বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হত্যাচেষ্টার হামলার ঘটনাগুলো এক ও অভিন্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাতক চত্র সফল হলেও দেশের কোটি-কোটি মানুষের ভালোবাসায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে উচ্চকণ্ঠ জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবাল শঙ্কামুক্ত অবস্থায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। প্রতিরোধে ফেটে পড়ছে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীসহ দেশের জনগণ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শক্রমে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তিঁনি সার্বক্ষনিক খোজ-খবরও নিচ্ছেন।
কিন্তু এই হামলাগুলো হচ্ছে কেন? কেনই-বা এই ধরনের হামলা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না? কারা এই হামলার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করছে-এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আগে প্রয়োজন।
আসুন একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকাই- ঘটনাটি ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির। বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে টিএসসির দিকে এগিয়ে আসতে সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ূন আজাদ। কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছর অগস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২ অগস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
রাষ্ট্র হুমায়ূন আজাদ হত্যাকান্ড ঘটনা গুরুত্বের সহিত নিতে ব্যর্থ হয়নি বরং আমি বলব, অবহেলা করেছে অথবা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। যে অবহেলা বা গুরুত্বহীনতার কারণে এই ধরনের হত্যার অপসংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। আর শিকার হয়েছে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়। সেও ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফুটপাতে সন্ত্রাসীদের চাপাতির কোপে রক্তাত্ব হয়। সাথে থাকা তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদের মাথায় এবং ঘাড়ে চারটি ৬-৭ ইঞ্চি চাপাতির আঘাত এবং বা হাতের বৃদ্ধাঙুল খসে পড়ে উন্মুক্ত ফুটপাতে। রাত পৌনে নয়টার ঘটনার পরে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়।
দীর্ঘ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচারের মুখোমুখি হয়নি বিজ্ঞানমনস্কতা-ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পক্ষে লেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ূন আজাদের খুনীরা। এটি রাষ্ট্রের জন্য সত্যিই লজ্জার, হতাশার। একটি রাষ্ট্রের অনেকগুলো শক্তিশালী দফতর থাকলেও আজও হুমাযূন আজাদের খুনীদের ধরতে পারেনি। আবার ধরলেও শক্ত হাতের অভাবে পালিয়ে যায় খুনী চক্রের সদস্য! এই যে রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত থেকে ২০১৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি খুনী চক্রের সদস্য মিনহাজ ও সালেহীনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল তাদের অনুসারীরা, তার জবাব কী রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তাব্যক্তিরা দিয়েছিল? তাঁরা কি এই অবহেলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে বা রাষ্ট্রযন্ত্রের দূর্বল হাতের মেরামত করেছে(?)-এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।
অভিযোগ আছে, যে সরিষায় ভূত তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে; সে সরিষার মধ্যেই ভূতের বসবাস। অর্থাৎ রাষ্ট্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আজ অবাধ বিচরণ করছে। তাদেরকে রাজনৈতিক স্বার্থে, ব্যবসায়িক স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে যে যার মতন করে ব্যবহার করছে। আবার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ পারিবারিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এখনও করছে।
সাম্প্রতিক পাঠ্যপুস্তকে হুয়ামূন আজাদের কবিতা পরিবর্তনের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে অনেক প্রমাণাদি খুজে পাওয়া যাবে। কারা সেখানে সম্পৃক্ত তা খুজে বের করা সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এই কারণেই সহজ-সরলভাবে প্রশ্ন আসে, সরকার কী এ ব্যাপারে আন্তরিক? সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মুল উৎপাটন করতে সরকারের স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি কোনও পরিকল্পনা আছে কীনা আমার ব্যক্তিগতভাবে জানা নেই। আবার দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপও চোখে পড়েনি। বরং একের পর এক সরকারের দায়িত্ববান ব্যক্তিবর্গ কখনও ব্লগার-লেখকদের সীমা লঙ্ঘন না করার হাস্যকর পরামর্শ প্রদান করেছে। আবার কখনও অতীত ইতিহাস বা বিশ্ব ইতিহাস টেনে এই ধরনের হত্যাকান্ডের প্রতি এক ধরনের মৌন সমর্থন দিয়েছে। হত্যাকান্ডগুলোকে অবহেলা করেছে। বিচারের দীর্ঘসুত্রতা তৈরি করেছে।
রাষ্ট্র অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ হত্যাকান্ডকে গুরুত্ব দিলে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশের আরেক সুর্য সন্তান ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে রাজধানীর মিরপুরে একই কায়দায় খুন করে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার সুযোগ পেত না। শুধু তাই নয়, হুমায়ূন আজাদ হত্যাকান্ডের পরের এই ১২ বছরের মধ্যে হত্যার নীল নকশা তৈরি করে হত্যার অপসংস্কৃতি অব্যাহত রাখত না।
২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার খুনের পর থেকে টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল জোয়ার্দার হত্যাকান্ড পর্যন্ত ৩৭টি হামলার মধ্যে ২৫টি জেএমবি, আটটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও চারটি ঘটনা অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠী ঘটিয়েছে। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি), আনসার আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি-বি), হিজবুত তাহ্রীর বাংলাদেশ এবং নতুন আবির্ভূত আল মুজাহিদ সংগঠনগুলো এসব হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। আর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার হামলার ঘটনা এখনও কোনও মহল তার দায় স্বীকার করেনি। এসব হামলা ও হত্যাকান্ডের মধ্যে ৩৪টিরই মূল রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সাবেক পুলিশপ্রধান। এর মধ্যে মাত্র ৬টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
হত্যার মোটিভ ও টার্গেট কিলিং একটু লক্ষ্য করুন- ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর জঙ্গিদের চাপাতি হামলার পর রাজীব হায়দারকে চাপাতির আঘাতে খুন করা হয় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ব্লগে লেখালেখির কারণে এটিই বাংলাদেশে প্রথম কোনও ব্লগার হত্যাকান্ড। মুক্তমনা নামে ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ও একই কায়দায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সস্ত্রীক চাপাতির আঘাতে প্রাণ হারান। তাঁর স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও মারাত্মক আহত হন। অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করে। আবার সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করে ১২ মে। এটিও ঢাকার বাইরে একমাত্র ব্লগার হত্যাকান্ডের ঘটনা। অনন্ত বাসা থেকে বের হয়ে একটি ব্যাংকে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়েছে। সেও মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। আবার ঠিক তার তিন মাসের মাথায় ৭ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর একটি বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয় ব্লগার নিলয়কে। ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সমকামী মানবাধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে ঢাকার কলাবাগানের এক বাসায় কুপিয়ে হত্যা করে। আর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। অন্যদিকে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এখানে হত্যাকান্ডগুলোর মুল উদ্দেশ্য হল- মুক্ত, সহনশীল, স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পরিচয় মুছে দেওয়া। তাই ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ, ধর্মীয় পুরোহিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, ভিন্নমতের ইসলামী ভাবধারার অনুসারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিদেশিদের ওপর একের পর এক এই ধরনের বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছিল। মাঝখানে কিছুটা সময় এই ধরনের হত্যাকান্ড কমিয়ে আনা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের এক বিশাল সাফল্য হলেও লেখক জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার হামলার মাধ্যমে আবারও তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি। এই ধরনের হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত অনেক খুনীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি আবার এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচারকাজ শেষ বা অনেক ক্ষেত্রে শুরুও করতে পারেনি সরকার।
তবে, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজন ব্লগারকে তাঁদের লেখালেখির কারণে হত্যা করা হলেও ওই মামলাগুলোর খুব বেশি অগ্রগতি নেই সরকারের ঝুলিতে। কিন্তু কেন? সরকারের কী আন্তরিকতার অভাব (?), নাকি সরকারের ভিতরে মৌলবাদী সরকারের বাধার কারণে দীর্ঘ ১২ বছর পরেও অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ হত্যাকান্ডের অপরাধীদের দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে? ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কী কারণে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের খুনীদের-এই প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে আসবেই। একটি রাষ্ট্র কতটুকু দূর্বল হলে একটি হত্যাকান্ডের বিচার করতে ১২ বছর সময় নিতে পারে-এটি দুঃশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়!
যার ফলে, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে শনিবার (৩ মার্চ, ২০১৮) বিকালে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফেস্টিভাল চলাকালে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টার হামলার ঘটনা ঘটে। জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ২০১৬ সাল থেকেই সরকারের নির্দেশনায় পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। অথচ পুলিশের সামনেই এই শিক্ষকের মাথা, পিঠ ও হাতে জখম করে জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী ফয়জুল নামের ওই ঘাতক।
এখানে একেবারেই স্পষ্ট, ঘাতক ফয়জুল একা নন। তার নেপথ্যে আরও অনেকে পরিকল্পনা করেছে। ফয়জুলকে মাঠে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। কারণ ফয়জুল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে ঠিক জাফর ইকবালের পিছনেই ঠায় দাঁড়িয়ে সুযোগ বুঝে পুলিশের সামনেই হত্যাচেষ্টা করা; এটি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।
একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী ফয়জুলের কাছে একটি ছোড়া ও একটি সাইকেলের তালার চাবি থাকলেও সাইকেল পাওয়া যায়নি। সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতই জাফর ইকবালের খুব কাছাকাছি ছিল। পুলিশ ও জনতাকে পর্যন্ত ভয় পায়নি। কারণ তাকে ভয় না পাওয়ার প্রশিক্ষণ এবং আগের হত্যাগুলোর বিচারহীনতার ঔদ্ধত্য; জাফর ইকবালের উপর হত্যাচেষ্টার হামলা ঘটনাতে সহায়তা করেছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি হত্যাকান্ড বিচারহীনতার মধ্যে বেড়ে উঠে তা সমাজ-রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। তখন অপসংস্কৃতি সংস্কৃতিতে রূপান্তর হয়। আর বিলম্বিত বিচারলকাজের পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে হত্যার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির মাঝে অনুতাপ-অনুসূচনাবোধহীন ঔদ্ধত্য সৃষ্টি হয়। আর অন্যদিকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত আলামত (গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট) নষ্ট হয়ে পড়ে। যা ওই বিচার কাজকে আরও কঠিন করে তোলে এবং খুনীর পক্ষে অপরাধের দন্ডায়মান হালকা হয়ে ঝুলে। আর এই ধরনের হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারীরা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে।
হুমায়ূন আজাদ হত্যাকান্ড থেকে জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টার হামলাগুলো একই সুত্রে গাথা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সাহসী যোদ্ধাদের কন্ঠরোধ করা। বুদ্ধিচর্চায় সমাজ-রাষ্ট্র ধ্বংস করা। উদীয়মান সুর্য সন্তানদের মনোবল ধ্বংস করে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক অকার্যকর পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করা। কারণ তারা জানে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আজাদ থেকে জাফর ইকবাল বিরল প্রতিভার অধিকারী। তিঁনি তার লেখনীর মাধ্যমে দেশের লাখো-কোটি মানুষের মনে মুক্তবুদ্ধির চর্চার তরঙ্গ বয়ে দিতে পারে। তরুণরা তাঁর ভক্ত। সাধারণ মানুষজন তাঁর অনুসারী। জাফর ইকবালের কথায় দেশের জনগণ অনেক কিছু করতে পারে। তাই জঙ্গিবাদী, রক্ষণশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে তারা নিশ্চিহ্ন হওয়ার ভয় থেকে এবার অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ হুমায়ুন আজাদকে হত্যার পর দীর্ঘ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও তার বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি খুনী ও খুনীচক্রকে।
এই ধরনের হত্যাকান্ড বা হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করার জন্য রাষ্ট্রকে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। হুমায়ূন আজাদসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচারকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে দৃষ্টান্ত শাস্তির বার্তা সমাজ-রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধু মাঠের ব্যক্তি খুনীকে নয়; মুল পরিকল্পনাকারীদেরও খুজে বের করে আইনের কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী বীজ অঙ্কুরেই ধ্বংস করতে না পারলে এই অপসংস্কৃতি থেকে জাতিকে মুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)