রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর অবস্থার উন্নতিতে প্রতিবছর সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ঢালছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বরং আর্থিক সূচকগুলোর ক্রমেই আরও অবনতি হয়েছে। মূলত নানা অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতি ব্যাংকগুলোকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, কোনোভাবেই উত্তরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ নিয়েও গ্রাহকরা কিস্তি পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলো নতুন সঙ্কটে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র মতে, ব্যাংক ব্যবস্থায় ৫০০ কোটি টাকা বা তার অধিক ঋণ রয়েছে, এমন মেয়াদি গ্রাহক সর্বোচ্চ ১২ বছরের জন্য এবং নিয়মিত গ্রাহককে সর্বোচ্চ ছয় বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু সময় মতো ঋণের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় সেসব ঋণ আবারও ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিবছর সরকার রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। গত তিন বছরে সরকারি ছয় ব্যাংকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংককে ২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা ও বেসিক ব্যাংককে ২ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা জোগান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাংকটির অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। সবশেষ তথ্য অনুসারে রাষ্ট্রীয় খাতের পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণেও ব্যাংকগুলো সরকারের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়মের দায় মেটানো হচ্ছে জনগণের অর্থ দিয়ে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সকালের খবরকে বলেন, রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো ভালো চলছে না। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপিদের কাছ থেকে পাওনা আদায় করে নিজেদেরই চলার চেষ্টা করতে হবে। না হলে এক সময় সরকার এভাবে টাকা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে সরকার বহু টাকা দিয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারণ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এবারও এই অর্থ দেওয়া হলে তা আগের মতোই লুটপাট হয়ে যাবে। আর এভাবে টাকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাংকগুলোর আগের নানা জালিয়াতি চাপা পড়ে যাবে। ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে বড় ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে গত বছর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। তবে ঋণের ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ না করে যে ব্যক্তি ঋণ নিচ্ছে তাকেও জবাবদিহিতার জায়গায় দাঁড় করাতে হবে। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের লোকসানি শাখাও বেড়ে গেছে। এমনকি শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ আদায়ও কমেছে। সম্প্রতি এক ব্যাংকে ফোর্স লোনের হার বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন গভর্নর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকের ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, অগ্রণীর ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রূপালীর ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও জনতার ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বিপুল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দমানের ঋণ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণও করতে হচ্ছে বেশি। ফলে ডিসেম্বর শেষে তিনটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এগুলো হল সোনালী, বেসিক ও রূপালী ব্যাংক। গত বছর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৫ সাল শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের ৬ ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ২২২টি, যা গত বছর শেষে দাঁড়িয়েছে ৪৯৩টিতে। অর্থাত্ গত বছর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের মোট ৯৩৫টি শাখার মধ্যে ৯৩৪টি, রূপালীর ৫৬২টি শাখার মধ্যে ৫০৬টি, জনতার ৯০৫টি শাখার মধ্যে ৭২১টি ও সোনালীর ১২০৯টি শাখার মধ্যে ৭৬০টি শাখা অটোমেশনের আওতায় এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট নয়। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ অতিমাত্রায় রয়েছে। কয়েকটির লোকসানি শাখা বেড়েছে। তাই এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও লোকসানি শাখা কমিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে নতুন ঋণ বিতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ শিরোনাম :
চোখের সাধারণ কিছু সমস্যায় করণীয়
উপদেষ্টাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করা হবে
টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে ফাঁস লেগে শিশুর মৃত্যু
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি কারাগারে
এবার ১০অন১০ স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ল ওয়ালটন
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দাম কমছে
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েদের বড় জয়
সপ্তাহে সাত দিনেই চলবে মেট্রোরেল
অল্প আমলে বেশি প্রতিদান
নেতানিয়াহুকে হত্যায় ইসরায়েলিকে নিয়োগ ইরানের! সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দুরবস্থা কাটছে না: লুটপাটের দায় মেটানো হচ্ছে জনগণের অর্থ দিয়ে
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৬:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০১৭
- 565
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ