ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবে সবার শুভবুদ্ধি হবে? রাষ্ট্র অচল হলে

গত কয়েকদিন ধরে কী অস্থির, আতঙ্কিত, শঙ্কিত আর অনিরাপদ লাগছে! রাতে ঘুমালে কোথাও শব্দ হলেই বুঝি মনে হচ্ছে কেউ চাপাতি নিয়ে কাউকে মারতে ছুটছে। কোথাও গেলে অবচেতন মন চারপাশ মানুষদের চাপাতিওয়ালা বলে সন্দেহ করছে।

মানুষ খুন করা এখন তামাশা আর ডাল-ভাত হয়ে উঠেছে। এখন ৫ মিনিটেই অনায়াসে চোখের সামনে হত্যা মিশন শেষ করে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া যায়! একেকটা খুন হয় আর তামাশা, বিনোদন জমে উঠে। টানাটানি শুরু হয় তার কর্মকাণ্ড নিয়ে, সে অবিশ্বাসী ছিল, ওমুক বিধর্মী ছিল, তমুক সেতার বাজাতো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, ওমুক সমকামীদের পত্রিকায় কাজ করতো, ওমুক নাটক করতো, তমুক ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, তাদের লেখালেখি খতিয়ে দেখা হবে।

আর ভাঙা রেকর্ড বাজতেই থাকে সরকারের তরফ থেকে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, খুন খারাবিতে দেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছায়নি, এগুলো বিছিন্ন ঘটনা, আর সর্বশেষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তার বাংলা সিনেমার মতো সেই বাণী, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা’।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন স্থানে একদিনে চারজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। দিনে কয়জন খুন হলে অস্বাভাবিক বলা যাবে? যদি ধরে নেই যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থা সেই পূর্ব পরিকল্পনা ধরতে পারে না কেন? এটি কি তাদের দক্ষতার অভাব? নাকি শর্ষের মধ্যে ভূত পালিত হচ্ছে? সেটি খুঁজে বের করা ভীষণ প্রয়োজন।

আর অদক্ষ হলে এরকম অদক্ষ বাহিনী পুষে আমাদের লাভ কি? আমাদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর অদক্ষতা অথবা শর্ষের ভূত পালন কোথায় কোন পরিকল্পনায় গিয়ে ঠেকতে পারে বা কোন ঘটনায় গিয়ে শেষ হতে পারে তা কি ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারেন না! শর্ষের মধ্যে ভূত পুষে রাখার বিপদ কি সেই ৭৫ এ দাম দিয়েও শিক্ষা হয়নি?

আপনারা বলেন ‘কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আমরা জানি’। মন্ত্রী মহোদয় আপনারা জানেন যদি তাহলে ধরছেন না কেন? জেনে থাকলে না ধরাটা আরো অন্যায়, আরো প্রতারণা।  টিভিতে খুনিকে সনাক্ত করা হয়, কিন্তু আপনাদের বাহিনী তাদের টিকিটিও ধরতে পারে না।

ফেসবুকে লাইক দেওয়ার জন্যেও আপনারা অপরাধীকে ধরে ফেলেন, নিজেদের আত্মীয় স্বজন হত্যার পরিকল্পনা সাথে জড়িত থাকার সূত্র বের করে ফেলেন, আর দিন-দুপুরে ঘরের মধ্যে, অফিস যাওয়ার পথে, অফিসে, জনসম্মুখে খুন করে খুনি পালিয়ে যায়, আপনারা ধরতে পারেন না।

ফেইসবুকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া মানুষ ঘুরে বেড়ালেও আপনারা ধরতে পারেন না, কোন কোন খুনের আসামী ধরা পড়লেও তাদের পেছনের শক্তিকে আপনারা খুঁজে বের করতে পারেন না, আবার কোন কোন আসামী জামিন পেয়ে যায়!।

জানতে ইচ্ছা করে খুনিরা আপনাদের চেয়েও ক্ষমতাধর? একটার পর একটা খুন করেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়? এই ক্ষমতাধর সাপেদের ছোবল থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়টুকু অবশেষে লখিন্দরের লোহার ঘরে পরিণত হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। অথবা যে গর্ত আজ তৈরি হচ্ছে তা মনে করার কারণ নেই যে সেই গর্তে অন্যেরাই পড়বে আর আপনারা বেঁচে যাবেন।

খুনিরা একের পর এক খুন করে আর আপনারা তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারেন না। আপনাদের ব্যর্থতায় ওরা দাঁত কেলিয়ে হাসে। অন্যদিকে জনগণের টাকায় বেতন নেওয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান নির্লজ্জ হুঙ্কার ছাড়েন, তারা জনগণের ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না।

ছোটবেলায় শুনেছিলাম যার নুন খাই তার গুণ গাইতে হয়। আমাদের এইসকল মান্যবরেরা তার ধার ধারেন না। তারা জনগণের নুন খান, কিন্তু জনগনের নিরাপত্তার দায় নেন না।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না কেউ, বাংলা ভাইদের কথা ভুলে গেলেন? মানুষ কী বোমাতঙ্কে দিন কাটিয়েছে, কত মানুষের রক্ত ঝরেছে। মিডিয়ার সৃষ্টি বলে অস্বীকার করে তাকে কোন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিলো! ভুলে গেলেন সাতক্ষীরার ঘটনা, বগুড়া পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনা? উদীচী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বোমা হামলার বিচারের দীর্ঘসূচিতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল? কিংবা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা? আপনারা কি বুঝতে পারছেন না কী বিপদের মধ্যে আমরা নিজেদেরেকে ঠেলে দিচ্ছি? একবার ক্ষমতার, নিরাপত্তার বলয় ছেড়ে বেরিয়ে দেখেন আপনারাও কতটুকু নিরাপদ থাকেন! আপনাদের নিজেদের জন্যও তো এই জনপদ নিরাপদ করা দরকার এই সহজ  সত্যটুকু আমার অতি সাধারণেরা বুঝতে পারছি, আর আপনারা বুঝতে পারছেন না! মনে রাখবেন কারো ক্ষমতা অনন্তকালের নয়।

এই ঘোলা জলে বিভিন্ন শিকারী কিন্তু তাদের শিকার করে নিচ্ছে। ধর্মানুভূতির নাম দিয়ে শত্রু নিধন এখন সবচেয়ে সোজা। রাষ্ট্র একটি ধর্ম ছাড়া অন্যধর্মের মানুষের ধর্মানুভুতি রক্ষায় কী নির্লজ্জ, নির্লিপ্ত! আমরা সুনির্দিষ্টভাবে জানি না ঠিক কাকে, কীসের জন্যে চাপাতি চালানো হচ্ছে। শুধু জানি হত্যার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য বিস্তৃত হচ্ছে! এখন চলছে নাস্তিক, লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক, নাট্যকর্মী, বাউল, সাধু, কাদিয়ানী, ছাত্র, বিধর্মী দর্জি।

এর পরের তালিকায় কারা? যারা সিনেমা বানায়, সিনেমা দেখে, ছবি আঁকে, যারা এনজিও চালায়, পত্রিকা চালায়, মানবাধিকারের কথা বলে, যারা বই পড়ে, গান গায়, গান শোনে, নাচে, নাচ দেখে, কবিতা পড়ে, যারা পর্দা করে না, যারা নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়, তারা?

মিলিয়ে দেখুন আপনি বা আপনার পরিজন কোন না কোনভাবে এই তালিকার কোন একটি শ্রেণিতে পড়বেন। নাস্তিক নিধন শুরুর পর আপনারা চুপ ছিলেন তারা আপনার গোত্রের নয় বলে, শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মী, শিÿক, বিধর্মী নিধন, আপনারা চুপ আছেন। আপনাদের ক্ষমতায় আঁচড় লাগছে না বলে।

একদিন আপনাদেরকে টার্গেট করা হবে, নারী নেতৃত্ব দিয়েছে বলে আর অন্যরা তা মেনে নিয়েছেন বলে।  কোন সে অজানা কারণ, কোন সেই অজানা শক্তি যার হাতের ইশারা এতো শক্তিশালী যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না!

এই খুনিদের খুঁজে বের করা হোক। এই দেশকে পুরোপুরি মৃত বানানোর আগে এই হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু দেখতে চাই। রাষ্ট্রের সকল মানুষের বেঁচে থাকা সাংবিধানিক অধিকার। সেই হত্যাকে রাষ্ট্র পরিচালকদের প্রত্যক্ষ সমর্থন বা নিরাপত্তা না দিতে পারা সংবিধান লংঘন।

তাই মানব হত্যাকে কোনভাবেই তাদের কাজ দিয়ে জায়েজ করার প্রচেষ্টা বন্ধ হোক। মত-বিনিময় হোক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে। জীবন হত্যা সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের প্রকাশ্য হুমকির প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো হোক। অন লাইনে পেইজ খোলা হোক এই সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য। অপরাধীদের ধরার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠা গড়ে তোলা হোক। অপশক্তি সব দখল করার আগেই শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কবে সবার শুভবুদ্ধি হবে? রাষ্ট্র অচল হলে

আপডেট টাইম : ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মে ২০১৬

গত কয়েকদিন ধরে কী অস্থির, আতঙ্কিত, শঙ্কিত আর অনিরাপদ লাগছে! রাতে ঘুমালে কোথাও শব্দ হলেই বুঝি মনে হচ্ছে কেউ চাপাতি নিয়ে কাউকে মারতে ছুটছে। কোথাও গেলে অবচেতন মন চারপাশ মানুষদের চাপাতিওয়ালা বলে সন্দেহ করছে।

মানুষ খুন করা এখন তামাশা আর ডাল-ভাত হয়ে উঠেছে। এখন ৫ মিনিটেই অনায়াসে চোখের সামনে হত্যা মিশন শেষ করে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া যায়! একেকটা খুন হয় আর তামাশা, বিনোদন জমে উঠে। টানাটানি শুরু হয় তার কর্মকাণ্ড নিয়ে, সে অবিশ্বাসী ছিল, ওমুক বিধর্মী ছিল, তমুক সেতার বাজাতো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, ওমুক সমকামীদের পত্রিকায় কাজ করতো, ওমুক নাটক করতো, তমুক ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, তাদের লেখালেখি খতিয়ে দেখা হবে।

আর ভাঙা রেকর্ড বাজতেই থাকে সরকারের তরফ থেকে, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, খুন খারাবিতে দেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছায়নি, এগুলো বিছিন্ন ঘটনা, আর সর্বশেষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তার বাংলা সিনেমার মতো সেই বাণী, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা’।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন স্থানে একদিনে চারজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। দিনে কয়জন খুন হলে অস্বাভাবিক বলা যাবে? যদি ধরে নেই যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থা সেই পূর্ব পরিকল্পনা ধরতে পারে না কেন? এটি কি তাদের দক্ষতার অভাব? নাকি শর্ষের মধ্যে ভূত পালিত হচ্ছে? সেটি খুঁজে বের করা ভীষণ প্রয়োজন।

আর অদক্ষ হলে এরকম অদক্ষ বাহিনী পুষে আমাদের লাভ কি? আমাদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর অদক্ষতা অথবা শর্ষের ভূত পালন কোথায় কোন পরিকল্পনায় গিয়ে ঠেকতে পারে বা কোন ঘটনায় গিয়ে শেষ হতে পারে তা কি ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারেন না! শর্ষের মধ্যে ভূত পুষে রাখার বিপদ কি সেই ৭৫ এ দাম দিয়েও শিক্ষা হয়নি?

আপনারা বলেন ‘কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আমরা জানি’। মন্ত্রী মহোদয় আপনারা জানেন যদি তাহলে ধরছেন না কেন? জেনে থাকলে না ধরাটা আরো অন্যায়, আরো প্রতারণা।  টিভিতে খুনিকে সনাক্ত করা হয়, কিন্তু আপনাদের বাহিনী তাদের টিকিটিও ধরতে পারে না।

ফেসবুকে লাইক দেওয়ার জন্যেও আপনারা অপরাধীকে ধরে ফেলেন, নিজেদের আত্মীয় স্বজন হত্যার পরিকল্পনা সাথে জড়িত থাকার সূত্র বের করে ফেলেন, আর দিন-দুপুরে ঘরের মধ্যে, অফিস যাওয়ার পথে, অফিসে, জনসম্মুখে খুন করে খুনি পালিয়ে যায়, আপনারা ধরতে পারেন না।

ফেইসবুকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া মানুষ ঘুরে বেড়ালেও আপনারা ধরতে পারেন না, কোন কোন খুনের আসামী ধরা পড়লেও তাদের পেছনের শক্তিকে আপনারা খুঁজে বের করতে পারেন না, আবার কোন কোন আসামী জামিন পেয়ে যায়!।

জানতে ইচ্ছা করে খুনিরা আপনাদের চেয়েও ক্ষমতাধর? একটার পর একটা খুন করেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়? এই ক্ষমতাধর সাপেদের ছোবল থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়টুকু অবশেষে লখিন্দরের লোহার ঘরে পরিণত হলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। অথবা যে গর্ত আজ তৈরি হচ্ছে তা মনে করার কারণ নেই যে সেই গর্তে অন্যেরাই পড়বে আর আপনারা বেঁচে যাবেন।

খুনিরা একের পর এক খুন করে আর আপনারা তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারেন না। আপনাদের ব্যর্থতায় ওরা দাঁত কেলিয়ে হাসে। অন্যদিকে জনগণের টাকায় বেতন নেওয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান নির্লজ্জ হুঙ্কার ছাড়েন, তারা জনগণের ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না।

ছোটবেলায় শুনেছিলাম যার নুন খাই তার গুণ গাইতে হয়। আমাদের এইসকল মান্যবরেরা তার ধার ধারেন না। তারা জনগণের নুন খান, কিন্তু জনগনের নিরাপত্তার দায় নেন না।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না কেউ, বাংলা ভাইদের কথা ভুলে গেলেন? মানুষ কী বোমাতঙ্কে দিন কাটিয়েছে, কত মানুষের রক্ত ঝরেছে। মিডিয়ার সৃষ্টি বলে অস্বীকার করে তাকে কোন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিলো! ভুলে গেলেন সাতক্ষীরার ঘটনা, বগুড়া পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনা? উদীচী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বোমা হামলার বিচারের দীর্ঘসূচিতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল? কিংবা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা? আপনারা কি বুঝতে পারছেন না কী বিপদের মধ্যে আমরা নিজেদেরেকে ঠেলে দিচ্ছি? একবার ক্ষমতার, নিরাপত্তার বলয় ছেড়ে বেরিয়ে দেখেন আপনারাও কতটুকু নিরাপদ থাকেন! আপনাদের নিজেদের জন্যও তো এই জনপদ নিরাপদ করা দরকার এই সহজ  সত্যটুকু আমার অতি সাধারণেরা বুঝতে পারছি, আর আপনারা বুঝতে পারছেন না! মনে রাখবেন কারো ক্ষমতা অনন্তকালের নয়।

এই ঘোলা জলে বিভিন্ন শিকারী কিন্তু তাদের শিকার করে নিচ্ছে। ধর্মানুভূতির নাম দিয়ে শত্রু নিধন এখন সবচেয়ে সোজা। রাষ্ট্র একটি ধর্ম ছাড়া অন্যধর্মের মানুষের ধর্মানুভুতি রক্ষায় কী নির্লজ্জ, নির্লিপ্ত! আমরা সুনির্দিষ্টভাবে জানি না ঠিক কাকে, কীসের জন্যে চাপাতি চালানো হচ্ছে। শুধু জানি হত্যার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য বিস্তৃত হচ্ছে! এখন চলছে নাস্তিক, লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক, নাট্যকর্মী, বাউল, সাধু, কাদিয়ানী, ছাত্র, বিধর্মী দর্জি।

এর পরের তালিকায় কারা? যারা সিনেমা বানায়, সিনেমা দেখে, ছবি আঁকে, যারা এনজিও চালায়, পত্রিকা চালায়, মানবাধিকারের কথা বলে, যারা বই পড়ে, গান গায়, গান শোনে, নাচে, নাচ দেখে, কবিতা পড়ে, যারা পর্দা করে না, যারা নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়, তারা?

মিলিয়ে দেখুন আপনি বা আপনার পরিজন কোন না কোনভাবে এই তালিকার কোন একটি শ্রেণিতে পড়বেন। নাস্তিক নিধন শুরুর পর আপনারা চুপ ছিলেন তারা আপনার গোত্রের নয় বলে, শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মী, শিÿক, বিধর্মী নিধন, আপনারা চুপ আছেন। আপনাদের ক্ষমতায় আঁচড় লাগছে না বলে।

একদিন আপনাদেরকে টার্গেট করা হবে, নারী নেতৃত্ব দিয়েছে বলে আর অন্যরা তা মেনে নিয়েছেন বলে।  কোন সে অজানা কারণ, কোন সেই অজানা শক্তি যার হাতের ইশারা এতো শক্তিশালী যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না!

এই খুনিদের খুঁজে বের করা হোক। এই দেশকে পুরোপুরি মৃত বানানোর আগে এই হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু দেখতে চাই। রাষ্ট্রের সকল মানুষের বেঁচে থাকা সাংবিধানিক অধিকার। সেই হত্যাকে রাষ্ট্র পরিচালকদের প্রত্যক্ষ সমর্থন বা নিরাপত্তা না দিতে পারা সংবিধান লংঘন।

তাই মানব হত্যাকে কোনভাবেই তাদের কাজ দিয়ে জায়েজ করার প্রচেষ্টা বন্ধ হোক। মত-বিনিময় হোক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে। জীবন হত্যা সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের প্রকাশ্য হুমকির প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো হোক। অন লাইনে পেইজ খোলা হোক এই সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য। অপরাধীদের ধরার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠা গড়ে তোলা হোক। অপশক্তি সব দখল করার আগেই শুভবুদ্ধির উদয় হোক।