ঢাকা , সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানেরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন যাত্রীছাউনিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত তৌহিদুল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অভিযোগ, জায়গা-সম্পদ, রেশন কার্ড—সবই কেড়ে নিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত তৌহিদুল ইসলামকে (৭০) ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন সন্তানেরা। পাঁচ বছর ধরে বিভিন্নজনের বাড়িতে আশ্রয় শেষে গত বৃহস্পতিবার আশ্রয় নিয়েছেন ছোট মেরুং বাজারের জরাজীর্ণ যাত্রীছাউনিতে। তাঁকে এখন দেখাশোনা করছেন বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন স্থানীয় যুবক।

গতকাল শুক্রবার সকালে দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে ছোট মেরুং বাজার যাত্রীছাউনিতে গিয়ে দেখা যায়, খালি গায়ে শুধু খয়েরি রঙের হাফপ্যান্ট পরে বসে আছেন তৌহিদুল। প্রথমে তাঁকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে হলেও আসলে তিনি তা নন। কথা হয় তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে সন্তানদের নিয়ে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বাড়ি ছিল ছোট মেরুং দুই নম্বর কলোনিতে। সেখানের জায়গা-সম্পদ বিক্রি করে সন্তানেরা উপজেলার কবাখালীতে জায়গা কিনে ঘর করেছেন। তাঁর নামে সোবাহনপুর গুচ্ছগ্রামে একটি সরকারি রেশন কার্ড রয়েছে। তাও সন্তানেরা নিয়ে গেছেন। পাঁচ বছর আগে দুই পা ও বাঁ হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে অচল হয়ে গেলে স্ত্রী-সন্তানেরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন।

তৌহিদুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, মেজ ছেলে সোহাগ মিয়া ও ছোট ছেলে সাগর আলী আমার জায়গা-সম্পদ সব বিক্রি করে দিয়েছে। স্ত্রী মনা বেগমও কোনো খোঁজ খবর নেন না। আর আপন ছোট ভাই রফিক মিয়া আরেকটি জায়গা বিক্রি করে আমার থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে জিপগাড়ি (চাঁদের গাড়ি নামে পরিচিত) কিনেছে। পাঁচ বছর আগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে সন্তানেরা আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। আমার নামে থাকা সরকারি রেশন কার্ডের চাল-গমও তারা তুলে খাচ্ছে। এখন আমার কেউ নেই। সন্তানেরা সবাই টাকা-পয়সা ভালো আয় করে। কিন্তু আমার কোনো খবর রাখে না।’

স্থানীয় যুবক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামের অসহায়ত্ব দেখে আমরা কয়েকজন যুবক যাত্রীছাউনিতে তাঁর দেখাশোনা করছি। তাঁর খাবারে ব্যবস্থা করছি। তাঁর সন্তানদের বিচার হওয়া উচিত। আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’

যাত্রীছাউনিতে লোকজনের ভিড়ে দেখা হয় তৌহিদুল ইসলামের ছোট ভাই রফিক মিয়ার সঙ্গে। রফিক মিয়া বলেন, ‘ওকে আমি চিনি না। আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ এ সময় তৌহিদুল ইসলাম রফিককে দেখিয়ে বলেন, ‘সেও (রফিক মিয়া) আমার জায়গা বিক্রির আড়াই লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি কিনেছে।’

তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় তাঁর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তবে জাহাঙ্গীর ‘বাবার খরচের জন্য মাসে দুই হাজার টাকা দিই তো’ বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে আর কথা বলতে চাননি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সন্তানেরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন যাত্রীছাউনিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত তৌহিদুল

আপডেট টাইম : ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুন ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অভিযোগ, জায়গা-সম্পদ, রেশন কার্ড—সবই কেড়ে নিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত তৌহিদুল ইসলামকে (৭০) ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন সন্তানেরা। পাঁচ বছর ধরে বিভিন্নজনের বাড়িতে আশ্রয় শেষে গত বৃহস্পতিবার আশ্রয় নিয়েছেন ছোট মেরুং বাজারের জরাজীর্ণ যাত্রীছাউনিতে। তাঁকে এখন দেখাশোনা করছেন বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন স্থানীয় যুবক।

গতকাল শুক্রবার সকালে দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে ছোট মেরুং বাজার যাত্রীছাউনিতে গিয়ে দেখা যায়, খালি গায়ে শুধু খয়েরি রঙের হাফপ্যান্ট পরে বসে আছেন তৌহিদুল। প্রথমে তাঁকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে হলেও আসলে তিনি তা নন। কথা হয় তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে সন্তানদের নিয়ে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বাড়ি ছিল ছোট মেরুং দুই নম্বর কলোনিতে। সেখানের জায়গা-সম্পদ বিক্রি করে সন্তানেরা উপজেলার কবাখালীতে জায়গা কিনে ঘর করেছেন। তাঁর নামে সোবাহনপুর গুচ্ছগ্রামে একটি সরকারি রেশন কার্ড রয়েছে। তাও সন্তানেরা নিয়ে গেছেন। পাঁচ বছর আগে দুই পা ও বাঁ হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে অচল হয়ে গেলে স্ত্রী-সন্তানেরা তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন।

তৌহিদুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, মেজ ছেলে সোহাগ মিয়া ও ছোট ছেলে সাগর আলী আমার জায়গা-সম্পদ সব বিক্রি করে দিয়েছে। স্ত্রী মনা বেগমও কোনো খোঁজ খবর নেন না। আর আপন ছোট ভাই রফিক মিয়া আরেকটি জায়গা বিক্রি করে আমার থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে জিপগাড়ি (চাঁদের গাড়ি নামে পরিচিত) কিনেছে। পাঁচ বছর আগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে সন্তানেরা আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। আমার নামে থাকা সরকারি রেশন কার্ডের চাল-গমও তারা তুলে খাচ্ছে। এখন আমার কেউ নেই। সন্তানেরা সবাই টাকা-পয়সা ভালো আয় করে। কিন্তু আমার কোনো খবর রাখে না।’

স্থানীয় যুবক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামের অসহায়ত্ব দেখে আমরা কয়েকজন যুবক যাত্রীছাউনিতে তাঁর দেখাশোনা করছি। তাঁর খাবারে ব্যবস্থা করছি। তাঁর সন্তানদের বিচার হওয়া উচিত। আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’

যাত্রীছাউনিতে লোকজনের ভিড়ে দেখা হয় তৌহিদুল ইসলামের ছোট ভাই রফিক মিয়ার সঙ্গে। রফিক মিয়া বলেন, ‘ওকে আমি চিনি না। আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ এ সময় তৌহিদুল ইসলাম রফিককে দেখিয়ে বলেন, ‘সেও (রফিক মিয়া) আমার জায়গা বিক্রির আড়াই লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি কিনেছে।’

তৌহিদুল ইসলামের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় তাঁর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তবে জাহাঙ্গীর ‘বাবার খরচের জন্য মাসে দুই হাজার টাকা দিই তো’ বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে আর কথা বলতে চাননি।