ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই বাড়িতে ৪৫০ বছর ধরে চলছে পূজা

দুর্গাপূজা! হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই পূজাকে হিন্দু শাস্ত্রে নারীশক্তির আরাধনা বলা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু বাঙ্গালীরা সবচেয়ে বেশি আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে এ উৎসব উদযাপন করে থাকে।
তবে আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের দেশে খুলনায় প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে একটি পরিবার ধারাবাহিকভাবে তাদের পূজা চালিয়ে এসেছে। আজও এই পূজায় তারা কোনো ছেদ পড়তে দেয়নি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক খুলনার সেই রায় পরিবারে পূজা সর্ম্পকে-

কীভাবে টিকিয়ে রাখলেন তাদের ঐতিহ্য?

যুগ যুগ ধরে থিম পূজা বহু প্রাচীন পরিবারের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। আধুনিকতার এই যুগেও পূজার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। আজো তাই বহু মানুষ পারিবারিক পূজা অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে আসছে। যেমন খুলনার বাগের হাটের রায় পরিবারের পূজার কথায় বলা যাক। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের অধিক সময় ধরে পরিবারটি তাদের পারিবরিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রয়েছেন।

রায় পরিবার কখন থেকে এই পূজা উদযাপন করেন?

নবাব সিরাজউদ্দৌলার মামা সরফরাজ খানের শাসনামল থেকে শুরু হওয়া এই পূজা রায় পরিবার আজো বজায় রেখেছেন। আট প্রজন্ম আগে রাম রায়ের আমল থেকে এই পূজা করা হয়। যা স্বাধীনতার পরেও বেশ কয়েক বছর ওখানেই টিকে ছিল। কিন্তু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে ১৯৬৪ সালে এক মুসলিম পরিবারের সঙ্গে তারা জমি বদল করেন।

পরবর্তীতে চলে আসেন হাবড়ায়। সেই থেকে এখানেই গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে খুলনার রায় পরিবার এই দুর্গোৎসব করে যাচ্ছে। যদিও রায় পরিবারের পরে হাবড়া ছেড়ে কসবায় চলে যায় কিন্তু পূজা করার স্থানটি একই জায়গায় রয়ে যায়।

খুলনার কোন স্থানে দুর্গাপুজা হয়?

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, হাবড়ার মোহনপুরে খুলনার মাটি দিয়ে এ দুর্গা মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই মণ্ডপের প্রতি বছর দুর্গাপূজা করা হয়।

পূজার বিশেষ আকর্ষণ

রায় পরিবারের পূজায় বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে সাত কোপে পাঁঠাবলি। এছাড়াও চালকুমড়া আর আখবলিই হয়। সপ্তমীতে সাত রকম, অষ্টমীতে আট রকম, নবমীতে নয় রকম পদ ভোগ রান্না হয়।

পূজার সময় পাঁঠার মাংস, পাঁচ রকমের মাছ, পোলাও, মালপোয়া, মাছের মধ্যে থাকে ইলিশ, কই, কাঁটা পোনা, চিংড়ি ও তরিতরকারিতে চারদিকে একেবারে এলাহি কাণ্ড শুরু হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর পর্রিবতন হলেও পূজার এ ধারাবাহিকতা যেন আবহমান নদীর মতো এগিয়ে চলছে নতুন প্রজন্মের সাথে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

এই বাড়িতে ৪৫০ বছর ধরে চলছে পূজা

আপডেট টাইম : ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০১৯

দুর্গাপূজা! হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই পূজাকে হিন্দু শাস্ত্রে নারীশক্তির আরাধনা বলা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু বাঙ্গালীরা সবচেয়ে বেশি আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে এ উৎসব উদযাপন করে থাকে।
তবে আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের দেশে খুলনায় প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে একটি পরিবার ধারাবাহিকভাবে তাদের পূজা চালিয়ে এসেছে। আজও এই পূজায় তারা কোনো ছেদ পড়তে দেয়নি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক খুলনার সেই রায় পরিবারে পূজা সর্ম্পকে-

কীভাবে টিকিয়ে রাখলেন তাদের ঐতিহ্য?

যুগ যুগ ধরে থিম পূজা বহু প্রাচীন পরিবারের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে। আধুনিকতার এই যুগেও পূজার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। আজো তাই বহু মানুষ পারিবারিক পূজা অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে আসছে। যেমন খুলনার বাগের হাটের রায় পরিবারের পূজার কথায় বলা যাক। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের অধিক সময় ধরে পরিবারটি তাদের পারিবরিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রয়েছেন।

রায় পরিবার কখন থেকে এই পূজা উদযাপন করেন?

নবাব সিরাজউদ্দৌলার মামা সরফরাজ খানের শাসনামল থেকে শুরু হওয়া এই পূজা রায় পরিবার আজো বজায় রেখেছেন। আট প্রজন্ম আগে রাম রায়ের আমল থেকে এই পূজা করা হয়। যা স্বাধীনতার পরেও বেশ কয়েক বছর ওখানেই টিকে ছিল। কিন্তু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে ১৯৬৪ সালে এক মুসলিম পরিবারের সঙ্গে তারা জমি বদল করেন।

পরবর্তীতে চলে আসেন হাবড়ায়। সেই থেকে এখানেই গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে খুলনার রায় পরিবার এই দুর্গোৎসব করে যাচ্ছে। যদিও রায় পরিবারের পরে হাবড়া ছেড়ে কসবায় চলে যায় কিন্তু পূজা করার স্থানটি একই জায়গায় রয়ে যায়।

খুলনার কোন স্থানে দুর্গাপুজা হয়?

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, হাবড়ার মোহনপুরে খুলনার মাটি দিয়ে এ দুর্গা মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই মণ্ডপের প্রতি বছর দুর্গাপূজা করা হয়।

পূজার বিশেষ আকর্ষণ

রায় পরিবারের পূজায় বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে সাত কোপে পাঁঠাবলি। এছাড়াও চালকুমড়া আর আখবলিই হয়। সপ্তমীতে সাত রকম, অষ্টমীতে আট রকম, নবমীতে নয় রকম পদ ভোগ রান্না হয়।

পূজার সময় পাঁঠার মাংস, পাঁচ রকমের মাছ, পোলাও, মালপোয়া, মাছের মধ্যে থাকে ইলিশ, কই, কাঁটা পোনা, চিংড়ি ও তরিতরকারিতে চারদিকে একেবারে এলাহি কাণ্ড শুরু হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর পর্রিবতন হলেও পূজার এ ধারাবাহিকতা যেন আবহমান নদীর মতো এগিয়ে চলছে নতুন প্রজন্মের সাথে।