বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পাহাড়ি এলাকা খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে কচু চাষ। সফলতার মুখ দেখছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। পরিত্যক্ত পাহাড়ে হচ্ছে এ কচুর ফলন। পাহাড় জুড়ে দেখা মিলে কচু গাছের।
সবজির চাহিদা মেটাতে সারাদেশে কচুর চাষ হলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত কয়েক বছরে পাহাড়েও বেড়েছে মুখী কচুর চাষ। মুখী কচু বাংলাদেশে গুড়াকচু, কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
মুখী কচু চাষে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তাই কৃষক কচু চাষে আগ্রহী হয়েছে।পোকা ও রোগবালাই তেমন না থাকায় খরচ কম সে কারনেই স্থানীয় কৃষক মুখী কচুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
কচু গোত্রীয় সবজির মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় মুখী কচু। মুখীর ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মুখী কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়।
কচুর মুখী সংগ্রহে ব্যস্ত চাষির স্বজনেরা
সরজমিনে দেখা যায়, ছোট বড় পাহাড়ের ঢালে করা হয়েছে এ কচুর চাষ। যতদুর চোখ যায় দেখা মেলে সবুজ কচু গাছে বিস্তীর্ণ উচু নিচু পাহাড়।
কচু চাষিরা জানান, ধান ও অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি খাগড়াছড়ির কয়েক‘শ কৃষক পাহাড়ের ঢালুতে মুখী কচু চাষ করছেন। মুখী কচু চাষে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে কৃষক পরিবারে। আর্থিক সচ্ছলতায় স্বাবলম্বী হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
উপপরিচালক মর্ত্তুজ আলী বলেন, পাহাড়ে আগের তুলনায় অনেক বেশি কচু চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন খরচের দ্বিগুন লাভ হয় বলে কৃষক কচু চাষের দিকে ঝুকছে। দিনে দিনে বাড়ছে কৃষকদের সফলতার হাড়। এই বছরে খাগড়াছড়ি জেলায় ৮৫৮ হেক্টর জমিতে কচু উৎপাদন হয়েছে। উত্তোলন চলমান রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম তবলছড়ির কৃষক মো. আবুল হোসেন জানান, উচুঁ পাহাড়ের ঢাল এবং সমতলে মুখী কচু চাষ করা হয় গত কয়েক বছরে মুখী কচু চাষে বদলে গেছে এ এলাকার অর্থনীতি। এ সবজি লাভ জনক হওয়ায় দিন দিন মুখী কচু চাষের পরিধি বাড়ছে।
পাহাড় থেকে কচু উত্তোলন কারী শ্রমিক খোদেজা বেগম বলেন, আমরা কচুর সৃজনে প্রতিদিন কাজ করে থাকি। প্রতি কেজি কচু মাটির বিতর থেকে তুলে পরিস্কার করে আরতে পৌঁছে দিলে কেজি প্রতি ৩ টাকা পাই। এতে গড়ে ৪ থেকে ৫শ টাকা আয় হয়। এই আয়ের টাকা দিয়ে আমাদের সংসরা খুব ভালোভাবে চলে।
বাজারে মুখী কচুর চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যায় জানিয়ে এলাকার কচু চাষিরা বলেন, উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কচু চাষে লাভের মুখ দেখছে স্থানীয় চাষীরা। চৈত্র মাসের শুরুতেই পাহাড়ের আগাছা পরিস্কার করে মাটি কুপিয়ে চাষ যোগ্য করে তোলা হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম বৃষ্টি হলেই মাটিতে মুখী কচুর বীজ বপন করা হয়। চারা গজানোর পরে আগাছা পরিস্কার, কেল বা লাইন করা (দু’পাশ থেকে মাটি গাছের গোড়াতে দেওয়া) ও প্রয়োজন মতো কয়েকবার সার প্রয়োগ করতে হয়।
সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে মুখী কচু জমি থেকে উত্তোলন ও বিক্রি শুরু হয়। ভিটামিন ‘এ এবং ‘লৌহ’ গুণ সম্পন্ন মুখী কচু পাহাড়ের চাহিদা মিটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ সমতলের বড় বড় পাইকারি হাটে।
মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি ও তাইন্দং এ মুখী কচুর আড়ৎ রয়েছে। এ সমস্ত আড়ৎ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন মুখী কচু ক্রয় করে থাকেন।
দেশের সমতলের বড় বড় হাটে পাহাড়ের মুখী কচুর ব্যাপক চাহিদার কথা জানিয়ে পাইকারী ব্যাবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে ক্রয় মূল্য তুলনামূলক কম হওয়ায় আমরা লাভের আশায় বড় বড় হাটে নিয়ে বিক্রি করে থাকি। এতে করে আমরা সফলতার মুখ দেখছি।