বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ‘হালখাতা’ আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানের হিসাব আনুষ্ঠানিক হালনাগাদের এ প্রক্রিয়ায় এখন ভাটা পড়েছে। তবে শহর কিংবা গ্রামে এখনো ছোট পরিসরে পালন করেন কিছু ব্যবসায়ী। হালখাতার অতীত-বর্তমান নিয়ে লিখেছেন মজিবর রহমান নাহিদ-
ছোটবেলা থেকেই বৈশাখের শুরুতে ‘হালখাতা’ উৎসবের আমেজ দেখতাম অনেকের মাঝে। পুরনো বছরের সব হিসাব শেষ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তা-ই ‘হালখাতা’। দিনটি উপলক্ষে ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলায় রূপ নেয়। শহরের চেয়ে গ্রামে এর আমেজটা বরাবরই বেশি দেখেছিলাম। সেই লাল-নীল-খয়েরি রঙের কাগজ দিয়ে দোকান সাজানো, মাইকে বাংলা গান বাজানো, ক্রেতাদের আপ্যায়নই ছিলো হালখাতার মূল আকর্ষণ। বাংলা বছর শুরুর আগেই দোকানিরা বিক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হাতে পৌঁছে দিতেন হালখাতার কার্ড।
বিভিন্ন রকমের কার্ড আদান-প্রদানেও ছিলো একরকম আনন্দ। হালখাতার দিনে মূলত ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো বছরের হিসাবের খাতাটা বন্ধ করে নতুন বছর উপলক্ষে নতুন খাতা খোলেন। আর এ নতুন হিসাবের খাতার সাথে পুরনো সব দেনা-পাওনার সমাপ্তি ঘটানো হয়। দেনাদাররা খুব আগ্রহের সাথেই এসে দিয়ে যায় পাওনা টাকা।
অংশ নেয় আপ্যায়নে। ইতিহাস বলে, তৎকালীন ভারতবর্ষে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০-১১ মার্চ সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতা’র প্রচলন হয়। পশ্চিমবঙ্গেও অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। ১৯ শতকের দিকে ঢাকার ইসলামপুরে পহেলা বৈশাখে হালখাতা উৎসব পালন করা শুরু হয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে হাচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য হালখাতা।
অতীতের মতো সারাদেশে একযোগে এ উৎসব পালিত না হলেও কিছু কিছু জায়গায় হালখাতার প্রচলন এখনও আছে। বড় পরিসরে না হলেও ছোট পরিসরে কিছু কিছু ব্যবসায়ী টিকিয়ে রেখেছেন এ হালখাতা। বর্তমানে আমাদের দেশে হিসাব রাখার জন্য ব্যবহৃত লাল মোড়কের বিশেষ খাতার পরিবর্তে এখন হিসাব সংরক্ষণ করা হয় কম্পিউটারে।
বর্তমানে প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার রয়েছে। খাতার কাজ এখন কম্পিউটারই করছে। আগে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য হাতে লেখা টালি (স্লিপ) ক্রেতাদের দেওয়া হতো। এখন কম্পিউটারাইজড স্লিপ দেওয়া হয়। ফলে খাতা রাখার খুব একটি প্রয়োজন হয় না। টালি খাতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানেও নেই আগের মতো কর্মব্যস্ততা। চাহিদা কমে যাওয়ায় বাপ-দাদা সূত্রে পাওয়া এ পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশা গ্রহণ করেছেন অনেকেই।
হালখাতা আমাদের ঐতিহ্য, হালখাতা আমাদের উৎসব। আমরা চাই কালের বিবর্তনে এটি হারিয়ে না গিয়ে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীর উদ্যোগে আবার অতীতের মতো ফিরে আসুক হালখাতা। সবাইকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ এর অগ্রিম শুভেচ্ছা।