ঢাকা , সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কচুরিপানা পরিষ্কারে ইউএনও যখন বিলে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে এক সময়ের লাল-সাদা শাপলায় ভরপুর দৃষ্টিনন্দন বিলটি অবৈধ দখলদারদের দাপটে হারিয়ে ফেলেছে সৌন্দর্য। বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া আর কচুরিপানা দিয়ে ভর্তি বিলটি।

বিল পরিষ্কার করতে এবং দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য সপ্তাহজুড়ে নির্দেশ দিচ্ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান। কিন্তু যেভাবে চাইছিলেন, কাজটি সেভাবে হচ্ছিল না। অগত্যা নিজেই নেমে পড়লেন বিলে! টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা কাদাপানিতে থেকে বিলের কচুরিপানা ও অবধৈ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেন ইউএনও।

ইউএনওকে বিলে নামতে দেখে বসে থাকতে পারেননি স্থানীয়রা। খবর পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে বিলের পাড়ে জড়ো হয় মানুষ। ইউএনওকে দেখে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও নেমে পড়েন বিল পরিষ্কারের কাজে।

গত শুক্রবারের ঘটনা এটি। সকাল থেকে দুপুর অবধি এমন কাণ্ড ঘটিয়ে আলোচনায় রয়েছে বীরগঞ্জ ইউএনও মশিউর রহমান। স্থানীয় নবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে এই অভিযান চালান তিনি। তার নেতৃত্বে প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বিলের কচুরিপানা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানান, ৩৬০ হেক্টর এলাকাজুড়ে আশুরা বিল। এখানে দেশী মাছ লাল খলশে, কাকিলাসহ আট প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, একজন ইউএনও বিলের কাদাপানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করবেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন, তা ভাবনাতেও ছিল না। ইউএনও নিজে বিলে নামার পর তিনিও পানিতে নেমে কচুরিপানা পরিষ্কার করেছেন। ইউএনও মশিউর রহমানের ব্যতিক্রমী অভিযান চোখ খুলে দিয়েছে।

ইউএনও মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ বিলটি দেশের অমূল্য সম্পদ। এক সময় এ বিলজুড়ে ফুটে থাকত লাল-সাদা শাপলা। শীতে অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত থাকত। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে একদল প্রভাবশালী মানুষ বিলটি দখলে নিয়েছিল। বিলটিকে বাঁশের বেড়া, মাচা দিয়ে অসংখ্য ভাগে ভাগ করেছিল। এতে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল পুরো বিল। হারিয়ে গেছে শাপলা। শীতকালে ধান চাষ করায় ফসলে কীটনাশক ব্যবহারে হারিয়ে গেছে বহু দেশি প্রজাতির মাছ। বন্ধ হয়েছে অতিথি পাখি আসা।

ইউএনও জানান, পরিষ্কারের পর বিলে ছাড়া হচ্ছে লাগানো হচ্ছে শাপলা আর পদ্ম। ফিরিয়ে আনা হচ্ছে হারানো ঐতিহ্য।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কচুরিপানা পরিষ্কারে ইউএনও যখন বিলে

আপডেট টাইম : ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে এক সময়ের লাল-সাদা শাপলায় ভরপুর দৃষ্টিনন্দন বিলটি অবৈধ দখলদারদের দাপটে হারিয়ে ফেলেছে সৌন্দর্য। বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া আর কচুরিপানা দিয়ে ভর্তি বিলটি।

বিল পরিষ্কার করতে এবং দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য সপ্তাহজুড়ে নির্দেশ দিচ্ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান। কিন্তু যেভাবে চাইছিলেন, কাজটি সেভাবে হচ্ছিল না। অগত্যা নিজেই নেমে পড়লেন বিলে! টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা কাদাপানিতে থেকে বিলের কচুরিপানা ও অবধৈ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেন ইউএনও।

ইউএনওকে বিলে নামতে দেখে বসে থাকতে পারেননি স্থানীয়রা। খবর পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে বিলের পাড়ে জড়ো হয় মানুষ। ইউএনওকে দেখে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও নেমে পড়েন বিল পরিষ্কারের কাজে।

গত শুক্রবারের ঘটনা এটি। সকাল থেকে দুপুর অবধি এমন কাণ্ড ঘটিয়ে আলোচনায় রয়েছে বীরগঞ্জ ইউএনও মশিউর রহমান। স্থানীয় নবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে এই অভিযান চালান তিনি। তার নেতৃত্বে প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বিলের কচুরিপানা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানান, ৩৬০ হেক্টর এলাকাজুড়ে আশুরা বিল। এখানে দেশী মাছ লাল খলশে, কাকিলাসহ আট প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, একজন ইউএনও বিলের কাদাপানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করবেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন, তা ভাবনাতেও ছিল না। ইউএনও নিজে বিলে নামার পর তিনিও পানিতে নেমে কচুরিপানা পরিষ্কার করেছেন। ইউএনও মশিউর রহমানের ব্যতিক্রমী অভিযান চোখ খুলে দিয়েছে।

ইউএনও মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ বিলটি দেশের অমূল্য সম্পদ। এক সময় এ বিলজুড়ে ফুটে থাকত লাল-সাদা শাপলা। শীতে অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত থাকত। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে একদল প্রভাবশালী মানুষ বিলটি দখলে নিয়েছিল। বিলটিকে বাঁশের বেড়া, মাচা দিয়ে অসংখ্য ভাগে ভাগ করেছিল। এতে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল পুরো বিল। হারিয়ে গেছে শাপলা। শীতকালে ধান চাষ করায় ফসলে কীটনাশক ব্যবহারে হারিয়ে গেছে বহু দেশি প্রজাতির মাছ। বন্ধ হয়েছে অতিথি পাখি আসা।

ইউএনও জানান, পরিষ্কারের পর বিলে ছাড়া হচ্ছে লাগানো হচ্ছে শাপলা আর পদ্ম। ফিরিয়ে আনা হচ্ছে হারানো ঐতিহ্য।