ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে সাতটি গাছ বিশ্বে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়

বাঙালী কণ্ঠ নিউজ বিশ্বের অনেক ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রথার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে অনেক গাছ বা উদ্ভিদ রয়েছে, যা শক্তিদায়ক, রোগমুক্তি এবং কখনো কখনো ঐশ্বরিক জগতের মাধ্যম হিসাবেও দেখা হয়।

সংগীত শিল্পী জাহ্নবী হ্যারিসন এরকম সাতটি পবিত্র গাছের সম্মিলন ঘটিয়েছেন, যেখানে প্রাচ্যের পদ্মফুল থেকে শুরু করে পাশ্চাত্যের পুদিনা রয়েছে।

কিন্তু পবিত্র বলে বিবেচিত এসব উদ্ভিদের বিশেষত্ব কি? অতীতে মানুষ এসব গাছকে যতটা আবশ্যক বলে মনে করতো, এখনো কি সেরকম ভাবে? এসব গাছের প্রভাবই বা কি? সবচেয়ে বড় কথা, এসব গাছের এতো গুরুত্ব কেন?

সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়, এরকম সাতটি গাছ বা উদ্ভিদের অতীত ও বর্তমান বিশ্লেষণ করে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে:

১. পদ্ম ফুল
পদ্ম ফুল হচ্ছে এমন একটি উদ্ভিদ, যেটির একেক স্তরের পাপড়ি প্রাচ্যের ধর্মীয় শিক্ষা বা সংস্কারে বিভিন্ন অর্থ বহন করে।

হিন্দুদের কাছে চমৎকার এই ফুলটি জীবন, উর্বরতা আর পবিত্রতার প্রতীক। ফুলটিকে পবিত্র বলে মনে করে বৌদ্ধরাও।

কাদা ও ময়লার ওপর জন্ম নেয়া এই সুন্দর ফুলটি যেন নির্লিপ্ততারও প্রতীক। যদিও এই উদ্ভিদের শেকড় কাদার ভেতর, কিন্তু ফুলটি পানির ওপরে ভেসে থাকে।

গল্পগাথাঁ প্রচলিত রয়েছে যে, ভগবান বিষ্ণুর নাভির ভেতর থেকে পদ্মের জন্ম আর ব্রক্ষ্মা এর কেন্দ্রে বসে থাকেন।

অনেকে বিশ্বাস করেন, ঈশ্বরের হাত আর পা পদ্ম ফুলের মতো এবং তার চোখ ফুলের পাপড়ির মতো। ফুলের কুঁড়ি যেমন কোমল, ঈশ্বরের স্পর্শ আর দর্শনও সেরকম।

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পদ্মের পবিত্র আত্মা রয়েছে।

২. মিসলটো
বর্তমান কালে মিসলটো ক্রিসমাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়, কিন্তু প্রাচীন কেল্টিক ধর্মীয় নেতাদের ক্রিয়াকর্মে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল এই উদ্ভিদ।

তারা বিশ্বাস করতো, সূর্য দেবতা টারানিসের সংস্পর্শ রয়েছে মিসলটোর মধ্যে, ফলে যে গাছে মিসলটো জন্ম নেবে বা যে ডালে সেটি ছড়াবে, সেটিও পবিত্র বলে বিবেচিত হবে।

শীতের সময় যখন সূর্য সবচেয়ে দূরে থাকে, সেদিন প্রধান ধর্মযাজক সাদা কাপড় পড়ে একটি সোনার কাস্তে দিয়ে ওক গাছ থেকে পবিত্র মিসলটো কেটে সংগ্রহ করতেন। এই বিশেষ গাছ এবং তার ফল ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম বা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হতো।

তখন বিশ্বাস করা হতো যে এর জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। মিসলটোর একটি অংশই রোগ সারাতে পারে, যেকোনো বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, মানব শরীরে উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ডাইনির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

তবে সত্যি কথা হল, এটা পুরোটাই ভুল ধারণা। বরং পেটে গেলে মিসলটো বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

৩. পেয়টে
পেয়টে হলো ছোট, কাণ্ডহীন একপ্রকার ক্যাকটাস, যেটি টেক্সাস এবং মেক্সিকোর মরুভূমিতে জন্মে থাকে।সহস্রকাল ধরে প্রাচীন গোত্র বা আদিবাসী মানুষজন এই গাছটিতে তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে আসছে।
মেক্সিকোর হুইকোল ইন্ডিয়ান আর অনেক আদিবাসী আমেরিকান গোত্র বিশ্বাস করতো যে, পেয়টে একটি পবিত্র উদ্ভিদ যা তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগে সাহায্য করবে।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার একধরণের মোহ বা আবেশ তৈরি করে, ফলে অনেকেই কল্পনা জগতে বা অলৌকিক জগতে বিচরণ করছেন বলে মনে করেন।

তবে পেয়টের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ভক্ত শুধু মাত্র আদিবাসী গোত্রের সদস্যরাই নন।

পেয়টের এই মাদকতার কারণে সেটি ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বাইরে শিল্পী, সংগীত শিল্পী আর লেখকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ১৯৫০ সালের পর থেকে এই ক্যাকটাসটির খবর তারা পায়।

৪. তুলসী
হিন্দু ধর্মে বলা হয়, কৃষ্ণ এবং তার ভক্তদের সেবা করার জন্য বৃন্দাবনের একজন অভিভাবক হিসাবে দেবী বিরিন্দাই তুলসী পাতা হিসাবে জন্ম নেন। আবার প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়, কৃষ্ণ নিজেই তাকে তুলসী আকারে গ্রহণ করেছেন।

ফলে যেখানেই এই গাছটির জন্ম হোক না কেন, সেটিকে পবিত্র বলে বিবেচিত বৃন্দাবনের মাটি বলেই মনে করা হয়, যেখানে এই গাছটি প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে।

সারা পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ হিন্দু তাদের প্রতিদিনের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে, মন্দিরে বা বাসায়, তুলসী গাছের পাতা ব্যবহার করেন।

৫. ইয়ু গাছ
সারা বছর ধরে সবুজ থাকে এমন একটি দেবদারু জাতের গাছ ইয়ু, যেটি হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারে। অনেকেই এই গাছটিতে পুনর্জন্ম এবং অনন্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসাবে দেখেন।

এর কারণ, এই গাছের ভেঙ্গে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ডালপালা থেকে নতুন গাছের জন্ম হতে পারে।

এমনকি পুরনো গাছের গুড়োর ভেতর থেকেও নতুন একটি ইয়ু গাছের জন্ম হতে পারে, তাই অনেকে একে পুনর্জন্মের উদাহরণ হিসাবেও মনে করেন।

খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইয়ু একটি প্রতীকী গাছ-মারা যাওয়া স্বজনদের কফিনে ইয়ু গাছের অঙ্কুর দেয়া হয় এবং অনেক চার্চের পাশে এই গাছটি দেখা যায়।

তবে খৃষ্টান ধর্মেরও আগে থেকে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী এই গাছটিকে পূজা করে আসছে। তারা সেসব স্থানে তাদের প্রার্থনা কেন্দ্র নির্বাচন করতো, যেখানে আগে থেকেই ইয়ু গাছ রয়েছে।

৬. গাজা
রাস্তাফারি ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে গাজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বাস করে, বাইবেলে যে জীবনের গাছের কথা বলা হয়েছে, গাজা গাছ হচ্ছে সেই গাছ, এ কারণে এটি পবিত্র।

যদিও গাজার অনেক নাম রয়েছে, তবে এই ধর্মের লোকজন এটিকে ‘পবিত্র ভেষজ’ বলে ডেকে থাকে।

যেমন বাইবেলের ২২:২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ”জাতিদের মুক্ত করার জন্যই এই ভেষজ”।

তারা মনে করে, এই ভেষজ তাদের ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যায় আর তাদের ভেতরের আধ্যাত্মিক শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।

তাদের ভাষায় এই জ্ঞান উদ্ভিদ অনেক রীতিনীতির সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। সিগারেট বা পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে এর ধোয়া নেয়ার সময় নানা ধর্মীয় আচার পালন করা হয়।

৭. পুদিনা
আমাদের পিৎজা বা পাস্তা সসে যে জিনিসটা সবচেয়ে আগে পাওয়া যাবে, তা হলো এই পুদিনা পাতা, কিন্তু অর্থোডক্স খৃষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং গ্রীক চার্চে এটি একটি পবিত্র ভেষজ হিসাবে গণ্য করা হয়।

পুদিনা ইংরেজি নাম ‘বাসিল’ এসেছে গ্রীক শব্দ ‘রাজকীয়’ থেকে।

অর্থোডক্স খৃষ্টানরা বিশ্বাস করেন, যেখানে যিশু খৃষ্টের রক্ত পড়েছিল, সেখানেই এই গাছটির জন্ম হয়েছিল। এ কারণেই খৃষ্ট ধর্মের অনেক অনুষ্ঠানে পুদিনা পাতার উপস্থিতি দেখা যায়।

পবিত্র পানি পরিশোধন করতে যাজকরা পুদিনা পাতার ব্যবহার করেন এবং ধর্মসভায় পুদিনা গাছ ভেজানো পানি ছিটানো হয়।

চার্চের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্রসের সঙ্গে পুদিনা গাছ থাকে এবং ছোট ছোট ডালপালা হাতে হাতে দিয়ে দেয়া হয়।

অনেকে এসব ডালপালা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, যাতে সেটি নতুন শেকড় ছাড়ে, যাতে পরে তারা সেগুলো আশীর্বাদ হিসাবে নিজেদের বাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

(বিবিসির সামথিং আন্ডারস্টুড অনুষ্ঠানে জাহ্নবী হ্যারিসনের বক্তব্য থেকে নেয়া)

সূত্রঃ বিবিসি

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

যে সাতটি গাছ বিশ্বে সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়

আপডেট টাইম : ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজ বিশ্বের অনেক ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রথার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে অনেক গাছ বা উদ্ভিদ রয়েছে, যা শক্তিদায়ক, রোগমুক্তি এবং কখনো কখনো ঐশ্বরিক জগতের মাধ্যম হিসাবেও দেখা হয়।

সংগীত শিল্পী জাহ্নবী হ্যারিসন এরকম সাতটি পবিত্র গাছের সম্মিলন ঘটিয়েছেন, যেখানে প্রাচ্যের পদ্মফুল থেকে শুরু করে পাশ্চাত্যের পুদিনা রয়েছে।

কিন্তু পবিত্র বলে বিবেচিত এসব উদ্ভিদের বিশেষত্ব কি? অতীতে মানুষ এসব গাছকে যতটা আবশ্যক বলে মনে করতো, এখনো কি সেরকম ভাবে? এসব গাছের প্রভাবই বা কি? সবচেয়ে বড় কথা, এসব গাছের এতো গুরুত্ব কেন?

সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়, এরকম সাতটি গাছ বা উদ্ভিদের অতীত ও বর্তমান বিশ্লেষণ করে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে:

১. পদ্ম ফুল
পদ্ম ফুল হচ্ছে এমন একটি উদ্ভিদ, যেটির একেক স্তরের পাপড়ি প্রাচ্যের ধর্মীয় শিক্ষা বা সংস্কারে বিভিন্ন অর্থ বহন করে।

হিন্দুদের কাছে চমৎকার এই ফুলটি জীবন, উর্বরতা আর পবিত্রতার প্রতীক। ফুলটিকে পবিত্র বলে মনে করে বৌদ্ধরাও।

কাদা ও ময়লার ওপর জন্ম নেয়া এই সুন্দর ফুলটি যেন নির্লিপ্ততারও প্রতীক। যদিও এই উদ্ভিদের শেকড় কাদার ভেতর, কিন্তু ফুলটি পানির ওপরে ভেসে থাকে।

গল্পগাথাঁ প্রচলিত রয়েছে যে, ভগবান বিষ্ণুর নাভির ভেতর থেকে পদ্মের জন্ম আর ব্রক্ষ্মা এর কেন্দ্রে বসে থাকেন।

অনেকে বিশ্বাস করেন, ঈশ্বরের হাত আর পা পদ্ম ফুলের মতো এবং তার চোখ ফুলের পাপড়ির মতো। ফুলের কুঁড়ি যেমন কোমল, ঈশ্বরের স্পর্শ আর দর্শনও সেরকম।

হিন্দু ধর্মে বলা হয়, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পদ্মের পবিত্র আত্মা রয়েছে।

২. মিসলটো
বর্তমান কালে মিসলটো ক্রিসমাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়, কিন্তু প্রাচীন কেল্টিক ধর্মীয় নেতাদের ক্রিয়াকর্মে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল এই উদ্ভিদ।

তারা বিশ্বাস করতো, সূর্য দেবতা টারানিসের সংস্পর্শ রয়েছে মিসলটোর মধ্যে, ফলে যে গাছে মিসলটো জন্ম নেবে বা যে ডালে সেটি ছড়াবে, সেটিও পবিত্র বলে বিবেচিত হবে।

শীতের সময় যখন সূর্য সবচেয়ে দূরে থাকে, সেদিন প্রধান ধর্মযাজক সাদা কাপড় পড়ে একটি সোনার কাস্তে দিয়ে ওক গাছ থেকে পবিত্র মিসলটো কেটে সংগ্রহ করতেন। এই বিশেষ গাছ এবং তার ফল ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম বা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হতো।

তখন বিশ্বাস করা হতো যে এর জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। মিসলটোর একটি অংশই রোগ সারাতে পারে, যেকোনো বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, মানব শরীরে উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ডাইনির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

তবে সত্যি কথা হল, এটা পুরোটাই ভুল ধারণা। বরং পেটে গেলে মিসলটো বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

৩. পেয়টে
পেয়টে হলো ছোট, কাণ্ডহীন একপ্রকার ক্যাকটাস, যেটি টেক্সাস এবং মেক্সিকোর মরুভূমিতে জন্মে থাকে।সহস্রকাল ধরে প্রাচীন গোত্র বা আদিবাসী মানুষজন এই গাছটিতে তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে আসছে।
মেক্সিকোর হুইকোল ইন্ডিয়ান আর অনেক আদিবাসী আমেরিকান গোত্র বিশ্বাস করতো যে, পেয়টে একটি পবিত্র উদ্ভিদ যা তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগে সাহায্য করবে।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার একধরণের মোহ বা আবেশ তৈরি করে, ফলে অনেকেই কল্পনা জগতে বা অলৌকিক জগতে বিচরণ করছেন বলে মনে করেন।

তবে পেয়টের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ভক্ত শুধু মাত্র আদিবাসী গোত্রের সদস্যরাই নন।

পেয়টের এই মাদকতার কারণে সেটি ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বাইরে শিল্পী, সংগীত শিল্পী আর লেখকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ১৯৫০ সালের পর থেকে এই ক্যাকটাসটির খবর তারা পায়।

৪. তুলসী
হিন্দু ধর্মে বলা হয়, কৃষ্ণ এবং তার ভক্তদের সেবা করার জন্য বৃন্দাবনের একজন অভিভাবক হিসাবে দেবী বিরিন্দাই তুলসী পাতা হিসাবে জন্ম নেন। আবার প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়, কৃষ্ণ নিজেই তাকে তুলসী আকারে গ্রহণ করেছেন।

ফলে যেখানেই এই গাছটির জন্ম হোক না কেন, সেটিকে পবিত্র বলে বিবেচিত বৃন্দাবনের মাটি বলেই মনে করা হয়, যেখানে এই গাছটি প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে।

সারা পৃথিবী জুড়ে লক্ষ লক্ষ হিন্দু তাদের প্রতিদিনের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে, মন্দিরে বা বাসায়, তুলসী গাছের পাতা ব্যবহার করেন।

৫. ইয়ু গাছ
সারা বছর ধরে সবুজ থাকে এমন একটি দেবদারু জাতের গাছ ইয়ু, যেটি হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকতে পারে। অনেকেই এই গাছটিতে পুনর্জন্ম এবং অনন্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসাবে দেখেন।

এর কারণ, এই গাছের ভেঙ্গে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ডালপালা থেকে নতুন গাছের জন্ম হতে পারে।

এমনকি পুরনো গাছের গুড়োর ভেতর থেকেও নতুন একটি ইয়ু গাছের জন্ম হতে পারে, তাই অনেকে একে পুনর্জন্মের উদাহরণ হিসাবেও মনে করেন।

খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইয়ু একটি প্রতীকী গাছ-মারা যাওয়া স্বজনদের কফিনে ইয়ু গাছের অঙ্কুর দেয়া হয় এবং অনেক চার্চের পাশে এই গাছটি দেখা যায়।

তবে খৃষ্টান ধর্মেরও আগে থেকে অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী এই গাছটিকে পূজা করে আসছে। তারা সেসব স্থানে তাদের প্রার্থনা কেন্দ্র নির্বাচন করতো, যেখানে আগে থেকেই ইয়ু গাছ রয়েছে।

৬. গাজা
রাস্তাফারি ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছে গাজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বাস করে, বাইবেলে যে জীবনের গাছের কথা বলা হয়েছে, গাজা গাছ হচ্ছে সেই গাছ, এ কারণে এটি পবিত্র।

যদিও গাজার অনেক নাম রয়েছে, তবে এই ধর্মের লোকজন এটিকে ‘পবিত্র ভেষজ’ বলে ডেকে থাকে।

যেমন বাইবেলের ২২:২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ”জাতিদের মুক্ত করার জন্যই এই ভেষজ”।

তারা মনে করে, এই ভেষজ তাদের ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যায় আর তাদের ভেতরের আধ্যাত্মিক শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।

তাদের ভাষায় এই জ্ঞান উদ্ভিদ অনেক রীতিনীতির সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। সিগারেট বা পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে এর ধোয়া নেয়ার সময় নানা ধর্মীয় আচার পালন করা হয়।

৭. পুদিনা
আমাদের পিৎজা বা পাস্তা সসে যে জিনিসটা সবচেয়ে আগে পাওয়া যাবে, তা হলো এই পুদিনা পাতা, কিন্তু অর্থোডক্স খৃষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং গ্রীক চার্চে এটি একটি পবিত্র ভেষজ হিসাবে গণ্য করা হয়।

পুদিনা ইংরেজি নাম ‘বাসিল’ এসেছে গ্রীক শব্দ ‘রাজকীয়’ থেকে।

অর্থোডক্স খৃষ্টানরা বিশ্বাস করেন, যেখানে যিশু খৃষ্টের রক্ত পড়েছিল, সেখানেই এই গাছটির জন্ম হয়েছিল। এ কারণেই খৃষ্ট ধর্মের অনেক অনুষ্ঠানে পুদিনা পাতার উপস্থিতি দেখা যায়।

পবিত্র পানি পরিশোধন করতে যাজকরা পুদিনা পাতার ব্যবহার করেন এবং ধর্মসভায় পুদিনা গাছ ভেজানো পানি ছিটানো হয়।

চার্চের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্রসের সঙ্গে পুদিনা গাছ থাকে এবং ছোট ছোট ডালপালা হাতে হাতে দিয়ে দেয়া হয়।

অনেকে এসব ডালপালা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, যাতে সেটি নতুন শেকড় ছাড়ে, যাতে পরে তারা সেগুলো আশীর্বাদ হিসাবে নিজেদের বাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

(বিবিসির সামথিং আন্ডারস্টুড অনুষ্ঠানে জাহ্নবী হ্যারিসনের বক্তব্য থেকে নেয়া)

সূত্রঃ বিবিসি