ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা কেমন ছিল

বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রায় তিন হাজার বছর আগে পৃথিবীতে প্রায় ১৮টি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার মধ্যে গ্রিক সভ্যতার স্থান প্রথম। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের জনসংখ্যা ছিল ৩ লাখ। এর মধ্যে ১ লাখ ছিল কৃতদাস, অর্ধেক নারী। গ্রিকরা বিশ্বাস করতো নারীদের আত্মা নেই। তাদের কোন কথা কথা নয়। সুতরাং থাকলো ১ লাখ পুরুষ। আবার ১ লাখ থেকে যদি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় শিশু-কিশোর, থাকলো ৫০ হাজার লোক, বহিরাগত ৫০ হাজার লোক। মাত্র ২০০ বছরে সৃষ্টি হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সভ্যতা গ্রিক সভ্যতা। আর গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল প্রেরণা-স্বপ্ন দিয়ে।

মিনিয়ান প্রভুরা ভূমধ্যসাগরের এ অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের বিশাল সাম্রাজ্য। ক্রিস্টান, মাইসেনিয়ান, জেরিয়ান প্রভৃতি সংস্কৃতির হাতে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে গ্রিক সভ্যতা। অবস্থানগত ও অন্যান্য সুবিধা থাকার কারণে এথেন্স হয়ে ওঠে গ্রিসের অন্যতম শহর। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গণতন্ত্রের জন্ম এথেন্স নগরীতে।

greec-cover.jpg

জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাজ্য পরিচালনা করতেন। নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করত না শাস্তিস্বরূপ তাদের মুখে লাল রং দেওয়া হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১-৪৫৫ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করেন প্রেরিক্লিস। তার শাসনামলকে স্বর্ণযুগ বলা হয়। এ সময়ে এথেন্সের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়। এ সময় নির্মিত হয় ইতিহাসের প্রসিদ্ধ পার্থন মন্দির। সেই যুগের পরপর জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক, চিন্তাবিদ জন্মগ্রহণ করেন গ্রিসে।

সাহিত্যে আবির্ভাব হয় এস্কাইলাস, সফোক্লিস, ইউরিপিডিসের মতো যুগশ্রেষ্ঠদের। ভাস্কর্যে ফিডিয়স, ইতিহাসে থুকিডিডেস, হেরোডেটাস, দর্শনে পারমেনিডেস, জোনু এবং জগদ্বিখ্যাত সক্রেটিস আবির্ভুত হন সে যুগে। সক্রেটিসের যোগ্য শিষ্য প্লেটো তারই দর্শনের ভীতের ওপর গড়ে তোলেন আদর্শ রিপাবলিকের থিসিস। প্রেরিক্লিসের লেখা বই রিপাবলিক এখনো পৃথিবীজুড়ে পঠিত হয়।

greec-cover.jpg

প্রেরিক্লিস এথেন্স শাসন করতেন। তখন ১৮ বছরের ছেলেরা রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। তারা রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সবার সামনে প্রতিজ্ঞা করতো এই মর্মে, আমার জন্মের সময় যে এথেন্স পেয়েছি; মৃত্যুর আগে আরও উন্নত এথেন্স পৃথিবীর বুকে রেখে যেতে হবে। এটা ছিল তাদের মূল চাবিকাঠি। যারা গ্রিসে অবস্থান করছেন; তারা গৌরবের স্থানে বাস করছেন। গ্রিকদের রয়েছে একটি মহান আত্মা। সময়ের প্রেক্ষাপটে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম আন্দোলন করেছিল। এজন্য বলা হয়, গ্রিস গণতন্ত্র ও নারীমুক্তির প্রতিচ্ছবি।

ইউনেস্কো গ্রিসের পার্থেননকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। এথেন্স শহরের মাঝখানে আক্রোপলিস পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই পার্থেনন আসলে একটি প্রাচীন মন্দির। ডরিক শিল্পীতে তৈরি ৩১ মিটার চওড়া ৭০ মিটার লম্বা এবং ২০ মিটার উঁচু এই বিশাল মন্দির পুরোটা মার্বেল পাথরের। ৪৬টি বিশাল স্তম্ভের উপর ছিল ছাদ, যা বর্তমানে নেই। মন্দিরের মাঝখানে ছিল হাতির দাঁত, মূল্যবান কাঠ এবং স্বর্ণনির্মিত ১২ মিটার উঁচু এথেনা দেবীর মূর্তি। সেই মূর্তি এখন নেই।

এথেনার নামে শহরের নাম এথেন্স। এথেনা ছিলেন বিদ্যা, বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিকতার দেবী। তবে প্রয়োজনে যুদ্ধ করতেন সমান দক্ষতায়। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রিস বিভিন্ন বিদেশি রাজ্যের অধীনে ছিল। তাই পার্থেনন কখনো গির্জা, কখনো মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গ্রিস যখন তুরস্কের অধীনে ছিল তখন তুর্কি সেনারা পার্থেননকে দূর্গ হিসেবে ব্যবহার করে। ১৬৮৭ সালে যুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণদের গুদামে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়। ফলে পার্থেননের অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসক পার্থেননের অনেক ভাস্কর্য ও মূর্তি ইংরেজ রাজদূত লর্ড এলহিলের কছে বিক্রি করে দেন। লর্ড এলহিল এগুলো জাহাজে করে নিয়ে যান। বৃটিশ সরকার তার কাছ থেকে সেসব ভাস্কর্য কিনে বৃটিশ মিউজিয়ামে রেখে দেয়। তখন থেকে এগুলো বৃটিশ মিউজিয়ামে আছে। এলগিন মার্বেলস নামে খ্যাত। গ্রিস সরকার অনেক চেষ্টা করে সেগুলো আজ পর্যন্ত ফেরত আনতে পারেনি। সেগুলো দেখতে কেমন ছিল, তা বোঝার জন্য কিছু মূর্তির নকল বানিয়ে বসানো হয়েছে।

greec-cover.jpg

মন্দিরের পাশে রয়েছে দুটি প্রাচীন থিয়েটার। আক্রোপলিস পাহাড়ের পাদদেশে নবনির্মিত মিউজিয়াম একটি বড় আকর্ষণ। আধুনিক শৈলীতে কাচ ও স্টিলে নির্মিত এ মিউজিয়ামের বিভিন্ন তলায় গ্রিক সভ্যতার বিভিন্ন সময়ের মূর্তি, ভাস্কর্য, খোদাইকৃত শিল্প ইত্যাদি সাজানো। গ্রিক সভ্যতার অনেক জিনিস পৃথিবীর অন্যান্য মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। পার্থেনন মন্দির এবং সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলো নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩২ থেকে ৪৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। নকশা এঁকেছিলেন ইকতিপোস এবং কালিকার্তেস নামের দুজন মহান স্থপতি। ২০ হাজার দক্ষ প্রকৌশলীর মেধা এবং ৪ লাখ ক্রীদাসের শ্রমের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে গ্রিসের স্বপ্নসৌধ। শুধু আবেগ দিয়ে এরকম শিল্প নির্মাণ করা যায় না। চাই মেধা এবং শারীরিক সামর্থ। তাই তো পরবর্তীতে পার্থেননকে সে যুগে মিলনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ববাসী।

গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বাকাকটো শহর। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের বেস্টনি, রাজার বাড়ি, ১৪৯৯ সালে নির্মিত প্রাচীন মসজিদ। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গির্জা ও ভূমধ্যসাগরের অপরূপ সৌন্দর্য। ৪৩ নাফপাক্টোর আশ্রয়স্থল নেপাক্টোসের বন্দর সবসময় শহরটির জন্য সমৃদ্ধির উৎস ছিল। ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে করিনথয়ান গলফের প্রবেশদ্বারে লেপান্ডো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যখন ভেনিস জেনোভাতে যোগদানের সময় স্পেন, পোপ ও অ্যালিসগুলি অটোমান নৌবহরকে পরাজিত করে। বন্দর প্রতিরক্ষা সংরক্ষণ করা দেয়ালগুলো মধ্যযুগীয় প্রতিরক্ষা স্থাপত্যের দর্শনীয় উদাহরণ। দুটো টাওয়ারের প্রবেশদ্বারটি ভাসিয়ে দেয়। বন্দরের দেয়ালগুলো খিলান যুদ্ধ সমুদ্র গেইটটি ভেনেটিয়ান যুগের অন্তর্গত। অটোমানরা প্রাচীরগুলোকে শক্তিশালী করে দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯ শতকের মধ্যে একটি কাস্টমাস অফিস পশ্চিমা কোয়ে পরিচালিত ১৮২১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়বা জি।

অ্যানোমোগিযানসিসের মূর্তি দাঁড়িয়েছে, যারা ন্যাফক্টোর বন্দরে অটোমান নৌপথে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। ন্যাফপাটোস বন্দরে সর্বনিম্ন ৫টি ক্যাসল। মহাসাগরকে পশ্চিমারা শহরটির প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করত। আশপাশের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে এনভিভি দেরি টাওয়ার ম্যানশন ১৪৯৯ সালে সুলতান বায়েজিদ দ্বারা ফেথিয়ে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে বাইজেন্টাইন গির্জা, সমুদ্র সমান্তরাল, উঁচু পাহাড়ের উপর ভিজির মসজিদ, তেজভেলা ঘর, অটোমান ফাউন্ডেশন, অটোমান ঝরনা, ঘড়ির টাওয়ার, রাজার বাড়িসহ নানা স্থাপত্য। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা কেমন ছিল

আপডেট টাইম : ০৪:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রায় তিন হাজার বছর আগে পৃথিবীতে প্রায় ১৮টি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার মধ্যে গ্রিক সভ্যতার স্থান প্রথম। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের জনসংখ্যা ছিল ৩ লাখ। এর মধ্যে ১ লাখ ছিল কৃতদাস, অর্ধেক নারী। গ্রিকরা বিশ্বাস করতো নারীদের আত্মা নেই। তাদের কোন কথা কথা নয়। সুতরাং থাকলো ১ লাখ পুরুষ। আবার ১ লাখ থেকে যদি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় শিশু-কিশোর, থাকলো ৫০ হাজার লোক, বহিরাগত ৫০ হাজার লোক। মাত্র ২০০ বছরে সৃষ্টি হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সভ্যতা গ্রিক সভ্যতা। আর গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল প্রেরণা-স্বপ্ন দিয়ে।

মিনিয়ান প্রভুরা ভূমধ্যসাগরের এ অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের বিশাল সাম্রাজ্য। ক্রিস্টান, মাইসেনিয়ান, জেরিয়ান প্রভৃতি সংস্কৃতির হাতে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে গ্রিক সভ্যতা। অবস্থানগত ও অন্যান্য সুবিধা থাকার কারণে এথেন্স হয়ে ওঠে গ্রিসের অন্যতম শহর। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গণতন্ত্রের জন্ম এথেন্স নগরীতে।

greec-cover.jpg

জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাজ্য পরিচালনা করতেন। নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করত না শাস্তিস্বরূপ তাদের মুখে লাল রং দেওয়া হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১-৪৫৫ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করেন প্রেরিক্লিস। তার শাসনামলকে স্বর্ণযুগ বলা হয়। এ সময়ে এথেন্সের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়। এ সময় নির্মিত হয় ইতিহাসের প্রসিদ্ধ পার্থন মন্দির। সেই যুগের পরপর জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক, চিন্তাবিদ জন্মগ্রহণ করেন গ্রিসে।

সাহিত্যে আবির্ভাব হয় এস্কাইলাস, সফোক্লিস, ইউরিপিডিসের মতো যুগশ্রেষ্ঠদের। ভাস্কর্যে ফিডিয়স, ইতিহাসে থুকিডিডেস, হেরোডেটাস, দর্শনে পারমেনিডেস, জোনু এবং জগদ্বিখ্যাত সক্রেটিস আবির্ভুত হন সে যুগে। সক্রেটিসের যোগ্য শিষ্য প্লেটো তারই দর্শনের ভীতের ওপর গড়ে তোলেন আদর্শ রিপাবলিকের থিসিস। প্রেরিক্লিসের লেখা বই রিপাবলিক এখনো পৃথিবীজুড়ে পঠিত হয়।

greec-cover.jpg

প্রেরিক্লিস এথেন্স শাসন করতেন। তখন ১৮ বছরের ছেলেরা রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। তারা রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সবার সামনে প্রতিজ্ঞা করতো এই মর্মে, আমার জন্মের সময় যে এথেন্স পেয়েছি; মৃত্যুর আগে আরও উন্নত এথেন্স পৃথিবীর বুকে রেখে যেতে হবে। এটা ছিল তাদের মূল চাবিকাঠি। যারা গ্রিসে অবস্থান করছেন; তারা গৌরবের স্থানে বাস করছেন। গ্রিকদের রয়েছে একটি মহান আত্মা। সময়ের প্রেক্ষাপটে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম আন্দোলন করেছিল। এজন্য বলা হয়, গ্রিস গণতন্ত্র ও নারীমুক্তির প্রতিচ্ছবি।

ইউনেস্কো গ্রিসের পার্থেননকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। এথেন্স শহরের মাঝখানে আক্রোপলিস পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই পার্থেনন আসলে একটি প্রাচীন মন্দির। ডরিক শিল্পীতে তৈরি ৩১ মিটার চওড়া ৭০ মিটার লম্বা এবং ২০ মিটার উঁচু এই বিশাল মন্দির পুরোটা মার্বেল পাথরের। ৪৬টি বিশাল স্তম্ভের উপর ছিল ছাদ, যা বর্তমানে নেই। মন্দিরের মাঝখানে ছিল হাতির দাঁত, মূল্যবান কাঠ এবং স্বর্ণনির্মিত ১২ মিটার উঁচু এথেনা দেবীর মূর্তি। সেই মূর্তি এখন নেই।

এথেনার নামে শহরের নাম এথেন্স। এথেনা ছিলেন বিদ্যা, বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিকতার দেবী। তবে প্রয়োজনে যুদ্ধ করতেন সমান দক্ষতায়। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রিস বিভিন্ন বিদেশি রাজ্যের অধীনে ছিল। তাই পার্থেনন কখনো গির্জা, কখনো মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গ্রিস যখন তুরস্কের অধীনে ছিল তখন তুর্কি সেনারা পার্থেননকে দূর্গ হিসেবে ব্যবহার করে। ১৬৮৭ সালে যুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণদের গুদামে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়। ফলে পার্থেননের অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসক পার্থেননের অনেক ভাস্কর্য ও মূর্তি ইংরেজ রাজদূত লর্ড এলহিলের কছে বিক্রি করে দেন। লর্ড এলহিল এগুলো জাহাজে করে নিয়ে যান। বৃটিশ সরকার তার কাছ থেকে সেসব ভাস্কর্য কিনে বৃটিশ মিউজিয়ামে রেখে দেয়। তখন থেকে এগুলো বৃটিশ মিউজিয়ামে আছে। এলগিন মার্বেলস নামে খ্যাত। গ্রিস সরকার অনেক চেষ্টা করে সেগুলো আজ পর্যন্ত ফেরত আনতে পারেনি। সেগুলো দেখতে কেমন ছিল, তা বোঝার জন্য কিছু মূর্তির নকল বানিয়ে বসানো হয়েছে।

greec-cover.jpg

মন্দিরের পাশে রয়েছে দুটি প্রাচীন থিয়েটার। আক্রোপলিস পাহাড়ের পাদদেশে নবনির্মিত মিউজিয়াম একটি বড় আকর্ষণ। আধুনিক শৈলীতে কাচ ও স্টিলে নির্মিত এ মিউজিয়ামের বিভিন্ন তলায় গ্রিক সভ্যতার বিভিন্ন সময়ের মূর্তি, ভাস্কর্য, খোদাইকৃত শিল্প ইত্যাদি সাজানো। গ্রিক সভ্যতার অনেক জিনিস পৃথিবীর অন্যান্য মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। পার্থেনন মন্দির এবং সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলো নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩২ থেকে ৪৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। নকশা এঁকেছিলেন ইকতিপোস এবং কালিকার্তেস নামের দুজন মহান স্থপতি। ২০ হাজার দক্ষ প্রকৌশলীর মেধা এবং ৪ লাখ ক্রীদাসের শ্রমের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে গ্রিসের স্বপ্নসৌধ। শুধু আবেগ দিয়ে এরকম শিল্প নির্মাণ করা যায় না। চাই মেধা এবং শারীরিক সামর্থ। তাই তো পরবর্তীতে পার্থেননকে সে যুগে মিলনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ববাসী।

গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বাকাকটো শহর। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের বেস্টনি, রাজার বাড়ি, ১৪৯৯ সালে নির্মিত প্রাচীন মসজিদ। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গির্জা ও ভূমধ্যসাগরের অপরূপ সৌন্দর্য। ৪৩ নাফপাক্টোর আশ্রয়স্থল নেপাক্টোসের বন্দর সবসময় শহরটির জন্য সমৃদ্ধির উৎস ছিল। ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে করিনথয়ান গলফের প্রবেশদ্বারে লেপান্ডো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যখন ভেনিস জেনোভাতে যোগদানের সময় স্পেন, পোপ ও অ্যালিসগুলি অটোমান নৌবহরকে পরাজিত করে। বন্দর প্রতিরক্ষা সংরক্ষণ করা দেয়ালগুলো মধ্যযুগীয় প্রতিরক্ষা স্থাপত্যের দর্শনীয় উদাহরণ। দুটো টাওয়ারের প্রবেশদ্বারটি ভাসিয়ে দেয়। বন্দরের দেয়ালগুলো খিলান যুদ্ধ সমুদ্র গেইটটি ভেনেটিয়ান যুগের অন্তর্গত। অটোমানরা প্রাচীরগুলোকে শক্তিশালী করে দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯ শতকের মধ্যে একটি কাস্টমাস অফিস পশ্চিমা কোয়ে পরিচালিত ১৮২১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়বা জি।

অ্যানোমোগিযানসিসের মূর্তি দাঁড়িয়েছে, যারা ন্যাফক্টোর বন্দরে অটোমান নৌপথে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। ন্যাফপাটোস বন্দরে সর্বনিম্ন ৫টি ক্যাসল। মহাসাগরকে পশ্চিমারা শহরটির প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করত। আশপাশের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে এনভিভি দেরি টাওয়ার ম্যানশন ১৪৯৯ সালে সুলতান বায়েজিদ দ্বারা ফেথিয়ে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে বাইজেন্টাইন গির্জা, সমুদ্র সমান্তরাল, উঁচু পাহাড়ের উপর ভিজির মসজিদ, তেজভেলা ঘর, অটোমান ফাউন্ডেশন, অটোমান ঝরনা, ঘড়ির টাওয়ার, রাজার বাড়িসহ নানা স্থাপত্য। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।