ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা দ্রুত কাজে লাগাতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। এখনো অবদান জিডিপিতে কৃষির তৃতীয় ও কর্মসংস্থানে প্রায় তিন চতুর্থাংশ। দেশে কৃষিখাতের উন্নতিও হয়েছে অসাধারণ। স্বাধীনতাত্তোরকাল থেকে এ পর্যন্ত তিনগুণ খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪.৫৪ কোটি মে.টন। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংভর হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘গত ১০ বছরে কৃষিখাতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৩.৮%। প্রবৃদ্ধির এই ধারা এখনও বহাল আছে। কিছু খাদ্যপণ্য রফতানি হচ্ছে। এমনকি, করোনাকালে দেশের সব খাতে ধস নামলেও কৃষিখাতের উন্নতি বহাল রয়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট সৃষ্টি হলেও দেশে কোন খাদ্য সংকট দেখা দেয়নি। এমনকি এ বছর কুরবানিতে বিদেশ থেকে একটি পশু না এলেও পশুর কোন ঘাটতি হয়নি, বরং উদ্বৃত্ত থেকেছে। গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রফতানি বেড়ে হয়েছে একশ’ কোটি ডলার, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কৃষির উন্নতির ধারা বহাল থাকার কারণেই করোনাসৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দার সময়েও দেশের উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের সূচকেও দেশের অবস্থান খুব ভাল। যেমন: ধান ও সবজিতে তৃতীয়, পাটে দ্বিতীয়, চায়ে চতুর্থ, আলু ও আমে সপ্তম, পেয়ারায় ৮ম, মিঠা পানির মাছে তৃতীয়, ইলিশে প্রথম, সামুদ্রিক ক্রাস্টাশিয়াসে ৮ম ও ফিনফিশে ১২তম। কৃষিখাতের এ অভাবনীয় উন্নতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান কৃষকের। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর হাইব্রিডের কারণে কৃষিখাতের এই কল্পনাতীত উন্নতি হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা নিত্য নতুন উদ্ভাবন যুক্ত করেছেন কৃষিতে। যেমন: ভাসমান চাষ, মাচা চাষ,ছাদ বাগান, শস্য বহুমুখীকরণ ইত্যাদি। শস্যের জাত উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। ব্রির ডিজি গত ১৪ জানুয়ারি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ব্রি ১০৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত ও ২৫০টি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তন্মধ্যে খরা, বন্যা, লবণাক্তসহিষ্ণু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজও রয়েছে’। সর্বোপরি তারা পাটের জীন ও পাট থেকে পচনশীল পলিব্যাগ আবিষ্কার করেছেন। তারা একই গাছে দু’ধরনের ফসল উৎপাদনেও কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। যেমন: একই গাছে বেগুন ও আলু এবং টমোটো ও আলু। উপরন্তু সব ধরনের মসল্লা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও দীর্ঘকালীন সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছেন। দেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা বিলুপ্ত হওয়া ২৩টি দেশি প্রজাতির মাছ পুনরায় ফিরিয়ে এনেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পাট থেকে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন, যা শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন সেচযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন, যেটি কাজ করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। দেশে কৃষিখাতের উন্নতিতে সরকার স্বল্প মূল্যে কৃষি উপকরণ ও কৃষিঋণ দিয়ে সহায়তা করেছে।

কৃষিতে অভাবনীয় উন্নতির খুশিতে আমাদের আত্মহারা হলে চলবে না। আরও উন্নতি করতে হবে। কারণ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষণাপত্র মতে, ‘বাংলাদেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪.৪ মিলিয়ন হেক্টর, যার প্রায় ১৩.৩% বনভূমি,২০.১% স্থায়ী জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি এবং অবশিষ্ট ৬৬.৬% জমি ব্যবহৃত হয় কৃষিকাজের জন্য’। অন্যদিকে, জাতিসংঘের সহায়তায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত এক গবেষণা মতে, ‘২০০০-২০১০ মেয়াদে ০.৭২৮% হারে কৃষিজমি কমেছে। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন কারণে গত এক দশকে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার হার আরও বেড়েছে। সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর প্রভাবে কৃষির ক্ষতি তো রয়েছেই। অপরদিকে, প্রতিবছর ২০-২২ লাখ মানুষ বাড়ছে। এসব কারণে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশে খাদ্য উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করতে হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

দেশে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কৃষিখাতকে সম্পূর্ণরূপে আধুনিক করতে হবে। যার অন্যতম হচ্ছে: সর্বদা লেটেস্ট উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজ এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা দেশের সর্বত্রই ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে। পুষ্টি ঘাটতিও দূর হবে। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের ৪৬% পরিবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে। সব ফসলের সব সময় হালনাগাদ নির্ভুল চাহিদা ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান করতে হবে। তাতে যেসব পণ্যের ঘাটতি বেশি পরিলক্ষিত হবে,সেটা বেশি করে চাষ করার জন্য চাষিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং প্রণোদনা দিতে হবে। বিশেষ করে গম ও ভোজ্য তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত:কৃষিকে শতভাগ যান্ত্রিকরণ করতে হবে। সেচ, চাষ, রোপন/বপন, নিড়ানি, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, বস্তাবন্দী, ধান সিদ্ধ-শুকানো, ভাঙ্গা, ঝাড়াই, বস্তাবন্দী, পরিবহন সবই সর্বাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে করতে হবে। তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ব্যয় ও অপচয়ও হ্রাস পাবে কমপক্ষে ৪০% বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এতে দেশে কৃষি শ্রমিকের সংকট দূর হবে। ইতোমধ্যেই কৃষিতে যান্ত্রিকরণ শুরু হয়েছে। সরকার কৃষিযন্ত্র আমদানিতে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিচ্ছে। ভারতের একটি সংস্থা দেশে কৃষিযন্ত্রের কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। আরও অনেক দেশি-বিদেশি সংস্থা যন্ত্র তৈরি ও সংযোজনের কারখানা করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কারণ, এ দেশের কৃষি শতভাগ যান্ত্রিকরণে বিপুল যন্ত্রের দরকার হবে। কৃষিযন্ত্র তৈরি, সংযোজন, চালনা ও মেরামত খাতে কয়েক লাখ দক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স-২০২১ মতে, ‘জমি থেকে সংগ্রহ, সংরক্ষণের দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতার অভাবে পরিবহন, সরবরাহ ও খুচরা বিক্রি পর্যায়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১.০৬ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হচ্ছে, যার মূল্য বিপুল।’ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা তেমন না থাকায় এই ক্ষতি হচ্ছে। দেশে সব ফসলের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে প্রয়োজন মোতাবেক। তাহলে ফসল নষ্ট হবে না। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে। কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে। অফ সিজনে মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। তাতে ভোক্তারা লাভবান হবে। ব্যাপক লোকের কর্মসংস্থান হবে। জাতিসংঘের এফএও›র সদ্য প্রকাশিত তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় ধরনের স্থানীয় পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকট রয়েছে- এমন ৪৫টি দেশের যে তালিকা করেছে- বাংলাদেশ এই তালিকার একটি দেশ।’ তাই প্রয়োজন মোতাবেক সব খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা জরুরি এবং তা সরকারিভাবেই।

সরকারি এক সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট মতে, ‘দেশে এখনো চাষযোগ্য জমি কৃষি কাজের বাইরে রয়েছে। এখনো কৃষিজমির ২৭% সেচের আওতাবহির্ভূত। মোট সেচকৃত এলাকার ৪৪% জমিতে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র আর ৫৬% জমিতে ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহারের কারণে উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ কৃষির উন্নতিতে এসব খুবই নেতিবাচক বিষয়, যা দূর করতে হবে। অর্থাৎ চাষযোগ্য সব জমিকে চাষের আওতায় এবং চাষের সব জমিকে সেচের আওতায় আনতে হবে। উপরন্তু সব সেচ যন্ত্রকে বিদ্যুৎ চালিত করতে হবে। সৌর বিদ্যুতে চালাতে পারলে ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে।

অন্য এক তথ্য মতে, ‘বর্তমানে দেশের সেচ কাজে মাত্র ২৭% ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার হচ্ছে। বাকী সেচ কাজ চলছে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে। এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।’ এতে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাই শতভাগ সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা দরকার। বর্তমানে দেশে সেচ দক্ষতা মাত্র ৩৮% বলে জানা গেছে। এটা শতভাগ করা প্রয়োজন। তাহলে পানির অপচয় বন্ধ হবে ও ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। সে জন্য দেশের সব নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর ও পুকুর-দীঘি দখলমুক্ত ও সংস্কার করে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার করতে হবে। ভারতের সাথে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য পাওনা আদায়ে জোর দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘হেক্সা রিসার্চে’র মতে, ‘২০২৪ সালে বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবা বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ১২.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার।’ এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলারের ‘আন্তর্জাতিক হালাল বাজার’ ধরতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুবাই ভিত্তিক আইএইচএএফ’র সদস্য পদ প্রাপ্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। দেশের এই উদ্যোগ সফল হলে রফতানিতে নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পোশাক সেলাই নির্ভর রফতানিতেও বৈচিত্র্য আসবে। তাই হালাল পণ্য রফতানির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। হালাল পণ্য রফতানি করার মতো প্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে পশু, হাঁস-মুরগি রয়েছে দেশে। এখন দরকার দ্রুত এ সংক্রান্ত বিধান, কাঠামো ও বাস্তবায়ন।

পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী পাট পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সদ্ব্যবহার করা দরকার। সে জন্য পাট পণ্যে বৈচিত্র্য ও আকর্ষণীয় করতে হবে। উপরন্তু পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ-‘সোনালি ব্যাগ’, চাহিদা মতো উৎপাদন করে ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য বন্ধ করা সব সরকারি পাটকল দ্রুত চালু করা দরকার। তাহলে পাটের সুদিন ফিরে আসবে। পরিবেশেরও ব্যাপক উন্নতি হবে। বলা নিষ্প্রয়োজন, পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে সব উন্নতি জলাঞ্জলি যাবে। চিনিশিল্পকে সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা করা দরকার।তাহলে আমদানি হ্রাস পাবে। দেশের চামড়ার কদর বিশ্বব্যাপীই রয়েছে। বেঙ্গল গোটের চামড়া তো বিশ্বের উৎকৃষ্ট। তবুও দেশে চামড়া শিল্পের অবস্থা করুণ। তাই এবার কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্যে ধস নেমেছে। ফলে অনেকেই রাস্তার ধারে ফেলে দিয়েছেন। সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এটা হয়েছে বলে অনুমেয়।

সার ও কীট নাশকেরও অপব্যবহার রোধ করতে হবে। সম্ভব হলে এসবের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ, এতে ভূমি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাকৃতিক সার ও বালাই নাশক ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব। দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে অর্গান ফুডের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহ্নত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনেও বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি বিলীন হচ্ছে। এসব রোধ করা জরুরি। টেকসই হাওর রক্ষা বাঁধও দরকার। অপরদিকে, দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় রয়েছে অফুরন্ত সম্পদ, যার অন্যতম হচ্ছে-মৎস্য, খনিজ ও শৈবাল। সমুদ্রের সব মৎস্য আহরণ করতে পারলে মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে। সার উৎপাদনের চেয়ে আমদানি ব্যয় দ্বিগুণ। তবুও সার কারখানা বন্ধ রেখে চাহিদা পূরণে তিন বছর ধরে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এটা রোধ করার জন্য দেশের সব সার কারখানাকে আধুনিকীকরণ করে চালু রাখতে হবে। তাহলে সারের চাহিদা পূরণ হবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

স¤প্রতি দেশের কৃষিতে অনেক নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে, যা খুবই আশাব্যাঞ্জক। যেমন: মরুভূমির অনন্য ফল ত্বীন, এখন চাষ হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। পুষ্টি চাহিদা পূরণে এটা খুবই কার্যকর। ড্রাগনের চাষ হচ্ছে লাকসামে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম হচ্ছে জাপানের সূর্য ডিম আম। সেটি এখন চাষ হচ্ছে দেশের খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর ও রংপুরে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি হাজার টাকায়। ফাতেমা ধানের ফলন বিঘায় ৪৩ মণ। কুষ্টিয়ার মিরপুরের মিলন হোসেন এটা উদ্ভাবন করেছেন। ভিয়েতনামের বীজ বিহীন বারোমাসি লেবুর চাষ হচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। অন্য জাতের চেয়ে এই লেবুর ফলন ৩০-৪০% বেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলায় আমের ‘ভেপর হিট ট্রিটমেন্ট’ প্ল্যান্ট তথা আম পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বারি কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বছর প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে কাঁঠাল সংরক্ষণ ও বহুমুখী ব্যবহারের ১২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। হবিগঞ্জে উৎপাদন হচ্ছে হোয়াইট টি।মধুপুরে আনারস প্রক্রিয়াজাত শিল্পনগরী করা হচ্ছে।দেশের সমতলে,বিশেষ করে রংপুর বিভাগে উৎকৃষ্ট মানের চা উৎপাদন হচ্ছে।অতি সম্প্রতি ফিলিপাইনে ‘গোল্ডেন রাইস’ এর বীজ অবমুক্ত করা হয়েছে।এই ধান খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ। এই ধান উদ্ভাবনের সাথে বারি সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এ ধানের উৎপাদান শুরু করা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা দ্রুত কাজে লাগাতে হবে

আপডেট টাইম : ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। এখনো অবদান জিডিপিতে কৃষির তৃতীয় ও কর্মসংস্থানে প্রায় তিন চতুর্থাংশ। দেশে কৃষিখাতের উন্নতিও হয়েছে অসাধারণ। স্বাধীনতাত্তোরকাল থেকে এ পর্যন্ত তিনগুণ খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৪.৫৪ কোটি মে.টন। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংভর হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘গত ১০ বছরে কৃষিখাতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৩.৮%। প্রবৃদ্ধির এই ধারা এখনও বহাল আছে। কিছু খাদ্যপণ্য রফতানি হচ্ছে। এমনকি, করোনাকালে দেশের সব খাতে ধস নামলেও কৃষিখাতের উন্নতি বহাল রয়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট সৃষ্টি হলেও দেশে কোন খাদ্য সংকট দেখা দেয়নি। এমনকি এ বছর কুরবানিতে বিদেশ থেকে একটি পশু না এলেও পশুর কোন ঘাটতি হয়নি, বরং উদ্বৃত্ত থেকেছে। গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রফতানি বেড়ে হয়েছে একশ’ কোটি ডলার, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কৃষির উন্নতির ধারা বহাল থাকার কারণেই করোনাসৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দার সময়েও দেশের উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের সূচকেও দেশের অবস্থান খুব ভাল। যেমন: ধান ও সবজিতে তৃতীয়, পাটে দ্বিতীয়, চায়ে চতুর্থ, আলু ও আমে সপ্তম, পেয়ারায় ৮ম, মিঠা পানির মাছে তৃতীয়, ইলিশে প্রথম, সামুদ্রিক ক্রাস্টাশিয়াসে ৮ম ও ফিনফিশে ১২তম। কৃষিখাতের এ অভাবনীয় উন্নতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান কৃষকের। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর হাইব্রিডের কারণে কৃষিখাতের এই কল্পনাতীত উন্নতি হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা নিত্য নতুন উদ্ভাবন যুক্ত করেছেন কৃষিতে। যেমন: ভাসমান চাষ, মাচা চাষ,ছাদ বাগান, শস্য বহুমুখীকরণ ইত্যাদি। শস্যের জাত উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। ব্রির ডিজি গত ১৪ জানুয়ারি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ব্রি ১০৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত ও ২৫০টি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তন্মধ্যে খরা, বন্যা, লবণাক্তসহিষ্ণু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজও রয়েছে’। সর্বোপরি তারা পাটের জীন ও পাট থেকে পচনশীল পলিব্যাগ আবিষ্কার করেছেন। তারা একই গাছে দু’ধরনের ফসল উৎপাদনেও কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। যেমন: একই গাছে বেগুন ও আলু এবং টমোটো ও আলু। উপরন্তু সব ধরনের মসল্লা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও দীর্ঘকালীন সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছেন। দেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা বিলুপ্ত হওয়া ২৩টি দেশি প্রজাতির মাছ পুনরায় ফিরিয়ে এনেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পাট থেকে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন, যা শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন সেচযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন, যেটি কাজ করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। দেশে কৃষিখাতের উন্নতিতে সরকার স্বল্প মূল্যে কৃষি উপকরণ ও কৃষিঋণ দিয়ে সহায়তা করেছে।

কৃষিতে অভাবনীয় উন্নতির খুশিতে আমাদের আত্মহারা হলে চলবে না। আরও উন্নতি করতে হবে। কারণ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষণাপত্র মতে, ‘বাংলাদেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪.৪ মিলিয়ন হেক্টর, যার প্রায় ১৩.৩% বনভূমি,২০.১% স্থায়ী জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি এবং অবশিষ্ট ৬৬.৬% জমি ব্যবহৃত হয় কৃষিকাজের জন্য’। অন্যদিকে, জাতিসংঘের সহায়তায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত এক গবেষণা মতে, ‘২০০০-২০১০ মেয়াদে ০.৭২৮% হারে কৃষিজমি কমেছে। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন কারণে গত এক দশকে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার হার আরও বেড়েছে। সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর প্রভাবে কৃষির ক্ষতি তো রয়েছেই। অপরদিকে, প্রতিবছর ২০-২২ লাখ মানুষ বাড়ছে। এসব কারণে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশে খাদ্য উৎপাদন বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করতে হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

দেশে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কৃষিখাতকে সম্পূর্ণরূপে আধুনিক করতে হবে। যার অন্যতম হচ্ছে: সর্বদা লেটেস্ট উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজ এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা দেশের সর্বত্রই ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে। পুষ্টি ঘাটতিও দূর হবে। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের ৪৬% পরিবারের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে। সব ফসলের সব সময় হালনাগাদ নির্ভুল চাহিদা ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান করতে হবে। তাতে যেসব পণ্যের ঘাটতি বেশি পরিলক্ষিত হবে,সেটা বেশি করে চাষ করার জন্য চাষিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং প্রণোদনা দিতে হবে। বিশেষ করে গম ও ভোজ্য তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত:কৃষিকে শতভাগ যান্ত্রিকরণ করতে হবে। সেচ, চাষ, রোপন/বপন, নিড়ানি, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, বস্তাবন্দী, ধান সিদ্ধ-শুকানো, ভাঙ্গা, ঝাড়াই, বস্তাবন্দী, পরিবহন সবই সর্বাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে করতে হবে। তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ব্যয় ও অপচয়ও হ্রাস পাবে কমপক্ষে ৪০% বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এতে দেশে কৃষি শ্রমিকের সংকট দূর হবে। ইতোমধ্যেই কৃষিতে যান্ত্রিকরণ শুরু হয়েছে। সরকার কৃষিযন্ত্র আমদানিতে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিচ্ছে। ভারতের একটি সংস্থা দেশে কৃষিযন্ত্রের কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। আরও অনেক দেশি-বিদেশি সংস্থা যন্ত্র তৈরি ও সংযোজনের কারখানা করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কারণ, এ দেশের কৃষি শতভাগ যান্ত্রিকরণে বিপুল যন্ত্রের দরকার হবে। কৃষিযন্ত্র তৈরি, সংযোজন, চালনা ও মেরামত খাতে কয়েক লাখ দক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স-২০২১ মতে, ‘জমি থেকে সংগ্রহ, সংরক্ষণের দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতার অভাবে পরিবহন, সরবরাহ ও খুচরা বিক্রি পর্যায়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১.০৬ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হচ্ছে, যার মূল্য বিপুল।’ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা তেমন না থাকায় এই ক্ষতি হচ্ছে। দেশে সব ফসলের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে প্রয়োজন মোতাবেক। তাহলে ফসল নষ্ট হবে না। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে। কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে। অফ সিজনে মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। তাতে ভোক্তারা লাভবান হবে। ব্যাপক লোকের কর্মসংস্থান হবে। জাতিসংঘের এফএও›র সদ্য প্রকাশিত তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় ধরনের স্থানীয় পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকট রয়েছে- এমন ৪৫টি দেশের যে তালিকা করেছে- বাংলাদেশ এই তালিকার একটি দেশ।’ তাই প্রয়োজন মোতাবেক সব খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা জরুরি এবং তা সরকারিভাবেই।

সরকারি এক সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট মতে, ‘দেশে এখনো চাষযোগ্য জমি কৃষি কাজের বাইরে রয়েছে। এখনো কৃষিজমির ২৭% সেচের আওতাবহির্ভূত। মোট সেচকৃত এলাকার ৪৪% জমিতে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র আর ৫৬% জমিতে ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র ব্যবহারের কারণে উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ কৃষির উন্নতিতে এসব খুবই নেতিবাচক বিষয়, যা দূর করতে হবে। অর্থাৎ চাষযোগ্য সব জমিকে চাষের আওতায় এবং চাষের সব জমিকে সেচের আওতায় আনতে হবে। উপরন্তু সব সেচ যন্ত্রকে বিদ্যুৎ চালিত করতে হবে। সৌর বিদ্যুতে চালাতে পারলে ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে।

অন্য এক তথ্য মতে, ‘বর্তমানে দেশের সেচ কাজে মাত্র ২৭% ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার হচ্ছে। বাকী সেচ কাজ চলছে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে। এতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।’ এতে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাই শতভাগ সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা দরকার। বর্তমানে দেশে সেচ দক্ষতা মাত্র ৩৮% বলে জানা গেছে। এটা শতভাগ করা প্রয়োজন। তাহলে পানির অপচয় বন্ধ হবে ও ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। সে জন্য দেশের সব নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর ও পুকুর-দীঘি দখলমুক্ত ও সংস্কার করে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার করতে হবে। ভারতের সাথে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য পাওনা আদায়ে জোর দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘হেক্সা রিসার্চে’র মতে, ‘২০২৪ সালে বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবা বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ১২.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার।’ এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলারের ‘আন্তর্জাতিক হালাল বাজার’ ধরতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুবাই ভিত্তিক আইএইচএএফ’র সদস্য পদ প্রাপ্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। দেশের এই উদ্যোগ সফল হলে রফতানিতে নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পোশাক সেলাই নির্ভর রফতানিতেও বৈচিত্র্য আসবে। তাই হালাল পণ্য রফতানির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। হালাল পণ্য রফতানি করার মতো প্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে পশু, হাঁস-মুরগি রয়েছে দেশে। এখন দরকার দ্রুত এ সংক্রান্ত বিধান, কাঠামো ও বাস্তবায়ন।

পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী পাট পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সদ্ব্যবহার করা দরকার। সে জন্য পাট পণ্যে বৈচিত্র্য ও আকর্ষণীয় করতে হবে। উপরন্তু পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ-‘সোনালি ব্যাগ’, চাহিদা মতো উৎপাদন করে ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য বন্ধ করা সব সরকারি পাটকল দ্রুত চালু করা দরকার। তাহলে পাটের সুদিন ফিরে আসবে। পরিবেশেরও ব্যাপক উন্নতি হবে। বলা নিষ্প্রয়োজন, পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে সব উন্নতি জলাঞ্জলি যাবে। চিনিশিল্পকে সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা করা দরকার।তাহলে আমদানি হ্রাস পাবে। দেশের চামড়ার কদর বিশ্বব্যাপীই রয়েছে। বেঙ্গল গোটের চামড়া তো বিশ্বের উৎকৃষ্ট। তবুও দেশে চামড়া শিল্পের অবস্থা করুণ। তাই এবার কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্যে ধস নেমেছে। ফলে অনেকেই রাস্তার ধারে ফেলে দিয়েছেন। সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী স্থাপনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এটা হয়েছে বলে অনুমেয়।

সার ও কীট নাশকেরও অপব্যবহার রোধ করতে হবে। সম্ভব হলে এসবের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ, এতে ভূমি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাকৃতিক সার ও বালাই নাশক ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব। দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে অর্গান ফুডের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহ্নত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনেও বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি বিলীন হচ্ছে। এসব রোধ করা জরুরি। টেকসই হাওর রক্ষা বাঁধও দরকার। অপরদিকে, দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় রয়েছে অফুরন্ত সম্পদ, যার অন্যতম হচ্ছে-মৎস্য, খনিজ ও শৈবাল। সমুদ্রের সব মৎস্য আহরণ করতে পারলে মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে। সার উৎপাদনের চেয়ে আমদানি ব্যয় দ্বিগুণ। তবুও সার কারখানা বন্ধ রেখে চাহিদা পূরণে তিন বছর ধরে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এটা রোধ করার জন্য দেশের সব সার কারখানাকে আধুনিকীকরণ করে চালু রাখতে হবে। তাহলে সারের চাহিদা পূরণ হবে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

স¤প্রতি দেশের কৃষিতে অনেক নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে, যা খুবই আশাব্যাঞ্জক। যেমন: মরুভূমির অনন্য ফল ত্বীন, এখন চাষ হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। পুষ্টি চাহিদা পূরণে এটা খুবই কার্যকর। ড্রাগনের চাষ হচ্ছে লাকসামে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম হচ্ছে জাপানের সূর্য ডিম আম। সেটি এখন চাষ হচ্ছে দেশের খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর ও রংপুরে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি হাজার টাকায়। ফাতেমা ধানের ফলন বিঘায় ৪৩ মণ। কুষ্টিয়ার মিরপুরের মিলন হোসেন এটা উদ্ভাবন করেছেন। ভিয়েতনামের বীজ বিহীন বারোমাসি লেবুর চাষ হচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। অন্য জাতের চেয়ে এই লেবুর ফলন ৩০-৪০% বেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলায় আমের ‘ভেপর হিট ট্রিটমেন্ট’ প্ল্যান্ট তথা আম পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বারি কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বছর প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে কাঁঠাল সংরক্ষণ ও বহুমুখী ব্যবহারের ১২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। হবিগঞ্জে উৎপাদন হচ্ছে হোয়াইট টি।মধুপুরে আনারস প্রক্রিয়াজাত শিল্পনগরী করা হচ্ছে।দেশের সমতলে,বিশেষ করে রংপুর বিভাগে উৎকৃষ্ট মানের চা উৎপাদন হচ্ছে।অতি সম্প্রতি ফিলিপাইনে ‘গোল্ডেন রাইস’ এর বীজ অবমুক্ত করা হয়েছে।এই ধান খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ। এই ধান উদ্ভাবনের সাথে বারি সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এ ধানের উৎপাদান শুরু করা যেতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।