বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লিকলিকে মাথাভর্তি চুল। শ্যামল বরণ মানুষটি সদ্য গ্রাম থেকে এসেছে। কথা বলে কম। ছবি দেখে। বই পড়ে। ক্লাসেও নিয়মিত নয়। ঠিক কখন তার সাথে প্রথম দেখা! মনে নেই। হতে পারে ঢাকা কলেজের করিডোরে। আবার হতে পারে বলাকা সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারে। তখন সামরিক শাসনের কাল। সমাজতন্ত্র কায়েমের স্বপ্ন দেখে সে। তাঁর সাথে ঢাকাইয়া উড়াধরা আড্ডাবাজ মানুষটার সম্পর্ক গাঢ় হয়। ঠিক কোন কারণে হিসেব করা হয়নি কখনো। হতে পারে এটাই প্রাণের টান।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আরও সাত বছর। সে ইংরেজি সাহিত্যে আর আমি সাংবাদিকতায়। হঠাৎ একদিন টিএসসিতে পেছন থেকে ডাক। ওই সাংবাদিক! কিরে আছিস কেমন? বললাম, ‘যথারীতি ভালো। তোর কী খবর?’ বলল, ‘দোস্ত পুলিশে যোগ দিতে যাচ্ছি। বিসিএসে হয়ে গেছে। পুলিশ ক্যাডারে ফার্স্ট হয়েছি। ভাবলাম যোগ দিয়েই দেই।’
ভালোই যাচ্ছিল সময়টা। তখন গণতান্ত্রিক আমল। সরকার পরিবর্তন। চাকরিতেও রাজনৈতিক প্রভাব। শুধু জন্মস্থানের কারণে হেনস্তার শিকার। পদোন্নতি আটকে দেয় বারবার।
বিসিএসে প্রথম হওয়া অফিসারটি ১৪ বার সুপারসিটেড হয় পাঁচ বছরেই। ভেঙে পড়েনি কখনো। এখন দেশে জঙ্গি দমনের গুরু দায়িত্ব তার উপর। ব্যস্ত থাকতে হয় সারাক্ষণ। দেখা হয় কম। তার সাথে অলিখিত একটা চুক্তি এখনো বহাল। বই লেনদেন। বই মেলায় প্রতিবারই একসাথে যাওয়া। কত্তো রকমের বই যে পড়ে সে। আরো একটি শখ আছে তাঁর। সিনেমা দেখা। বলা চলে সিনেমার পোকা।
বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ দমনের বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলানোর পাশাপাশি বই পড়া আর সিনেমা দেখা থেমে নেই। এই সেদিন ঈদের ছুটিতে বলল চল বসুন্ধরায় সিনেমা দেখে আসি। যেতে পারিনি। ওরা দল বেধে গিয়েছিল। বললাম, সাবধানে থাকিস। জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে তোকে। একটু হাসলো। ওই হাসিটাই তার বিরাট সম্পদ। ভালো থাকিস বন্ধু। সব সময়। সবাইকে নিয়ে। শুভ জন্মদিন।
সম্পাদক: ডিবিসি নিউজ