মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে আমার তার প্রতিদান দেব, যদি কর্তৃত্ববাদের ভূমিকা রাখে তাহলে আমরা এমন প্রতিবেশী চাই না। ইসলাম আমাদের ধৈর্য্য ধারণের শিক্ষা দেয়।’
গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের পেকুয়ায় ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তার আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের আহ্বান জানান।
কক্সবাজারের পেকুয়ায় মরহুম মাওলানা শহিদুল্লাহ স্মৃতি সংসদ ও পেকুয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত তাফসির মাহফিলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত ঘটেছে।বিশাল তাফসির মাহফিলের কর্মসূচিসকাল ৯টা থেকে আরম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন রাত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে যায়।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কন্টেন্ট ক্রিয়েটারগণ দুই দিন আগে থেকে মাহফিলে এসে টুকরো টুকরো খবর প্রচার করতে থাকে।
তাফসির মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা এ এইচ এম বদিউল আলম। আর উদ্বোধনী বয়ান করেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা শায়েখ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। এরপর ধারাবাহিক আলোচনা করেন মুফতি কাজি ইব্রাহিম, মাওলানা জসিমউদদীন রহমানী ও আবদুল্লাহ হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
এ সময় প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির জমায়েতে জুমার খুতবা পড়ান মাওলানা সালাহউদ্দিন মাক্কী। আর জুমার নামাজের ইমামতি করেন আবদুল্লাহ হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
জুমার পর দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতিত্বে করেন জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী। এরপর ধারাবাহিক আলোচনা করেন মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, সাদেকুর রহমান আজহারী ও আবদুল্লাহ আল আমিন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদের বক্তব্যের পর জনতার উদ্দেশ্যে ভার্চুয়ালি ভিডিও কলে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
রাত ৯টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠেন প্রধান ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। তিনি মঞ্চে আসার আগেই মাহফিলের চারপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
এদিকে এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পেকুয়া থানা পুলিশ। সেই সঙ্গে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মিজানুর রহমান আজহারীকে মাহফিল করতে না দেওয়ার পাশপাশি তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রথম ঢাকার বাইরে মাহফিল হওয়ায় পেকুয়ার ওয়াজ মাহফিলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের জমায়েত দেখা গেছে।
এদিকে সালাহউদ্দিন আহমদ রাত ৮টায় ভার্চূয়ালি বক্তব্যে বলেন, ‘দেশে কিছু আগেও তাফসির মাহফিল করতে অনুমতি নিতে হতো। নিষিদ্ধ করা হয়েছিল হক্কানি আলেমদের মাহফিল। আজ ফ্যাসিসমুক্ত দেশে অনুমতি ছাড়া মাহফিল হচ্ছে। পুলিশ তাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।’
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘পেকুয়ায় বাংলাদেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পেকুয়া থানা পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। মাহফিল ঘিরে বা এই সুযোগে কোনো দুষ্কৃতকারী অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে বিষয়টি বিবেচনা রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘মাহফিলে আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ১শ সদস্যের বিশেষ টিম কাজ করেছে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে বিশেষ নজরদারির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।’
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামিক বক্তাদের মাহফিল নিষিদ্ধ করা ও ইসলামিক বক্তাদের নামে মামলা দিয়ে আটক করে জেলে রাখার কারণে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আলেম বিদ্বেষ মনোভাবের কারণে মাহফিলগুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে আরও বেশি গুরুত্ব হয়ে উঠে। এতে ধর্মীয় আলোচনা শোনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।