালো কিছু হবে। চীনের দূতের সঙ্গে রোহিঙ্গা ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে কথা হয়েছে কি-না? বিশেষ করে রাজনীতি নিয়ে। সচিব অবশ্য দাবি করেছেন এ ইস্যুর বাইরে অন্য কোনো ইস্যুতে আলোচনা হয়নি। উল্লেখ্য, তাৎপর্যপূর্ণ এক সফরে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা আসেন চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াং। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূতের ঢাকা সফরের ঘোষণা আসে।