বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ১৪ বছর বয়সী মাজেদার অপরাধ- সে না খেয়ে থাকতে চায়নি। সে কারও মুখাপেক্ষী হয়েও থাকতে চায়নি। তাই তো অসুস্থ বাবার রিকশা নিয়ে সে নেমে পড়েছিল রাস্তায়। সপ্তাহখানেক রিকশা চালিয়ে রোজগারও করেছিল বেশ কিছু টাকা। কিন্তু এতে নাকি সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিদের মানহানি হয়! তাই তো দরিদ্র মেয়েটিকে হুমকি-ধমকি আর গালমন্দের জোরে ঘরে বসিয়ে ছাড়ল তারা।
যারা তার রিকশা চালানো বন্ধ করেছে, তারা কথা দিয়েছিল-সবাই মাজেদার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু রিকশা চালানো বন্ধের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কেউ মাজেদা ও তার পরিবারের আর কোনো খোঁজ নেয়নি। খবর সমকাল’র। মাজেদা আক্তারের বাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হলিদাকান্দা গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকায়। সে ওই গ্রামের সমোজ আলী ও অজুফা দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট দুই বোন বাকপ্রতিবন্ধী। ছোট দুটি ভাইয়ের একজন এখনও মায়ের কোল ছাড়েনি।
অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রিকশা চালাতে পারছেন না বাবা। তাই মাজেদা ঠিক করল, নিজেই রিকশা চালিয়ে ভাত তুলে দেবে ছোট ভাই-বোন আর বাবা-মায়ের মুখে। ধর্মপাশা উপজেলা সদরের পূর্ব বাজার থেকে ধর্মপাশা-জয়শ্রী সড়কের কান্দাপাড়া পর্যন্ত রিকশা চালানো শুরু করে সে। এতে তার দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার হতো। কিন্তু রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন বিপাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাজেদার বাড়িতে কথা হয় তার সঙ্গে। মাজেদা জানায়, নয়ন মিয়া নামে এলাকার এক সাবেক ইউপি সদস্য তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে গালিগালাজ করেছেন। স্থানীয় রিকশাচালক সমিতির সভাপতি আবদুল আলীম তাকে রিকশা চালাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। পথেঘাটে তাকে হেনস্তা করেছে স্থানীয় লোকজন।
‘আব্বার অসুখ দেইখ্যা রিকশা চালাইতাম। যাদের কথায় রিকশা চালানি বন্ধ করছি, হেরার (তাদের) কেউ এহন আমার খবর লইছে না’- বলল ক্ষুব্ধ মাজেদা।
মাজেদার মা অজুফা আক্তার বলেন, ‘ছেরি (মেয়ে) দেইখ্যা বেহেই (সবাই) মিইল্যা মাজেদার রিকশা চালানি বন্ধ কইরা দিছে। অভাবের মধ্যে এহন আমরা খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট করতাছি। এখন হ্যারা কই?’
এ বিষয়ে আবদুল আলীমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসী এসে তার কাছে অভিযোগ করে- মাজেদার রিকশা চালানোর ব্যাপারটি দৃষ্টিকটু। সে জন্যই তিনি তাকে রিকশা চালাতে নিষেধ করেছেন।
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাসেম বলেন, ‘মাজেদার বয়স কম। রিকশা চালানোর সময় ঠিকমতো ভারসাম্য রাখতে পারে না। যে কোনো সময় রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই গ্রামের মুরুব্বিদের কথায় তাকে রিকশা চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। তাকে সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী মনিকা বেগম বলেন, ‘মাজেদা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাকে নিরুৎসাহিত না করে সবার উচিত ছিল তাকে উৎসাহিত করা। মাজেদা তার মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাক। সমাজের সবাইকে এ সময় মাজেদার পাশে দাঁড়াতে হবে।’
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মদ বলেন, ‘মাজেদা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাকে দমিয়ে দেওয়া উচিত নয়; উৎসাহিত করা উচিত। বিষয়টি আমরা দেখব।
সূত্রঃ সমকাল