বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ শীতকালীন শাকসবজির আগাম চাষ করে সেই বিবর্ণ মাঠ রাঙিয়ে তুলেছে কৃষকরা। সবজি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ কুমিল্লার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে চাষিদের মহাকর্মযজ্ঞের এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।
কুমিল্লায় শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছে। কেউ-কেউ আরো আগেই সবজি চাষে নেমেছেন। এরই মধ্যে কিছু সবজি বাজারে আসতেও শুরু করেছে। আগাম শাকসবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। শরতের শেষ দিকে কুমিল্লার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। দিনের বেলা প্রচন্ড গরম পড়লেও রাতে হালকা শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়ার এমন পালাবদলে কুমিল্লায় চাষাবাদের ধরণও পাল্টেছে। কুমিল্লার তিন’টি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ করা হয়। তিন’টি উপজেলা হলো চান্দিনা, বুড়িচং ও দেবিদ্বার। এই তিনটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে চাষিরা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় তারা শীতের আগাম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। শীতের আগেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে এখন চাষিরা জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চারা বপন ও পরিচর্যার কাজ করে যাচ্ছেন। কুমিল্লায় যেসব শাকসবজি চাষ হয় সেগুলো হলো আগাম আলু, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক। বুড়িচং উপজেলার ডুবাইচর, শিকারপুর, মোকামসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা মেতেছেন শীতকালীন সবজি চাষে। কুমিল্লার খুচরা বাজারে নতুন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০-১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৬০ টাকা, পালং শাক ৪০-৬০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লার পাইকারি বাজার নিমসার বাজারে সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। ডুবাইরচর এলাকার সবজি চাষি সাইফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি। চান্দিনার শ্রীমন্তপুর এলাকার চাষি খলিলুর রহমান বলেন, শীতের আগেই শাকসবজি জমিতে লাগিয়েছিলাম। সেগুলো এখন বাজারে বিক্রি করছি। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। নিমসার হাটের পাইকারি ক্রেতা রুহুল আমিন জানান, এখান থেকে এসব শাকসবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাজারগুলোতে পাইকারি বিক্রি করে থাকি। দেবিদ্বারের টমেটো চাষি মানিক মোহাম্মদ বলেন, আগাম টমেটো চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। তবে টমেটোর চারা রোপণের সময় পুরোদমে বর্ষা থাকে বলে ওই সময় অনেকটা ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকি পার করতে পারলে আগাম টমেটো চাষ করে ভালো আয় করা যায়। তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে শীতের আগাম টমেটো চাষ করেছেন। এগুলো বিক্রি করে অন্তত তিন লাখ টাকা আয় হবে বলেও আশা করেন তিনি। তবে আর কয়েক দিন পর থেকেই বাজারে স্বাভাবিক সময়ের টমেটো উঠতে শুরু করলে তখন দামও কমে যাবে। এর আগেই আগাম টমেটো চাষিরা লাভবান হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আরেক কৃষক মনিরুল ইসলাম।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ১২ টি উপজেলায় প্রায় কম বেশি সারা বছরই সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় বুড়িচং, চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলায়। বর্তমানে জেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৯ টন সবজি উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা। কুমিল্লার চান্দিনার আব্দুল বারেক নামের এক কৃষক জানান, উপজেলার শ্রীমন্তপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। এখানে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। শিম, মুলা, পালং শাক চাষ হয়েছে। তিনি আরো জানান, চান্দিনার হাটবাজারে পালং শাক বিক্রি শুরু হয়েছে। ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে পালং শাক পাওয়া যাচ্ছে। মুলা শাক বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকায়।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক সুরজিত দত্ত বাসসকে বলেন, জেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। দিন যাচ্ছে আর আগাম জাতের সবজি চাষ বাড়ছে। প্রতি হেক্টরে ১৯ টন ফলন ধরা হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় এবারও সবজি চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।