বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ খুলনার রূপসা উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘেরের পাড়ে শসা চাষ পাল্টে দিয়েছে অন্তত ২৮ গ্রামের চিত্র। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজে ঘেরা শসা খেত। ঘেরের পাড়ে সারি সারি মাচায় ঝুলছে তাজা শসা।
শসা চাষ
বাজারে শসার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসির ঝিলিক। খেত থেকে শসা তুলে এনে স্থানীয় আড়তে ন্যায্যমূল্যে শসা বিক্রি করতে পেরে আনন্দিত কৃষকরা।
শসা চাষ
রূপসা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দুর্জ্জনী মহল, ডোমরা, চন্দনশ্রী, ভবানীপুর, পেয়ারা, জাবুসা, আমদাবাদ, দেবীপুর, নৈহাটী, সামন্তসেনা, তিলক, খাজাডাঙ্গা, স্বল্পবাহিরদিয়া, আলাইপুর, পুটিমারি, আনন্দনগর, পিঠাভোগ, গোয়ালবাড়িরচর, সিঁন্দুরডাঙ্গা, নারিকেলী চাঁদপুর, ডোবা, বলটি, নতুনদিয়া, ধোপাখোলা, গোয়াড়া, শিয়ালী, চাঁদপুর ও বামনডাঙ্গায় মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে এ বছর শসা চাষ হয়েছে। তবে ঘাটভোগ ইউপির গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি জমিতে শসা চাষ হয়েছে।
ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে কম সময়ে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেয়ে দারুণ খুশি এসব গ্রামের কৃষকরা। ঘেরের পাড়ে এ শসা চাষ পাল্টে দিচ্ছে গ্রামগুলোর চিত্র।
আনন্দনগর গ্রামের চাষি নূরু শেখ জানান, এ বছর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘা জমিতে গ্রিন লাইন নামক হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছি। এতে বীজ, সার, মাচা তৈরি, শ্রমিক ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয় আড়তে ১০০ মণ শসা প্রতি মণ ৪০০ টাকা দরে পাইকারিভাবে বিক্রি করেছি। আরো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবো।
পুটিমারি গ্রামের কৃষক মিজান মুন্সি জানান, ঘেরের পাড়ে এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এরমধ্যে ৭০ মণ শসা ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। দাম এ রকম থাকলে আরো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
শসা চাষ
তিনি বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শসার ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত এসব হাইব্রিড জাতের শসা কেনা-বেচার জন্য রূপসার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে মৌসুমি আড়ত। স্থানীয়ভাবে ‘গালা’ হিসেবে পরিচিত এসব আড়তে শসা বিক্রি করতে সাধারণত পরিবহন খরচ লাগে না। কৃষকরা খেত থেকে শসা তুলে এনে আড়তে বিক্রি করেন।
শসা চাষে এলাকার নারী ও বেকার যুবকসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শসা ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শসা চাষে মাঠে থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান।
তিনি বলেন, বসতবাড়ি কিংবা মাঠের চেয়ে ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় ঘেরের পাড়ে শসা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকেরা। ঘেরে শুধুমাত্র মাছ ও ধান চাষ করে এক সময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, পাড়ে শসা ও অন্যান্য শাকসবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
শসা চাষ
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ঘেরের পাড়ে শসা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় দিন দিন চাষ বাড়ছে। উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান এবং উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর কৃষকরা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। এতে কৃষকের মধ্যে শসা চাষে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।