ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাজমহলের পেছনে লেগেছে বিজেপি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ যে দেশের রাজনীতি বিষিয়ে উঠেছে, যেখানে কার্যত সবকিছুতেই সাম্প্রদায়িকতার রং লাগছে, সেখানে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত সৌধকেও যে লক্ষ্যবস্তু করা হবে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এতে ব্যাপারটা কম দুঃখজনক বা ধ্বংসাত্মক হয়ে যায় না।

তাজমহল ভারতের সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্য বিস্ময়ের একটি। আজ থেকে প্রায় চার শতক আগে মোগল সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে এটি নির্মাণ করেছিলেন। ভারতের একমাত্র নোবেল বিজয়ী লেখক রবীন্দ্রনাথও এই মার্বেল পাথরের প্রশংসা করেছিলেন, তাঁর কথায় এটি সময়ের গণ্ডে অশ্রুবিন্দুর মতো। কিন্তু এবার তাজমহলের জন্যই অশ্রু বিসর্জনের সময় এসেছে। এর শুভ্র দীপ্তি যেন হলদে বর্ণ ধারণ করছে, পার্শ্ববর্তী কারখানা ও কুটিরশিল্পের দূষণের কারণে এমনটা হচ্ছে। সৌধের এত ঘন ঘন সংস্কার করতে হচ্ছে যে ওখানে যেন ভারা-বাঁধাই থাকছে, ফলে মানুষ এর মিনার দেখতে পায় না। উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরের যে স্থানে তাজমহল অবস্থিত, সেটি খুব জনবহুল ও নোংরা।

এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে ওখানে মানুষের যাওয়া কমে গেছে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাজমহলে দর্শনার্থী যাওয়ার সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। একই সঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের পরিমাণও কমে গেছে। যারা এখনো আসে তারা তাজমহল দেখে হতাশ হয়, তবে কখনো কখনো তারা আশপাশের কাণ্ডকারখানা দেখে ধাক্কা খায়। গত গ্রীষ্মে মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় কেভিন ডুরান্ট তাজমহলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিবরণ দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। কিন্তু এখন ভারত সরকার নিজেই তাজমহলকে অস্বীকার করছে। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে যতটা কম করা যায় ঠিক ততটাই করবেন। এর কারণটা আর কিছু নয়, ধর্মীয় জাত্যভিমান।

উত্তর প্রদেশের গেরুয়া বসনধারী হিন্দু সন্ন্যাসী নেতা যোগী আদিত্যনাথ তাজমহলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে, কারণটা হলো, আগের রাজ্য সরকার বিদেশি অতিথিদের তাজমহলের রেপ্লিকা দিত। এটা ‘ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতিফলন’ করে না বলে আদিত্যনাথ ঘোষণা দেন, রাজ্য সরকার এখন থেকে উপহার হিসেবে ভগবত গীতা দেবে। এখানেই শেষ নয়, উত্তর প্রদেশ সরকারের পর্যটন বিভাগ রাজ্যের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের যে তালিকা করেছে তাতে রাজ্যের প্রধান আকর্ষণ তাজমহলের নাম নেই। সরকার হিন্দুধর্মীয় স্থানে পর্যটক আকর্ষণ করতে চায় বলে চলতি অর্থবছরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ভাগ তাজমহলকে দেয়নি। বাইরের মানুষের কাছে তাজমহলের বিরুদ্ধে বিজেপির এই প্রচারণা অদ্ভুত লাগতে পারে। যে সৌধ দেশের জন্য অর্থ নিয়ে আসছে, সেটা অন্যরা কেন বর্জন করবে বা সরকারই বা কেন এটা করবে ? তবে বিজেপিকে যাঁরা জানেন তাঁরা বোঝেন, এটা মুসলিম ভারতের ওপর দলটির আক্রমণের আরেকটি দৃষ্টান্ত।

বিজেপির একদম খাঁটি বিশ্বাসীদের কাছে শত শত বছর ধরে ভারত শাসনকারী মুসলিম সম্রাটেরা বিদেশি দখলদার, যারা তাদের সমৃদ্ধ ভূমিকে নষ্ট করেছে, মন্দির ও প্রাসাদ ধ্বংস করেছে এবং হিন্দুদের দাস বানিয়ে তাদের সঙ্গে বৈষম্য করেছে। তারা হিন্দু নারীদের নিগৃহীত করে লাখ লাখ মানুষকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছে। এই ভাষ্যে ১৯৪৭ সালের ভারতভাগের সময় হিন্দুদের ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ হয়, যার ফলে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়।

এটা এক জটিল ইতিহাসের সরল ব্যাখ্যা, যেখানে ধর্মীয় সংঘাতের তুলনায় সংমিশ্রণ ও সহাবস্থানই বেশি দেখা গেছে। কিন্তু হিন্দু জাত্যভিমানীদের কাছে সেটা ব্যাপার নয়, যারা বিজেপির ভোট বাক্সের বড় অংশ। কট্টরপন্থী হিন্দু জাত্যভিমানী এ বিজেপির আইনপ্রণেতা সংগীত সোমের কথার সঙ্গে এরা একমত। তিনি বলেছেন, তাজমহল ‘ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক’; এটা ‘বিশ্বাসঘাতকদের হাতে তৈরি’, ‘ভারতীয় ইতিহাসে যার স্থান নেই’। তিনি আরও বলেছেন, বলা হয় শাহজাহান ভারত থেকে সব হিন্দুকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন, আর সেই তিনি যদি ভারতীয় ইতিহাসের অংশ হন, তাহলে আমরা ‘এই ইতিহাস বদলে দেব’।

ভারতের হিন্দু চরমপন্থীরা অনেক দিন ধরে এটাকে অপমানজনক মনে করে আসছে যে হিন্দু সংখ্যাগুরু ভারতে একজন মুসলমান শাসক নির্মিত সৌধ সবচেয়ে পরিচিত স্থান হবে। পার্থক্য হচ্ছে এরা এখন আর প্রান্তিক গোষ্ঠী নয়, এর সদস্যরা এখন উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় আছে, যার চালিকাশক্তি হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা এখন দিল্লির সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

শশী থারুর

 

 

 

 

 

 

 

২০০৭ সালে ব্যাপক মুসলিমবিরোধী বক্তৃতার জন্য আদিত্যনাথ প্রথম মানুষের নজরে আসেন। ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে তখন তাঁকে ১১ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছিল। তাঁর অধীনে একটি দল ছিল, যারা মুসলিম লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় সিদ্ধহস্ত ছিল। তিনি ভারতের সবচেয়ে আদৃত ও মুসলিম চলচ্চিত্র তারকাকে সন্ত্রাসী বলে কুখ্যাত হয়েছিলেন। আরও সম্প্রতি তিনি জাতীয় সরকারকে মুসলমানদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক যেটা করতে চেয়েছিলেন। তাজমহলের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘ভারতীয় শ্রমিক ও কৃষকদের ঘাম ও শ্রমে এটি নির্মিত হয়েছিল।’ এতে তাজমহল সম্পর্কে আরেকটি ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয়, মৃত জাত্যভিমানী ইতিহাসবিদ পি এন ওক দাবি করেন, এই সৌধের জায়গায় মূলত একটি শিবমন্দির ছিল, যার নাম ছিল ‘তেজো মহালয়া’। কিছু বিপথগামী হিন্দুত্ববাদীকে ইতিমধ্যে সেখানে শিবপূজা করতে দেখা গেছে। হিন্দুত্ববাদীদের মূল সংগঠন আরএসএস তাজমহলে মুসলমানদের নামাজ আদায় নিষিদ্ধের দাবি করেছে।

স্বাধীনতার পর সাত দশক ভারত পরিচিতি সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু হিন্দু জাত্যভিমানী বিজেপি ভারতকে হিন্দু জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, যারা দীর্ঘদিন বিদেশি শাসনে ছিল। শুধু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাতেই নয়, তারা মুসলমানদের জন্যও পরাধীন ছিল। বহু আগের চাপা পড়া ধিকিধিকি আগুনে হাওয়া দিয়ে বিজেপি ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। এতে যেমন তার রাজনৈতিক অবস্থান বিভক্ত হয়ে পড়ছে, তেমনি তার কূটনৈতিক ক্ষমতা খাটো হচ্ছে।

বিজেপি যদি ভারতীয় সমাজের অধিকতর ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে চায় তাহলে তাকে স্বীকার করতে হবে, অতীত রাজনৈতিক পয়েন্ট লাভের ভোঁতা অস্ত্র নয়। কেউ ইতিহাসের ওপর নিজের প্রতিশোধ নিতে পারে না, ইতিহাসের নিজস্ব প্রতিশোধ আছে।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন।

শশী থারুর: ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

তাজমহলের পেছনে লেগেছে বিজেপি

আপডেট টাইম : ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ যে দেশের রাজনীতি বিষিয়ে উঠেছে, যেখানে কার্যত সবকিছুতেই সাম্প্রদায়িকতার রং লাগছে, সেখানে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত সৌধকেও যে লক্ষ্যবস্তু করা হবে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এতে ব্যাপারটা কম দুঃখজনক বা ধ্বংসাত্মক হয়ে যায় না।

তাজমহল ভারতের সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্য বিস্ময়ের একটি। আজ থেকে প্রায় চার শতক আগে মোগল সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে এটি নির্মাণ করেছিলেন। ভারতের একমাত্র নোবেল বিজয়ী লেখক রবীন্দ্রনাথও এই মার্বেল পাথরের প্রশংসা করেছিলেন, তাঁর কথায় এটি সময়ের গণ্ডে অশ্রুবিন্দুর মতো। কিন্তু এবার তাজমহলের জন্যই অশ্রু বিসর্জনের সময় এসেছে। এর শুভ্র দীপ্তি যেন হলদে বর্ণ ধারণ করছে, পার্শ্ববর্তী কারখানা ও কুটিরশিল্পের দূষণের কারণে এমনটা হচ্ছে। সৌধের এত ঘন ঘন সংস্কার করতে হচ্ছে যে ওখানে যেন ভারা-বাঁধাই থাকছে, ফলে মানুষ এর মিনার দেখতে পায় না। উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরের যে স্থানে তাজমহল অবস্থিত, সেটি খুব জনবহুল ও নোংরা।

এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে ওখানে মানুষের যাওয়া কমে গেছে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাজমহলে দর্শনার্থী যাওয়ার সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। একই সঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের পরিমাণও কমে গেছে। যারা এখনো আসে তারা তাজমহল দেখে হতাশ হয়, তবে কখনো কখনো তারা আশপাশের কাণ্ডকারখানা দেখে ধাক্কা খায়। গত গ্রীষ্মে মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় কেভিন ডুরান্ট তাজমহলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিবরণ দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। কিন্তু এখন ভারত সরকার নিজেই তাজমহলকে অস্বীকার করছে। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে যতটা কম করা যায় ঠিক ততটাই করবেন। এর কারণটা আর কিছু নয়, ধর্মীয় জাত্যভিমান।

উত্তর প্রদেশের গেরুয়া বসনধারী হিন্দু সন্ন্যাসী নেতা যোগী আদিত্যনাথ তাজমহলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে, কারণটা হলো, আগের রাজ্য সরকার বিদেশি অতিথিদের তাজমহলের রেপ্লিকা দিত। এটা ‘ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতিফলন’ করে না বলে আদিত্যনাথ ঘোষণা দেন, রাজ্য সরকার এখন থেকে উপহার হিসেবে ভগবত গীতা দেবে। এখানেই শেষ নয়, উত্তর প্রদেশ সরকারের পর্যটন বিভাগ রাজ্যের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের যে তালিকা করেছে তাতে রাজ্যের প্রধান আকর্ষণ তাজমহলের নাম নেই। সরকার হিন্দুধর্মীয় স্থানে পর্যটক আকর্ষণ করতে চায় বলে চলতি অর্থবছরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ভাগ তাজমহলকে দেয়নি। বাইরের মানুষের কাছে তাজমহলের বিরুদ্ধে বিজেপির এই প্রচারণা অদ্ভুত লাগতে পারে। যে সৌধ দেশের জন্য অর্থ নিয়ে আসছে, সেটা অন্যরা কেন বর্জন করবে বা সরকারই বা কেন এটা করবে ? তবে বিজেপিকে যাঁরা জানেন তাঁরা বোঝেন, এটা মুসলিম ভারতের ওপর দলটির আক্রমণের আরেকটি দৃষ্টান্ত।

বিজেপির একদম খাঁটি বিশ্বাসীদের কাছে শত শত বছর ধরে ভারত শাসনকারী মুসলিম সম্রাটেরা বিদেশি দখলদার, যারা তাদের সমৃদ্ধ ভূমিকে নষ্ট করেছে, মন্দির ও প্রাসাদ ধ্বংস করেছে এবং হিন্দুদের দাস বানিয়ে তাদের সঙ্গে বৈষম্য করেছে। তারা হিন্দু নারীদের নিগৃহীত করে লাখ লাখ মানুষকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছে। এই ভাষ্যে ১৯৪৭ সালের ভারতভাগের সময় হিন্দুদের ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ হয়, যার ফলে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়।

এটা এক জটিল ইতিহাসের সরল ব্যাখ্যা, যেখানে ধর্মীয় সংঘাতের তুলনায় সংমিশ্রণ ও সহাবস্থানই বেশি দেখা গেছে। কিন্তু হিন্দু জাত্যভিমানীদের কাছে সেটা ব্যাপার নয়, যারা বিজেপির ভোট বাক্সের বড় অংশ। কট্টরপন্থী হিন্দু জাত্যভিমানী এ বিজেপির আইনপ্রণেতা সংগীত সোমের কথার সঙ্গে এরা একমত। তিনি বলেছেন, তাজমহল ‘ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক’; এটা ‘বিশ্বাসঘাতকদের হাতে তৈরি’, ‘ভারতীয় ইতিহাসে যার স্থান নেই’। তিনি আরও বলেছেন, বলা হয় শাহজাহান ভারত থেকে সব হিন্দুকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন, আর সেই তিনি যদি ভারতীয় ইতিহাসের অংশ হন, তাহলে আমরা ‘এই ইতিহাস বদলে দেব’।

ভারতের হিন্দু চরমপন্থীরা অনেক দিন ধরে এটাকে অপমানজনক মনে করে আসছে যে হিন্দু সংখ্যাগুরু ভারতে একজন মুসলমান শাসক নির্মিত সৌধ সবচেয়ে পরিচিত স্থান হবে। পার্থক্য হচ্ছে এরা এখন আর প্রান্তিক গোষ্ঠী নয়, এর সদস্যরা এখন উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় আছে, যার চালিকাশক্তি হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা এখন দিল্লির সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

শশী থারুর

 

 

 

 

 

 

 

২০০৭ সালে ব্যাপক মুসলিমবিরোধী বক্তৃতার জন্য আদিত্যনাথ প্রথম মানুষের নজরে আসেন। ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগে তখন তাঁকে ১১ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছিল। তাঁর অধীনে একটি দল ছিল, যারা মুসলিম লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় সিদ্ধহস্ত ছিল। তিনি ভারতের সবচেয়ে আদৃত ও মুসলিম চলচ্চিত্র তারকাকে সন্ত্রাসী বলে কুখ্যাত হয়েছিলেন। আরও সম্প্রতি তিনি জাতীয় সরকারকে মুসলমানদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক যেটা করতে চেয়েছিলেন। তাজমহলের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘ভারতীয় শ্রমিক ও কৃষকদের ঘাম ও শ্রমে এটি নির্মিত হয়েছিল।’ এতে তাজমহল সম্পর্কে আরেকটি ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয়, মৃত জাত্যভিমানী ইতিহাসবিদ পি এন ওক দাবি করেন, এই সৌধের জায়গায় মূলত একটি শিবমন্দির ছিল, যার নাম ছিল ‘তেজো মহালয়া’। কিছু বিপথগামী হিন্দুত্ববাদীকে ইতিমধ্যে সেখানে শিবপূজা করতে দেখা গেছে। হিন্দুত্ববাদীদের মূল সংগঠন আরএসএস তাজমহলে মুসলমানদের নামাজ আদায় নিষিদ্ধের দাবি করেছে।

স্বাধীনতার পর সাত দশক ভারত পরিচিতি সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু হিন্দু জাত্যভিমানী বিজেপি ভারতকে হিন্দু জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, যারা দীর্ঘদিন বিদেশি শাসনে ছিল। শুধু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাতেই নয়, তারা মুসলমানদের জন্যও পরাধীন ছিল। বহু আগের চাপা পড়া ধিকিধিকি আগুনে হাওয়া দিয়ে বিজেপি ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। এতে যেমন তার রাজনৈতিক অবস্থান বিভক্ত হয়ে পড়ছে, তেমনি তার কূটনৈতিক ক্ষমতা খাটো হচ্ছে।

বিজেপি যদি ভারতীয় সমাজের অধিকতর ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে চায় তাহলে তাকে স্বীকার করতে হবে, অতীত রাজনৈতিক পয়েন্ট লাভের ভোঁতা অস্ত্র নয়। কেউ ইতিহাসের ওপর নিজের প্রতিশোধ নিতে পারে না, ইতিহাসের নিজস্ব প্রতিশোধ আছে।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন।

শশী থারুর: ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।