ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অধ্যক্ষকে অপহরণ, এমপির ৭ ক্যাডারের বিরুদ্ধে মামলা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী দারুস সুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতিকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে এমপি ডা. মনসুরের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সাত ক্যাডারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

মামলার আসামিরা সবাই রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুরের অনুসারী। পুঠিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের দেওয়া এজাহার অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।

মামলায় আসামিরা হলেন- মাইনুল ইসলাম মাহিন (৩০), শরিফুল ইসলাম ডাবলু (২৯), তুষার (২৪), আব্দুর রহমান (৩৫), হুমায়ুন ওরফে হুমা (৪২), বাবলুর রহমান (৪৫) ও কামাল হোসেন (৪৮)। তবে এজাহারে এমপি মনসুর রহমানের নাম নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তাকে আসামি করা হয়নি।

বাদীর দেওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মনসুর রহমান ফোন করে তাকে তার রাজশাহী শহরের কাজিহাটার বাসায় যেতে বলেন। তিনি পাবনায় নিজের বাড়িতে আছেন জানিয়ে পরে দেখা করবেন বলেন। এ সময় এমপি মনসুর মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে বলেন, আমি মনসুর রহমান এলাকার এমপি। না এলে ঘাড়ে পাক দিয়ে আনা হবে। অধ্যক্ষ এজাহারে বলেন, মাদ্রাসায় দাপ্তরিক কাজ থাকায় তিনি পর দিন এমপির বাসায় যেতে পারেন নি।

এদিকে গত সোমবার তিনি মাদ্রাসায় দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি মাইক্রোবাস গিয়ে থামে মাদ্রাসার ভেতরে। মাহিনের নেতৃত্বে মাইক্রোবাস থেকে বের হয়ে আসামিরা সরাসরি তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে তুলে এনে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসের ভেতরে একদফা তাকে কিল-ঘুসি মারে আসামিরা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এমপি মনসুরের কাজিহাটার বাসভবনে। সেখানে এমপির সামনেই আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় এমপি মনসুর তাকে মাদ্রাসার কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্নভাবে শাসানি দেন। দুই ঘণ্টা আটকে রাখার পর অধ্যক্ষকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষের এজাহারে আরও বলা হয়, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করলে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। সন্ত্রাসীরা যে কোনো সময় আবার আমাকে অপহরণ করতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছি। তা ছাড়া তারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও অপহরণ ও তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সৈয়দ করম আলী মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নতুন সভাপতি দেওয়ান আব্দুল সালেক বলেন, সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসায় ঢুকে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মুখে অধ্যক্ষকে অপহরণ করেছেন। এই অপরাধকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। মাদ্রাসা কমিটি সভায় রেজ্যুলেশন করে অধ্যক্ষকে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে পুলিশ আইনের শাসন নিশ্চিত করবেন বলে এলাকার মানুষ আশা করেন।

মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের এজাহারটি মঙ্গলবার রাতে মামলা আকারে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

অধ্যক্ষকে অপহরণ, এমপির ৭ ক্যাডারের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট টাইম : ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী দারুস সুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতিকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে এমপি ডা. মনসুরের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সাত ক্যাডারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

মামলার আসামিরা সবাই রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুরের অনুসারী। পুঠিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের দেওয়া এজাহার অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।

মামলায় আসামিরা হলেন- মাইনুল ইসলাম মাহিন (৩০), শরিফুল ইসলাম ডাবলু (২৯), তুষার (২৪), আব্দুর রহমান (৩৫), হুমায়ুন ওরফে হুমা (৪২), বাবলুর রহমান (৪৫) ও কামাল হোসেন (৪৮)। তবে এজাহারে এমপি মনসুর রহমানের নাম নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তাকে আসামি করা হয়নি।

বাদীর দেওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মনসুর রহমান ফোন করে তাকে তার রাজশাহী শহরের কাজিহাটার বাসায় যেতে বলেন। তিনি পাবনায় নিজের বাড়িতে আছেন জানিয়ে পরে দেখা করবেন বলেন। এ সময় এমপি মনসুর মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে বলেন, আমি মনসুর রহমান এলাকার এমপি। না এলে ঘাড়ে পাক দিয়ে আনা হবে। অধ্যক্ষ এজাহারে বলেন, মাদ্রাসায় দাপ্তরিক কাজ থাকায় তিনি পর দিন এমপির বাসায় যেতে পারেন নি।

এদিকে গত সোমবার তিনি মাদ্রাসায় দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি মাইক্রোবাস গিয়ে থামে মাদ্রাসার ভেতরে। মাহিনের নেতৃত্বে মাইক্রোবাস থেকে বের হয়ে আসামিরা সরাসরি তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে তুলে এনে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসের ভেতরে একদফা তাকে কিল-ঘুসি মারে আসামিরা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এমপি মনসুরের কাজিহাটার বাসভবনে। সেখানে এমপির সামনেই আরেক দফা মারধর করা হয়। এ সময় এমপি মনসুর তাকে মাদ্রাসার কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্নভাবে শাসানি দেন। দুই ঘণ্টা আটকে রাখার পর অধ্যক্ষকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষের এজাহারে আরও বলা হয়, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করলে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমি ও আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। সন্ত্রাসীরা যে কোনো সময় আবার আমাকে অপহরণ করতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছি। তা ছাড়া তারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও অপহরণ ও তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সৈয়দ করম আলী মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নতুন সভাপতি দেওয়ান আব্দুল সালেক বলেন, সন্ত্রাসীরা মাদ্রাসায় ঢুকে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মুখে অধ্যক্ষকে অপহরণ করেছেন। এই অপরাধকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। মাদ্রাসা কমিটি সভায় রেজ্যুলেশন করে অধ্যক্ষকে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে পুলিশ আইনের শাসন নিশ্চিত করবেন বলে এলাকার মানুষ আশা করেন।

মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের এজাহারটি মঙ্গলবার রাতে মামলা আকারে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।