বাঙালী কন্ঠঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত সনাতন ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ শারদাঞ্জলী গীতা নিকেতনের কোমলমতি শিশুদের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। অর্থাভাবে ভবন দূরের কথা, কোনো ছাউনী বিশিষ্ট ঘর পর্যন্ত তৈরি করতে পারেনি উদ্যোক্তা। এ কারণে মেঘ দেখলেই ছুটির ঘণ্টা বাজে শারদাঞ্জলী গীতা নিকেতনের।
প্রায় এক বছর আগে উত্তর চাঁদশী সার্বজনীন রাধা-কৃষ্ণ ও কালী মন্দিরের সামনে স্থানীয় সমাজ সেবক প্রেমানন্দ ঘরামী ‘শারদাঞ্জলী গীতা নিকেতন’ নামে সনাতন ধর্মীয় স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শারদাঞ্জলী ফোরাম নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২০ খানা শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রদান করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। এইড নামে একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুল পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ এবং শিশু-কিশোরদের উৎসাহ প্রদানের জন্য মাঝে মাঝে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা হয়।
শুরুতে শিশু-কিশোররা এই স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করলেও এখন বয়স্করাও ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিচ্ছে সেখানে। বিনামূল্যে পাঠদান করায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে ওই স্কুলে। কিন্তু তাদের বসার জন্য নেই বেঞ্চ, কোনো আসবাবপত্রও। প্লাস্টিকের বস্তার ওপর বসে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করছে শিশু ও বয়স্করা।
স্থানীয়রা জানান, খোলা আকাশের নিচে হওয়ায় রোদ-বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হয়। বৃষ্টি শুরু হলে স্কুল ছুটি দিতে হয়।
বিনামূল্যে ওই স্কুলে পাঠদান করেন সুজন ঘরামী নামে এক যুবক। তিনি জানান, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিন বিকেলে দুই ঘণ্টা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাস এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কোমলমতি শিশুসহ বয়স্কদের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়ে থাকে স্কুলে। কিন্তু খোলা আকাশের নিচে হওয়ায় বৃষ্টি এলে অনেক সময় স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রেমানন্দ ঘরামী জানান, হিন্দু সমাজে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কোনো ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তারা অনেক সময় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ছোট থেকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা পেলে তারা অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকে। ধর্মের প্রতি দুর্বলতা থাকলে মাদকসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজ থেকে তারা দূরে থাকে। এমন ধারণা থেকেই স্কুলটি চালু করেন তিনি। তিনি গৃহ নির্মাণসহ স্কুলটি রক্ষায় সরকারি, বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, তিনি এই স্কুলটির খবর জানতেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন। স্কুলটি যারা চালায় শিক্ষক কিংবা পরিচালনায় যারা আছেন তারা যদি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসনে আবেদন করেন তাহলে জেলা প্রশাসক বিষয়টি যাচাই করে দেখবে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারি নীতিমালার আলোকে সহায়তা করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।