বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ গোপালগঞ্জে হাজারো মানুষের মন মাতালো বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। একটা সময় গ্রাম্য শিল্প-সংস্কৃতির প্রধান মাধ্যম হিসাবে লাঠিখেলা ছিল খুবই জনপ্রিয় ও অকর্ষণীয়। গত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন মেলা উপলক্ষে এ লাঠি খেলার অয়োজন করে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কালের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া এ লাঠি খেলা দেখতে ভীড় করে নানা বয়সের হাজারো মানুষ।
ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি বৈশাখী মেলা, পৌষ সংক্রান্তী, চৈত্র সংক্রান্তী ও বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাকে টিকিয়ে রাখতে দরকার সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের পৌর পার্কে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন মেলায় আসা সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হয় লাঠি খেলার। কাঁসোরের শব্দে চারপাশে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাদ্যের তালে তালে নেচে নেচে লাঠি খেলে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে লাঠিয়ালরা। খেলোয়াড়রা একে অপরের সাথে লাঠি যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
স এক লাফিয়াল লাঠির কারসাজিতে অন্যের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন। আর এরই মাঝে লাঠি নিয়ে অদ্ভুত সব কসরত দেখিয়ে উপস্থিত হাজারো দর্শকদের মন জয় করেন। বেশি আনন্দ উপভোগ করে ছোট্ট শিশুরা। বড় লাঠিয়ালদের সাথে ছোট ছোট ক্ষুদে লাঠিয়ালরাও কসরত দেখায়। তারা সবাই দল বেঁধে আগত দর্শকদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন। এসব দৃশ্য দেখে আগত দর্শকরাও করতালির মাধ্যমে খেলোয়ারদের উৎসাহ যোগায়।
লাঠি খেলার আসরে কখনও কখনও নৃত্যগীত পরিবেশন করা হয়। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও রং বেরং এর পোশাক পরিহিত কিছু কৌতুককারী লাঠি খেলার আসরে উপস্থিত হন এবং তারা সামাজিক রীতি-নীতির নানা রূপ নিয়ে কৌতুক উপস্থাপন করেন।
কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এ লাঠিখেলা দেখতে মেলা প্রাঙ্গনে হাজির হন নানা বয়সের হাজারো মানুষ। ইট-পাথরের জীবন থেকে কিছুটা হলেও পুরানো দিনের গ্রামীণ সমাজের চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পান বয়বৃদ্ধরা। অনেকেই আবার দেখেছেন প্রথমবারের মত। তারা সবাই মেতে ওঠেন আনন্দে। করতালি দিয়ে আনন্দ উল্লাস করেন।
লাঠিয়াল হাসমত আলী, মেহেদী হাসান ও অমিত খান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটিকে ধরে রাখতে ও দর্শকদের আনন্দ দিতে আমরা লাঠি খেলে থাকি। আর খুশি হয়ে যে যাই দেন আমরা তা আনন্দেই গ্রহণ করি।
জেলা উন্নয়ন মেলার আয়োজক গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন গ্রাম্য খেলাকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে এবং আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে আমাদের পুরানো দিনের ইতিহাস ঐতিহ্যকে। মূলত উন্নয়ন মেলা দেখতে এসে জনগণ যাতে আনন্দ পায় এবং পুরানো ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানতে পারে তার জন্য আমরা গ্রামীন এসব খেলার আয়োজন করেছি।