ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল শিফা হাসপাতালে রোগী-নবজাতকদের ভাগ্যে কী ঘটছে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় টানা ৪১ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ইতিমধ্যে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজায় হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। এসবের মধ্যে মসজিদ, গির্জা, স্কুল চার্চ ও হাসপাতালও আছে। ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজার অনেক হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

তেমনই একটি হাসপাতাল আল-শিফা। হাসপাতালটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে গতকাল ইসরায়েলের সেনারা অভিযান চালিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরে গতরাতে সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা কঠিন। তবে কয়েক দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এরপর এলাকাটি অন্ধকারে তলিয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীআইডিএফ জানিয়েছে, তারা আল শিফা হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে অভিযান চালিয়েছে। ওই অভিযানের সময় সেখানে থাকা বিবিসির একজন সংবাদদাতা কমান্ডোদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের খবর নিশ্চিত করেছিলেন।

এরপর সৈন্যরা প্রতিটি কক্ষে গিয়ে রোগী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তরুণদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির জন্য পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর সেনাদের সেখান থেকে প্রত্যাহারের খবর পায় বিবিসি।

এরপর বুধবার সন্ধ্যায় আইডিএফ অস্ত্রশস্ত্রের একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করে, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে তারা এগুলো উদ্ধার করেছে। ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইসরায়েল বারবার হামাসকে ওই হাসপাতালের নিচে টানেল নেটওয়ার্কে একটি কমান্ড সেন্টার পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। এ দাবিটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যও সমর্থন করছে। তবে হামাস বরাবর এটি অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকা লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বারের মতো ইসরায়েল গাজা শহরে ২৫ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করার জন্য রাফাহ অতিক্রম করার অনুমতি দিয়েছে।

এ ছাড়া ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলার সময় যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের কয়েকজনকে মুক্তির জন্য হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাতার মধ্যস্থতা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ‘অধিকতর মানবিক যুদ্ধবিরতি’র জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরোধী দলের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়েছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে।

আল শিফা হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মারওয়ান আবু সাদা বিবিসি আরবি বিভাগের ইথার সালাবিকে ফোনে জানিয়েছেন, ৩৯ নবজাতকের মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই মারা গেছে। এখন যারা বেঁচে আছে তাদের আসলে কোনো অভিভাবক বেঁচে নেই কিংবা যুদ্ধের এই তাণ্ডবের মধ্যে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের গোলাবর্ষণের পর দুটি শিশুকে একেবারেই একা পাওয়া যায়। আর চার শিশুর জন্ম হয়েছিল তাদের মায়েদের মৃত্যুর পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। তেল সংকটের কারণে শিশুগুলোকে ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে হৃদরোগ বিভাগের নবজাতক ইউনিটে রাখা হয়েছে বলে জানান সাদা।

সেখানে একটি বেডে ৮/১০টি শিশুকে রাখা হয়েছে এবং তাদের উষ্ণতার জন্য ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। বাবার নাম জানা গেলে শিশুর হাতে ট্যাগে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে উল্লেখ করা হচ্ছে। পানির স্বল্পতার কারণে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আশংকা, অপরিচ্ছন্ন অক্সিজেন টিউবের কারণে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ থেকে পচন তৈরি হতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আল শিফা হাসপাতালে রোগী-নবজাতকদের ভাগ্যে কী ঘটছে

আপডেট টাইম : ১২:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় টানা ৪১ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ইতিমধ্যে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজায় হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। এসবের মধ্যে মসজিদ, গির্জা, স্কুল চার্চ ও হাসপাতালও আছে। ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজার অনেক হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

তেমনই একটি হাসপাতাল আল-শিফা। হাসপাতালটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে গতকাল ইসরায়েলের সেনারা অভিযান চালিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরে গতরাতে সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা কঠিন। তবে কয়েক দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এরপর এলাকাটি অন্ধকারে তলিয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীআইডিএফ জানিয়েছে, তারা আল শিফা হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে অভিযান চালিয়েছে। ওই অভিযানের সময় সেখানে থাকা বিবিসির একজন সংবাদদাতা কমান্ডোদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের খবর নিশ্চিত করেছিলেন।

এরপর সৈন্যরা প্রতিটি কক্ষে গিয়ে রোগী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তরুণদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির জন্য পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর সেনাদের সেখান থেকে প্রত্যাহারের খবর পায় বিবিসি।

এরপর বুধবার সন্ধ্যায় আইডিএফ অস্ত্রশস্ত্রের একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করে, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে তারা এগুলো উদ্ধার করেছে। ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইসরায়েল বারবার হামাসকে ওই হাসপাতালের নিচে টানেল নেটওয়ার্কে একটি কমান্ড সেন্টার পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। এ দাবিটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যও সমর্থন করছে। তবে হামাস বরাবর এটি অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকা লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বারের মতো ইসরায়েল গাজা শহরে ২৫ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করার জন্য রাফাহ অতিক্রম করার অনুমতি দিয়েছে।

এ ছাড়া ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলার সময় যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের কয়েকজনকে মুক্তির জন্য হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাতার মধ্যস্থতা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ‘অধিকতর মানবিক যুদ্ধবিরতি’র জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরোধী দলের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়েছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে।

আল শিফা হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মারওয়ান আবু সাদা বিবিসি আরবি বিভাগের ইথার সালাবিকে ফোনে জানিয়েছেন, ৩৯ নবজাতকের মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যেই মারা গেছে। এখন যারা বেঁচে আছে তাদের আসলে কোনো অভিভাবক বেঁচে নেই কিংবা যুদ্ধের এই তাণ্ডবের মধ্যে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের গোলাবর্ষণের পর দুটি শিশুকে একেবারেই একা পাওয়া যায়। আর চার শিশুর জন্ম হয়েছিল তাদের মায়েদের মৃত্যুর পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। তেল সংকটের কারণে শিশুগুলোকে ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে হৃদরোগ বিভাগের নবজাতক ইউনিটে রাখা হয়েছে বলে জানান সাদা।

সেখানে একটি বেডে ৮/১০টি শিশুকে রাখা হয়েছে এবং তাদের উষ্ণতার জন্য ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। বাবার নাম জানা গেলে শিশুর হাতে ট্যাগে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে উল্লেখ করা হচ্ছে। পানির স্বল্পতার কারণে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আশংকা, অপরিচ্ছন্ন অক্সিজেন টিউবের কারণে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ থেকে পচন তৈরি হতে পারে।