বাঙালী কন্ঠঃ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপিতে) আবাসন খাতের অবদান এখন ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া সারা দেশে মোট বাড়ি রয়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার।
এর মধ্যে নিজের বাড়ি আছে (বাড়ির মালিক) ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার পরিবারের, যা মোট বাড়ির ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এছাড়া ভাড়া বাড়িতে থাকে ৪৬ লাখ ২০ হাজার, বা ১২ দশমিক ২১ শতাংশ পরিবার। ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে বসবাস করে সাড়ে ৬ লাখ বা ১ দশমিক ৭১ শতাংশ পরিবার।
এছাড়া বিভিন্নভাবে (নিজের নয়, ভাড়াও নয়) বাড়িতে থাকে এক লাখ পরিবার। বড় বাড়ির চেয়ে ছোট বাড়ি বা বস্তির বাড়িতে ভাড়া বেশি দিতে হয়।
সব ধরনের মানুষের মাসিক আয়ের প্রায় অর্ধেক চলে যায় বাড়ি ভাড়ার পেছনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সার্ভে অন ওকুপেইড রেসিডেনসিয়াল হাউসেজ অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট সার্ভিসেস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন অডিটোরিয়ামে এ প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কুমার দাস এবং মাহমুদা আক্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল আহমেদ। বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার পরিসংখ্যান ব্যুরো। সরকারের নীতি-নির্ধারণে সঠিক তথ্য এবং উপাত্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন বিবিএসের কর্মীরা। আবাসন সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনটি সরকারের নীতি-নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার (৫ তলার ওপরে)। ৫ তলার নিচে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার। সেমিপাকা বাড়ি রয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার। কাঁচা বাড়ি ২ কোটি ৯ হাজার এবং ঝুপড়ি বাড়ি রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার। আবাসন খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভাড়া বাবদ আয় ছিল ৮১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা; যা পরের অর্থবছর বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।
এক বছরে এ খাতে মূল্য সংযোজন ৭০ হাজার ২০৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এই হিসাবে বাজার মূল্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বাসা ভাড়ার অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়েছে, বছরে ৩০০ বর্গফুটের নিচে যেসব বাসা রয়েছে সেগুলোর ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৯৬ দশমিক ১ টাকা পড়ে।
এছাড়া ৩শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ বর্গফুটের বাসা ভাড়া পড়ে ৫০ দশমিক ৫ টাকা, সাড়ে ৬শ’ থেকে ৯৯৯ বর্গফুটের বাসা ভাড়া পড়ে প্রতি বর্গফুট ৪৪ দশমিক ৬ টাকা এবং এক হাজার বর্গফুটের বাসার ভাড়া পড়ে প্রতি বর্গফুট ৭১ দশমিক ৯ টাকা।
আবাসন খাতে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৫ জন কাজে নিয়োজিত আছেন। শ্রমিকদের বেতন হিসাবে ৩১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য পাওনা বাবদ ৫৩৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দেশে মোট ৫৩ লাখ ২০ হাজার বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে; এসব ভবনে ৩১ দশমিক ২১ ভাগ মালিক নিজেই ব্যবহার করে থাকেন। পজেশন বিক্রি ২ দশমিক ১২ শতাংশ ভবনে।
আর ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভবন। অনাবাসিক ভবনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে; যা পরের বছর দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে সংস্কার ব্যয় বাদে এ খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন হয়েছে। ১১ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে পরের অর্থবছরে এর আকার দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকায়।
দেশে নির্মাণ খাতে ৩ হাজার ১৩২ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। যার ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ রিহ্যাব ও ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ) সদস্য। নির্মাণ খাতে মোট এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯২ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
এ খাতে মোট উৎপাদন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১৬ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, যা পরের বছর দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। একই সময়ে মূল্য সংযোজন ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা থেকে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬২৩ কোটি টাকায়।
আবাসিক, বাণিজ্যিক ও নির্মাণ মিলিয়ে ৩ উপখাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৪১ হাজার ৫৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন হয়েছে। তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৩১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক বছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিকাশ কুমার দাস বলেন, এ প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে- বাসার আকার যত বড় ভাড়া তুলনামূলক তত কম। এছাড়া ছোট বাসার ভাড়া গুনতে হচ্ছে বেশি।
সেই সঙ্গে বস্তিতে যারা থাকছেন তাদের আবাসিক সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও ভাড়া দিতে হচ্ছে বেশি। যে পরিবেশেই বাস করুক না কেন মানুষের আয়ের ৫০ ভাগ যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া দিতেই। যারা বাড়ির মালিক তারা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেন সেই পরিমাণ লাভ পাচ্ছেন না। এজন্য একটি নীতিমালার প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণা গায়েন বলেন, আমাদের জরিপে উঠে এসেছে ছোট বাসায় ভাড়া বেশি। অন্যদিকে বড় বাড়িতে তুলনামূলক ভাড়া কম। এছাড়া এখনও ভাড়া বাসার পরিমাণ কম, নিজের বসত বাড়ি এখন বেশি। ফুটপাতে যারা থাকেন তাদেরও বসত বাড়ির আওতায় আনতে হবে।