বাঙ্গালী কন্ঠ ডেস্কঃ বিরিয়ানি যা প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা দখল করে আছে। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে কেন বিরিয়ানির হাঁড়ি লাল কাপড়ে ঢাকা থাকে? চলুন আজ জেনে নেয়া যাক এর পিছনের রহস্য। যা আপনাকে অবাক করে দিবে নিমিষেই।
মুঘলদের হাত ধরে বিরিয়ানি এ উপমহাদেশে আসে। মুঘলরা প্রথমে ভারতে আসে। বিরিয়ানির প্রচলন ভারতেই শুরু হয় সবার আগে। মুঘলরা বাংলায় আসলে তার সঙ্গে মুঘলীয় বিরিয়ানিও জায়গা করে নেয় বাঙালিদের খাবারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পুরান ঢাকা বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিরিয়ানির দোকান। এখন আপনার বাসার গলির মুখের দোকানে বিরিয়ানি পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি কি কখনো খেয়াল করে দেখেছেন বিরিয়ানির পাতিল লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে।
এই বিরিয়ানির পাতিলগুলোকে দুর থেকে দেখলেও চেনা যায়। মূলত এগুলো সিগন্যাল। পাতিলগুলো যে বিরিয়ানির তা বুঝাতেই মূলত লাল কাপড় দিয়ে পাতিলগুলোকে বেধে রাখা হয়। তবে লাল কাপড় বেধে রাখার আরো কারণ আছে।
মানুষের ভাষার মতো রঙয়েরও কিন্তু ভাষা আছে। আপনার চিন্তায় কিন্তু রঙ প্রভাব রাখে। তেমনি পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই রঙয়ের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার রয়েছে। পতাকাগুলো দেখুন, বেশির ভাগ ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর পতাকার রঙ সবুজ ও সাদা। কারণ সবুজকে শান্তি আর সাদাকে স্বাচ্ছন্দতা ও শুদ্ধতার প্রতীক বলে মানা হয়। তেমনই লাল রঙয়ের ব্যবহার একেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন। কোনো দেশে লাল শৌর্য, আক্রমণ, বিপদ অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন, যুদ্ধে লাল নিশানা সৈন্যদের নির্দেশনা দান করত শত্রুর মোকাবিলায়। আবার ট্রেনের বা রাস্তার সিগনাল লাল। তবে লাল রঙকে সাধারণত ধরা হয় সৌভাগ্য, উষ্ণতার, আনন্দ-উৎসব ও ভালবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে।
গোড়ার দিকের মুঘল শাসকরা ছিলেন পারস্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। তারা তাদের জীবনে এই ধারা অনুকরণ করতেন। সম্রাট হুমায়ুন হলেন এর পথপ্রদর্শক। কারণ তিনি যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট সেই লালগালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনাই দিয়েছিলেন। খাদ্য পরিবেশনে দরবারি রীতিগুলোতে বিশেষত্ব, রুপালি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় এবং ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে নিয়ে আসা হতো। যা মুঘলরাও তাদের দরবারে এ রীতি চালু করেন। শুধু তাই নয় সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য ছিল লাল পাগড়ির ব্যবস্থা। সেখান থেকেই মূলত বিরিয়ানির পাতিলে লাল কাপড় বেধে রাখার রীতি এখনো চলে আসছে।