ঢাকা , শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ধানের বাজারে মন্দা চলছে। ন্যায্য মূল্য থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। পড়ছেন ব্যাপক লোকসানে।স্থানীয় সূত্র জানায়, এ বছর এক কিয়ার (৩০শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৫শ টাকা। এক বিঘা জমির বিচালির মূল্য ২ হাজার টাকা বাদ দিলে খরচ এসে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫শ টাকা। এক কিয়ার (৩০শতাংশ) জমির গড় ফলন ২০ মণ হলে এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ এসে দাঁড়ায় ৫শ ২৫ টাকা।

অথচ এখন বাজার মূল্য ৬শ ৫০ থেকে ৭ শ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ প্রতি মণ ধান উৎপাদন করে কৃষককে লোকসান দিতে হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৭৫ টাকা লাভ। অথচ সরকার প্রতি মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। সরকার ঘোষিত মূল্য যদি ন্যায্য মূল্য হয় তাহলে প্রতিমণ ধানে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৩শ ৯০টাকা থেকে ৩শ ৪০ টাকা। ধান চালের বাজার মন্দা দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করছে। সরকার ধানের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, তা এক সময়ে কার্যকর হবে বা ওই মূল্য ছাড়িয়ে ১২ শ টাকা মণ দরেও ধান বিক্রি হবে। ততদিনে কৃষকের গোলায় ধান থাকবে না।

লাভের সবটুকু রস লুট করবে ব্যবসায়ীরা। সরকার ধান-চালের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেছে। তবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে মিল মালিক বা ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে ধান চাল কিনে থাকে। আর এ কারণে লোকসানের শিকার হয় কৃষক আর মুনাফা লুটে নেয় মধ্যস্বত্তভোগীরা। এভাবে লোকসান গুনে ধান চাষ করতে করতে এক পর্যায়ে কৃষক দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন হয়তো ধান চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক। সরকার ধান-চালের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তা কৃষকের জন্য  লাভজনক না হলেও এটি সহনশীল মাত্রার মূল্য বলে ধরে নিয়েছে কৃষক। তবে মূল্য ঘোষণার পর থেকে যথাযথ কার্যকর হচ্ছে কিনা তা তদারকি আবশ্যক।

উপজেলার ছয়হারা গ্রামের আলা উদ্দিন জানান,  চলতি বছর তিনি ৬ কিয়ার জমিতে ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩ কিয়ার তার নিজের বাকি ৩ কিয়ার লিজ নেয়া। ধান চাষ করতে গিয়ে গত তিন মাসে সারের দোকানে বাকি হয়েছে ১৫ হাজার টাকা, এসময় সংসার চালাতে দোকানে বাকি পড়েছে ১৩ হাজার টাকা। আবার কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে ধারও করেছেন ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই ৩৩ হাজার টাকা তাকে এখনই পরিশোধ করতে হবে। দেনা পরিশোধ করতে তাকে এখনই অর্ধেক ধান বিক্রি করতে হবে। বাকি অর্ধেক ধান দিয়ে আগামি ৪ মাস কিভাবে সংসার চালাবেন ।

উপজেলার একাধিক কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ধান চালের মূল্য নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা নেই। থাকলে ব্যবসায়ীরা এভাবে কৃষকদের ঠকাতে পারত না। সরকার ধান-চালের বাজার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকার ঘোষিত মূল্যে কৃষক তার ফসলের মূল্য পাচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বাজার মনিটরিং কর্মকর্তাদের। সংশিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ঊদাসীনতার কারণে কৃষকদের যাতাকলে নিস্পেষিত করছে ব্যবসায়ীরা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সুনামগঞ্জে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা

আপডেট টাইম : ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ধানের বাজারে মন্দা চলছে। ন্যায্য মূল্য থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। পড়ছেন ব্যাপক লোকসানে।স্থানীয় সূত্র জানায়, এ বছর এক কিয়ার (৩০শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৫শ টাকা। এক বিঘা জমির বিচালির মূল্য ২ হাজার টাকা বাদ দিলে খরচ এসে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫শ টাকা। এক কিয়ার (৩০শতাংশ) জমির গড় ফলন ২০ মণ হলে এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ এসে দাঁড়ায় ৫শ ২৫ টাকা।

অথচ এখন বাজার মূল্য ৬শ ৫০ থেকে ৭ শ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ প্রতি মণ ধান উৎপাদন করে কৃষককে লোকসান দিতে হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৭৫ টাকা লাভ। অথচ সরকার প্রতি মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। সরকার ঘোষিত মূল্য যদি ন্যায্য মূল্য হয় তাহলে প্রতিমণ ধানে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৩শ ৯০টাকা থেকে ৩শ ৪০ টাকা। ধান চালের বাজার মন্দা দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করছে। সরকার ধানের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, তা এক সময়ে কার্যকর হবে বা ওই মূল্য ছাড়িয়ে ১২ শ টাকা মণ দরেও ধান বিক্রি হবে। ততদিনে কৃষকের গোলায় ধান থাকবে না।

লাভের সবটুকু রস লুট করবে ব্যবসায়ীরা। সরকার ধান-চালের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেছে। তবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে মিল মালিক বা ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে ধান চাল কিনে থাকে। আর এ কারণে লোকসানের শিকার হয় কৃষক আর মুনাফা লুটে নেয় মধ্যস্বত্তভোগীরা। এভাবে লোকসান গুনে ধান চাষ করতে করতে এক পর্যায়ে কৃষক দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন হয়তো ধান চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক। সরকার ধান-চালের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তা কৃষকের জন্য  লাভজনক না হলেও এটি সহনশীল মাত্রার মূল্য বলে ধরে নিয়েছে কৃষক। তবে মূল্য ঘোষণার পর থেকে যথাযথ কার্যকর হচ্ছে কিনা তা তদারকি আবশ্যক।

উপজেলার ছয়হারা গ্রামের আলা উদ্দিন জানান,  চলতি বছর তিনি ৬ কিয়ার জমিতে ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩ কিয়ার তার নিজের বাকি ৩ কিয়ার লিজ নেয়া। ধান চাষ করতে গিয়ে গত তিন মাসে সারের দোকানে বাকি হয়েছে ১৫ হাজার টাকা, এসময় সংসার চালাতে দোকানে বাকি পড়েছে ১৩ হাজার টাকা। আবার কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে ধারও করেছেন ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই ৩৩ হাজার টাকা তাকে এখনই পরিশোধ করতে হবে। দেনা পরিশোধ করতে তাকে এখনই অর্ধেক ধান বিক্রি করতে হবে। বাকি অর্ধেক ধান দিয়ে আগামি ৪ মাস কিভাবে সংসার চালাবেন ।

উপজেলার একাধিক কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ধান চালের মূল্য নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা নেই। থাকলে ব্যবসায়ীরা এভাবে কৃষকদের ঠকাতে পারত না। সরকার ধান-চালের বাজার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকার ঘোষিত মূল্যে কৃষক তার ফসলের মূল্য পাচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বাজার মনিটরিং কর্মকর্তাদের। সংশিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ঊদাসীনতার কারণে কৃষকদের যাতাকলে নিস্পেষিত করছে ব্যবসায়ীরা।