ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষতির মুখে আগাম সবজি

বগুড়ার শেরপুরে ছোটফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। এ বছর আগাম সবজি চাষে নেমেছেন তিনি। প্রায় দুই মাস আগে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন ফুলকপির। জমিতে চারা রোপণের পর বেশ সতেজ হয়ে বেড়ে উঠেছিল। এখন গাছ থেকে তাঁর ভালো ফলন পাওয়ার কথা। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও রোদের তাপে এই গাছগুলো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই এক বিঘা জমিতে আগাম সবজি চাষে তাঁর ব্যয় হয়েছে অন্তত ২৭ হাজার টাকা। আশা করেছিলেন, তাঁর আয় হবে অন্তত ৮০ হাজার টাকা। এখন তাঁর চাষের ব্যয়ের টাকাও উঠবে না।

স্থানীয় পাঁচজন সবজিচাষি বলেন, অসময়ে বৃষ্টির কারণে তাঁরা আগাম সবজি চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এসব চাষের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ টমেটো ও মরিচের গাছও রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়েছেন তাঁরা। জমিতে ছিটানো হয়েছে কীটনাশক। কিন্তু তা তেমন কোনো কাজে আসেনি।

উপজেলার ছোটফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক নওশের আলী বলেন, খেতে যখন ফলন আসবে তখন শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে খেতের মধ্যে কিছু পানিও জমে। তবে পানি দীর্ঘ সময় থাকেনি। রোদের প্রচণ্ড তাপে দুই-তিন দিনের পর গাছগুলোর পাতা নিস্তেজহয়ে হেলে ও মুড়িয়ে যেতে থাকে। এসব গাছে তেমন ফলনও নেই। খেতেই পচে যাচ্ছে অনেক গাছ।

উপজেলার গাড়িদহ ও খামারকান্দি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আগাম চাষের বেশির ভাগ ফুলকপি ও বাঁধাকপিগাছ সতেজতা হারিয়েছে।

ছোটফুলবাড়ি গ্রামের মো. আল আমিন, বুলবুল ইসলামসহ ১০ জন কৃষক বলেন, গত বছর এই সময়ে আগাম চাষের ফুলকপি ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ও বাঁধাকপিও একই ওজনের হয়েছে। এ বছর এসব জমিতে ফলন নাই। যে কয়টা গাছে হয়েছে, তা–ও ৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের।

গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকালীন সবজি চাষ হবে ৪ হাজার ২৫০ একর জমিতে। ইতিমধ্যে কৃষক ৩ হাজার ৫৫০ একরে চাষে নেমেছেন। এ বছর কৃষক আগাম সবজি চাষ করেছেন ৮৫৪ একরে। এর মধ্যে বৃষ্টির পানিতে প্রায় ৮০ একর জমির সবজিখেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, উপজেলার গাড়িদহ, খামারকান্দি ইউনিয়নে সারা বছর সবজি চাষ করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া উপজেলার খানপুর, মির্জাপুর, সুঘাট ও সীমাবাড়ি ইউনিয়নের কিছু এলাকায় সবজি চাষ হচ্ছে। এ বছর শীতকালীন সবজি চাষে রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ পরিবার।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের গাড়িদহ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমের গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৃষ্টি গত বছরে কম ছিল। বৃষ্টির পর রোদের তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ওই সব খেতের গাছগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

উপজেলার কৃষি দপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মাসুদ আলম বলেন, যাঁরা আগাম সবজি চাষে নেমেছিলেন শুধু তাঁরাই অসময়ে বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। এতে অনেক কৃষক এই খেতগুলো ভেঙে নতুন করে একই রকমের চাষে নামছেন। এ কারণে উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্য অর্জন খুব বেশি ব্যাহত হবে না। তবে বৃষ্টিতে আগাম সবজিচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

শেরপুর পৌর শহরের বৈকাল বাজারের সবজি বিক্রেতা দুলাল সরকার বলেন, গত বছর এই সময়ে আগাম সবজিচাষিরা তাঁদের খেতে উৎপাদিত ফলন বাজারে তুলেছিলেন। এ বছর বৃষ্টিতে কৃষকের খেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে এ বছর স্থানীয় বাজারে আগাম শীতের সবজি অনেক কম।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন, যেসব আগাম চাষের খেতের সবজিগাছ নষ্ট হয়েছে, তা ভেঙে নতুন করে চাষে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি খেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি দ্রুত সরিয়ে দিতে ও গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে তাঁরা গ্রামে গ্রামে কৃষককে পরামর্শ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ক্ষতির মুখে আগাম সবজি

আপডেট টাইম : ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

বগুড়ার শেরপুরে ছোটফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। এ বছর আগাম সবজি চাষে নেমেছেন তিনি। প্রায় দুই মাস আগে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন ফুলকপির। জমিতে চারা রোপণের পর বেশ সতেজ হয়ে বেড়ে উঠেছিল। এখন গাছ থেকে তাঁর ভালো ফলন পাওয়ার কথা। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও রোদের তাপে এই গাছগুলো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই এক বিঘা জমিতে আগাম সবজি চাষে তাঁর ব্যয় হয়েছে অন্তত ২৭ হাজার টাকা। আশা করেছিলেন, তাঁর আয় হবে অন্তত ৮০ হাজার টাকা। এখন তাঁর চাষের ব্যয়ের টাকাও উঠবে না।

স্থানীয় পাঁচজন সবজিচাষি বলেন, অসময়ে বৃষ্টির কারণে তাঁরা আগাম সবজি চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এসব চাষের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ টমেটো ও মরিচের গাছও রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়েছেন তাঁরা। জমিতে ছিটানো হয়েছে কীটনাশক। কিন্তু তা তেমন কোনো কাজে আসেনি।

উপজেলার ছোটফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক নওশের আলী বলেন, খেতে যখন ফলন আসবে তখন শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে খেতের মধ্যে কিছু পানিও জমে। তবে পানি দীর্ঘ সময় থাকেনি। রোদের প্রচণ্ড তাপে দুই-তিন দিনের পর গাছগুলোর পাতা নিস্তেজহয়ে হেলে ও মুড়িয়ে যেতে থাকে। এসব গাছে তেমন ফলনও নেই। খেতেই পচে যাচ্ছে অনেক গাছ।

উপজেলার গাড়িদহ ও খামারকান্দি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আগাম চাষের বেশির ভাগ ফুলকপি ও বাঁধাকপিগাছ সতেজতা হারিয়েছে।

ছোটফুলবাড়ি গ্রামের মো. আল আমিন, বুলবুল ইসলামসহ ১০ জন কৃষক বলেন, গত বছর এই সময়ে আগাম চাষের ফুলকপি ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ও বাঁধাকপিও একই ওজনের হয়েছে। এ বছর এসব জমিতে ফলন নাই। যে কয়টা গাছে হয়েছে, তা–ও ৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের।

গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর শীতকালীন সবজি চাষ হবে ৪ হাজার ২৫০ একর জমিতে। ইতিমধ্যে কৃষক ৩ হাজার ৫৫০ একরে চাষে নেমেছেন। এ বছর কৃষক আগাম সবজি চাষ করেছেন ৮৫৪ একরে। এর মধ্যে বৃষ্টির পানিতে প্রায় ৮০ একর জমির সবজিখেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, উপজেলার গাড়িদহ, খামারকান্দি ইউনিয়নে সারা বছর সবজি চাষ করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া উপজেলার খানপুর, মির্জাপুর, সুঘাট ও সীমাবাড়ি ইউনিয়নের কিছু এলাকায় সবজি চাষ হচ্ছে। এ বছর শীতকালীন সবজি চাষে রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ পরিবার।

উপজেলা কৃষি দপ্তরের গাড়িদহ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমের গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৃষ্টি গত বছরে কম ছিল। বৃষ্টির পর রোদের তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ওই সব খেতের গাছগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

উপজেলার কৃষি দপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মাসুদ আলম বলেন, যাঁরা আগাম সবজি চাষে নেমেছিলেন শুধু তাঁরাই অসময়ে বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। এতে অনেক কৃষক এই খেতগুলো ভেঙে নতুন করে একই রকমের চাষে নামছেন। এ কারণে উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্য অর্জন খুব বেশি ব্যাহত হবে না। তবে বৃষ্টিতে আগাম সবজিচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

শেরপুর পৌর শহরের বৈকাল বাজারের সবজি বিক্রেতা দুলাল সরকার বলেন, গত বছর এই সময়ে আগাম সবজিচাষিরা তাঁদের খেতে উৎপাদিত ফলন বাজারে তুলেছিলেন। এ বছর বৃষ্টিতে কৃষকের খেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে এ বছর স্থানীয় বাজারে আগাম শীতের সবজি অনেক কম।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন, যেসব আগাম চাষের খেতের সবজিগাছ নষ্ট হয়েছে, তা ভেঙে নতুন করে চাষে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি খেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি দ্রুত সরিয়ে দিতে ও গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে তাঁরা গ্রামে গ্রামে কৃষককে পরামর্শ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন।