২৭১ রানে চার উইকেট। এরপর স্কোরবোর্ডে ৩ রান যোগ করতেই তিনটি উইকেটের পতন। বাংলাদেশের পরাজয়ের শঙ্কাটা মূলত তখনই জেগেছিলো টাইগারপ্রেমীদের মনে। হলোও তাই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিততে জিততে সফরকারীদের কাছে ২১ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ। ৯.৫ ওভারে ৫১ রান খরচায় ৫টি উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন জ্যাক বল।
ইংলিশদের দেওয়া ৩১০ রানের জবাবে শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিলো বাংলাদেশের। ওপেনিং জুটিতে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ৪৬ রানে জুটি গড়ে টাইগারদের ভিত মজবুত করে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। জেমস ভিন্সের বলে জ্যাক বলের হাতে ধরা পড়ার আগে তামিম করেন ১৭ রান।
এরপর ১১ বলে ১৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। মাঝে ইমরুলের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়ে ব্যক্তিগত ২৫ রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সম্প্রতি ব্যাটহাতে ধারাবাহিক ব্যর্থ মুশফিকুর রহিমও এ দিন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। দলীয় ১৫৩ রানে আদিল রশিদের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১২ রানে ফেরেন তিনি।
এরপর ইমরুল কায়েসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান। এ দিন শুরু থেকেই ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলে টাইগারদের জয়ের স্বপ্ন দেখান তিনি। তবে ইমরুলের সঙ্গে ১১৮ রানের জুটি গড়ে দলীয় ২৭১ রানে বিদায় নেন সাকিব। এরপর আর কেউ ক্রিজে দাঁড়াতে পারেননি। শেষপর্যন্ত ৪৭.৫ ওভারে ২৮৮ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
এ দিন শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন ইমরুল কায়েস। শুরু থেকেই অসাধারণ ব্যাট করেছেন তিনি। ইংলিশদের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে সেঞ্চুরি করা ইমরুল আজও হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওডিআই শতক। তবে দলীয় ২৮০ রানে রশিদের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১১৯ বলে ১১ চার ও দুটি ছক্কায় ইমরুল করেন ১১২ রান।
ইংলিশ বোলারদের মধ্যে জ্যাক বল একাই শিকার করেন ৫টি উইকেট। আর আদিল রশিদ নেন ৪টি উইকেট।
এরআগে আজ শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান করে ইংল্যান্ড। দলের পক্ষ্যে সর্বোচ্চ ১০১ রান করেন বেন স্টোকস। ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয় ভালো।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জেসন রয় ও জেমস ভিন্স মিলে ৭ ওভারে তোলেন ৪১ রান। ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভিন্সকে বিদায় করে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন পেসার শফিউল ইসলাম। তার বলে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅনে মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিন্স (১৬)।
ভিন্স ফিরলেও ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন রয়। তবে ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে এসে রয়কে সাজঘরের পথ দেখান সাকিব আল হাসান। তার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅফ বাউন্ডারির কাছে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন রয় (৪১)।
পরের ওভারে সাব্বিরের সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা জনি বেয়ারস্টো (০)। ইংলিশ ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেনের বল মিডঅফে পাঠিয়ে দিয়েই রানের জন্য দৌড় দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্রুত বল তুলে বুলেট গতির থ্রোয়ে স্টাম্পের বেল ফেলে দেন সাব্বির।
৬৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ চাপে পড়ে সফরকারীরা। তবে বেন ডাকেট ও বেন স্টোকস সেই চাপ সামাল দেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের জন্য এই জুটি ভয়ঙ্কার হয়ে উঠছিলো।
কিন্তু ডাকেটকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়েছেন শফিউল ইসলাম। আউট হওয়ার আগে ৭৮ বলে ৮ চারের সাহায্যে তিনি করেন ৬০ রান। অন্যদিকে, ক্রিজের অন্যপ্রান্ত আগলে রেখে শতক পূর্ণ করেছেন স্টোকস। ১০০ বলে ৮ চার ও ৪টি ছক্কায় তিনি সেঞ্চুরি করেন। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক জশ বাটলারের ৬৩ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ওভার শেষে ৩০৯ রান করে ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা, শফিউল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান প্রত্যেকেই দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ দল:
মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোশাররফ হোসেন রুবেল, তাসকিন আহমেদ ও শফিউল ইসলাম।
ইংল্যান্ড দল:
জস বাটলার, জেসন রয়, জেমস ভিন্স, বেন ডাকেট, জনি বেয়ারস্টো, বেন স্টোকস, মঈন আলী, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, ডেভিড উইলি ও জ্যাক বল।