বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর নেই বললেই চলে। সস্তা আর বাহারি নকশার প্লাস্টিক পণ্যের কারণে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। এজন্য অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প। এখন বাড়িতে মেহমান আসলে মোড়ায় বসতে দেয়ার দৃশ্য আর দেখা যায় না। মানুষ এগুলোকে সেকেলে ভাবে। এজন্য অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আর যারা জীবিকার তাগিদে বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন তারাও তেমন ভালো নেই।
উৎপাদকরা জানান, গৃহ কৃষি ও হাটবাজারে ব্যবহৃত পণ্যের প্লাস্টিকের দখলে। এসব পণ্য সস্তা। কিন্তু এখন বাঁশ উৎপাদন কমে গেছে। মানুষ বাঁশ চাষ না করায় দাম বেড়ে গেছে। তাই প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে এই শিল্প।
লক্ষ্মীপুরের বাবুপুর গ্রামে এক সময় পুরো গ্রামজুড়ে বাঁশের সামগ্রি তৈরি হতো। জেলার বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের তৈরি পণ্য সরবরাহ করতো এই গ্রামের মানুষ। এখন হাতে গোনা কয়টি পরিবার ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।
জানা যায়, এক দশক পূর্বেও নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নের হাফিজপুর, চেঙ্গাইন, বাঘবের, ঘুঁষগাঁও, উড়ুলিয়াসহ ৮-১০টি গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। পরিবারের সকলে বাঁশ সামগ্রী বিক্রি করে পরিবারের খরচ জোগাতো। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্রের ভিড়ে এ সকল বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কম থাকা, উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া এবং দিন দিন বাঁশ-ঝাড় কমে যাওয়ার ফলে বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পেশা থেকে মানুষ দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। হাফিজপুর গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, এখন আর এসব কাজ করে পোষায় না, আর বাজারেও এ সব জিনিসের চাহিদা কম। বাপ-দাদারা এসব কাজ করে গেছেন, তাদের কাছ থেকে কাজ শিখেছি। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশ দিয়ে কিছু জিনিসপত্র তৈরি করি আর এসব বিক্রি করে হাত খরচ চলে।
জামাল উদ্দিন জানান, ৫ বছর আগে যে বাঁশ কিনতে ৮০-১০০ টাকা লাগত সে বাঁশ কিনতে এখন ২৫০-৩০০ টাকা লাগে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো বাঁশের তৈরি কুলা, ঝুড়ি, হাত পাখা, ডালা, মাছ ধরার পলো, চাটাই, ধান রাখার জাবার, মোড়া, টুকরি দেখা যায় না।