ঢাকা , সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেশা বদলে যাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষের

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পেশা বদলে যাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষের।কৃষক পরিবার হয়ে যাচ্ছে জেলে পরিবার। শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে।

পেশা বদলের এই চিত্র এখন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদী সংশ্লিষ্ট  চরাঞ্চল ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে। এজন্য প্রতিবছর যমুনার অব্যহত ভাঙ্গন আর বন্যাকে দায়ি করছেন এখানকার বাসিন্দারা।

সারিয়াকান্দির যমুনার পাড় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মাস তিনেক আগেও যাদের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ হতো, এখন তারা গৃহ ও জমি সবই হারা। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে নদীতে মাছ শিকারকেই পেশায় পরিনত করেছেন। প্রতি বছরই  নদী ভাঙ্গনে এমন মানুষ যেমন গৃহ ও আবাদি জমি হারানো সহায় সম্বলহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এছাড়াও বন্যার সময় সারিয়াকান্দির অধিকাংশ এলাকাই পানিতে ডুবে যায়। ফলে পানির প্রচন্ড স্রোতের সঙ্গে বালু আসায় দুই তিন ফুট পরিমান বালুর স্তর পরে আবাদি জমিও পরিনত হয় অনাবাদি  জমিতে। উপায় খুঁজে না পেয়ে ওই সব কৃষক পরিবারের উপার্জনক্ষমদের চলে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন পেশায়। তার মধ্যে যমুনা পারের মানুষদের অনেকেই মাছ ধরাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই পেশা ধারণ করেও তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

কাজলা ইউনিয়নের চরঘাগুয়া গ্রামের আনিছ মোল্লা  বলেন, ‘আমাদের যা কিছু ছিল তা যমুনা নদী কেড়ে নিয়েছে। বউ-বাচ্চাদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে বাপ-দাদার  পেশা কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে বাধ্য হয়ে মাছ ধরাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছি আমরা। মাছ ধরতে ডিঙ্গি নৗকা, জাল দড়ি এইসব জোগাতে  প্রয়োজন হয় কমপক্ষে দু’ লক্ষাধিক টাকা। ধার দেনা ছাড়াও স্থানীয় মহাজনদের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ ধরার কাজে ঝাঁপিয়ে পরেছি। যা আয় করি তা মহাজনদের দিতেই শেষ।’

একই গ্রামের হাসেম আলী বলেন, ‘বন্যা পরবর্তি সময়ে ঘুরে  দাঁড়াতে সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রকারই সহযোগিতা পাচ্ছিনা। এছাড়া নদীর মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা আছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসিদের ভয়, ডুবে থাকা গাছ-গাছালির মোথা, প্রশিক্ষণের আভাব ও বৈরি আবহাওয়া ।’

পেশা পরিবর্তনকারি রহিম উদ্দিন বলেন, ‘গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর নদীতে মা ইঁলিশ ধরা কঠোর ভাবে বন্ধ রাখা হলেও আমরা সরকার থেকে পাইনি কোন রকমের সাহায্য। যার জন্য পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকতা মাহফুজার রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে ২ হাজার ৮১ জনকে জেলে কার্ড দিয়েছি । বাকি আছে ৪০০জন। এছাড়াও  প্রতি বছর এ পেশায় কিছু নতুন লোক জন ঢুকে পড়ছে। তবে জরিপ করে তাদেরকেও জেলে কার্ড দেওয়া হবে এবং তাদের মাছ  ধরার উপর প্রশিক্ষণ  দিয়ে আমরা সবযোগিতা করব। আগামীতে তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে আশা  করছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পেশা বদলে যাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষের

আপডেট টাইম : ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পেশা বদলে যাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষের।কৃষক পরিবার হয়ে যাচ্ছে জেলে পরিবার। শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে।

পেশা বদলের এই চিত্র এখন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদী সংশ্লিষ্ট  চরাঞ্চল ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে। এজন্য প্রতিবছর যমুনার অব্যহত ভাঙ্গন আর বন্যাকে দায়ি করছেন এখানকার বাসিন্দারা।

সারিয়াকান্দির যমুনার পাড় সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মাস তিনেক আগেও যাদের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ হতো, এখন তারা গৃহ ও জমি সবই হারা। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে নদীতে মাছ শিকারকেই পেশায় পরিনত করেছেন। প্রতি বছরই  নদী ভাঙ্গনে এমন মানুষ যেমন গৃহ ও আবাদি জমি হারানো সহায় সম্বলহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এছাড়াও বন্যার সময় সারিয়াকান্দির অধিকাংশ এলাকাই পানিতে ডুবে যায়। ফলে পানির প্রচন্ড স্রোতের সঙ্গে বালু আসায় দুই তিন ফুট পরিমান বালুর স্তর পরে আবাদি জমিও পরিনত হয় অনাবাদি  জমিতে। উপায় খুঁজে না পেয়ে ওই সব কৃষক পরিবারের উপার্জনক্ষমদের চলে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন পেশায়। তার মধ্যে যমুনা পারের মানুষদের অনেকেই মাছ ধরাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই পেশা ধারণ করেও তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

কাজলা ইউনিয়নের চরঘাগুয়া গ্রামের আনিছ মোল্লা  বলেন, ‘আমাদের যা কিছু ছিল তা যমুনা নদী কেড়ে নিয়েছে। বউ-বাচ্চাদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে বাপ-দাদার  পেশা কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে বাধ্য হয়ে মাছ ধরাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছি আমরা। মাছ ধরতে ডিঙ্গি নৗকা, জাল দড়ি এইসব জোগাতে  প্রয়োজন হয় কমপক্ষে দু’ লক্ষাধিক টাকা। ধার দেনা ছাড়াও স্থানীয় মহাজনদের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ ধরার কাজে ঝাঁপিয়ে পরেছি। যা আয় করি তা মহাজনদের দিতেই শেষ।’

একই গ্রামের হাসেম আলী বলেন, ‘বন্যা পরবর্তি সময়ে ঘুরে  দাঁড়াতে সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রকারই সহযোগিতা পাচ্ছিনা। এছাড়া নদীর মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা আছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসিদের ভয়, ডুবে থাকা গাছ-গাছালির মোথা, প্রশিক্ষণের আভাব ও বৈরি আবহাওয়া ।’

পেশা পরিবর্তনকারি রহিম উদ্দিন বলেন, ‘গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর নদীতে মা ইঁলিশ ধরা কঠোর ভাবে বন্ধ রাখা হলেও আমরা সরকার থেকে পাইনি কোন রকমের সাহায্য। যার জন্য পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকতা মাহফুজার রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে ২ হাজার ৮১ জনকে জেলে কার্ড দিয়েছি । বাকি আছে ৪০০জন। এছাড়াও  প্রতি বছর এ পেশায় কিছু নতুন লোক জন ঢুকে পড়ছে। তবে জরিপ করে তাদেরকেও জেলে কার্ড দেওয়া হবে এবং তাদের মাছ  ধরার উপর প্রশিক্ষণ  দিয়ে আমরা সবযোগিতা করব। আগামীতে তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে আশা  করছি।