ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মাটির ঘর, যেখানে হৃদয় ছুঁয়ে যায়

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মাটির ঘর নামের মধ্যেই রয়েছে আলাদা টান। সোদা মাটির গন্ধে বুকভরা নিশ্বাস নেয়ার টান। কিন্তু, গাজীপুরের কালীগঞ্জের ‘মাটির ঘর’ আলাদা কারণে আলোচনায়। মূলত এটি রেস্তারাঁ। কিন্তু, আপনি সেখানে পাবেন গ্রামীণ পরিবেশ, সঙ্গে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য আর প্রাণজুড়ানো খাবার। জম্পেশ আড্ডা দিতে পারবেন প্রিয়জনদের নিয়ে।

এই রেস্তারাঁটির সবখানে মাটির স্পর্শ। ঘরগুলো মাটির তৈরি। রেস্তোরাঁর ব্যবহৃত আসবাবও মাটির। যেসব পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়, সেগুলোও মাটির।

ব্যতিক্রম নামকরণের বিষয়ে ‘মাটির ঘর’র মালিক জাকারিয়া আকন্দ বিপ্লব সাংবাদিককে জানান, ছোটবেলা থেকেই মাটির ঘর তার প্রিয়। ওই টান থেকেই ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মাটি দিয়ে ঘর বানানো শুরু করেন।

তিনি জানান, শুরুতে আশপাশের লোকজন বলছিলেন, এটা আমার পাগলামি। কিছুদিন পরই থেমে যাব। তবে জাকারিয়া থামেননি। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁ গড়ে।

রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব সম্পর্কে জাকারিয়া জানান, মাটির বাড়িঘরের প্রতি মানুষের স্মৃতিকাতরতা আছে, ভালো লাগা কাজ করে। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটিয়ে মনটাও ভালো হয়। এমন চিন্তা থেকে আর গ্রামীণ নানা পদের খাবার নিয়েই এগিয়ে চলেছে মাটির ঘর।

তিনি আরো জানান, তার রেস্তোরাঁয় যেসব খাবার পরিবেশন করা হয়, তার সবই প্রাকৃতিকভাবে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে চাষ করা।

জানা গেছে, রেস্তোরাঁয় মূল খাবার হিসেবে থাকে দেশি লাল চালের ভাত, চিনিগুঁড়া চালের খুদের চচ্চড়ি, চাপা শুঁটকিসহ কয়েক পদের ভর্তা, পাঁচ মিশালী সবজি, তিনপদী ডাল, মাছ, দেশি মুরগির মাংস, রাজহাঁস। থাকে ফুলপিঠা, পাটি পিঠা, শামুক পিঠা আর দইয়ের লাচ্ছি ও মৌসুমি ফলের জুস।

রেস্তোরাঁটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। খাবারের দামও বেশ কম। দেশি লাল চালের (মানিকগঞ্জের জলাজমির বাউলা, নেত্রকোনার ঢেঁকিছাটা বিরই ও খুলনার আমন চাল) ভাত ৪০ টাকা, চিনিগুড়া চালের খুদের চচ্চড়ি ৫০টাকা, টকপাতা, ধনিয়াপাতা, সজপাতা, বেগুন, আলু, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, কাকরোল ভর্তা প্রতিটি ৩০ টাকা, টেপা শুটকি ভুনা ৪০ টাকা, পাঁচমিশালী সবজি ৫০ টাকা, তিনপদী ডাল ৪০ টাকা, মাছের রসা কালী বাউশ ২০০, শোল ১৮০, রুই ১৮০, বিলের নতুন পানির ছোট মাছ থাকে। দেশি মুরগী ১৬০, রাজহাঁস ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়।

ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি থাকে। এজন্য ফেসবুক পেজে বুকিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে। মাটির ঘরে কথা হয় রাজধানীর একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের সঙ্গে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি এসেছেন।

আব্দুর রহমান বলেন, ‘সবকিছুতে কেমন জানি মায়ের স্পর্শ পেয়েছি। মনপ্রাণ ভরে গেছে। মাটির পাত্রে বিষমুক্ত খাবার খাচ্ছি, ভাবতেই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।’

পেটভরে খেয়েদেয়ে দোলনায় দুলতে পারার সুবিধা রেখেছে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। আছে অবসর কাটানোর জন্য গাছতলা। ঘুরতে চাইলে কাছাকাছি দূরত্বে থাকা পর্তুগিজদের বানানো সাধু নিকোলাস ও সাধু আন্তুনির গির্জায় যেতে পারবেন।

কাছাকাছি কোথাও হাঁটাহাঁটি করতে চাইলে চলে যেতে পারেন রেস্তোরাঁর উল্টো দিকে। সেখানে টাটকা শাকসবজি আর মৌসুমি ফল নিয়ে বসে থাকেন আশপাশের বিক্রেতারা।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার কাছেই টঙ্গী মিরের বাজার ও কাঞ্চন ব্রিজের মাঝখানে পাঞ্জোরাতে অবস্থিত ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁ। উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে উলুখোলা বাজার পর্যন্ত গিয়ে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে মাটির ঘর রেস্তোরাঁয়।

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ ও গাউছিয়াগামী বিআরটিসি বাস পাবেন প্রতি ১৫/২০ মিনিট পরপর। এতে চেপে চলে যাবেন কাঞ্চন ব্রিজে (ভাড়া জনপ্রতি ২৫/৩০ টাকা)। সেখান থেকে অটো/লেগুনায় পাঞ্জোরা, একেবারে ‘মাটির ঘর’র সামনে।

এছাড়া টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে বাস/ লেগুনাতে করে যেতে পারবেন। টঙ্গী থেকে প্রথমে মিরের বাজার (ভাড়া ২০/৩০ টাকা), সেখান থেকে অটো/লেগুনাতে সরাসরি রেস্তারাঁয়।

মাটির ঘর রেস্তোরাঁর সামনে থেকেই অটোতে করে যেতে পারবেন জিন্দাপার্কে, ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। সেখানে কাটাতে পারবেন নিরিবিলি কিছু সময়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মাটির ঘর, যেখানে হৃদয় ছুঁয়ে যায়

আপডেট টাইম : ১১:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মাটির ঘর নামের মধ্যেই রয়েছে আলাদা টান। সোদা মাটির গন্ধে বুকভরা নিশ্বাস নেয়ার টান। কিন্তু, গাজীপুরের কালীগঞ্জের ‘মাটির ঘর’ আলাদা কারণে আলোচনায়। মূলত এটি রেস্তারাঁ। কিন্তু, আপনি সেখানে পাবেন গ্রামীণ পরিবেশ, সঙ্গে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য আর প্রাণজুড়ানো খাবার। জম্পেশ আড্ডা দিতে পারবেন প্রিয়জনদের নিয়ে।

এই রেস্তারাঁটির সবখানে মাটির স্পর্শ। ঘরগুলো মাটির তৈরি। রেস্তোরাঁর ব্যবহৃত আসবাবও মাটির। যেসব পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়, সেগুলোও মাটির।

ব্যতিক্রম নামকরণের বিষয়ে ‘মাটির ঘর’র মালিক জাকারিয়া আকন্দ বিপ্লব সাংবাদিককে জানান, ছোটবেলা থেকেই মাটির ঘর তার প্রিয়। ওই টান থেকেই ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মাটি দিয়ে ঘর বানানো শুরু করেন।

তিনি জানান, শুরুতে আশপাশের লোকজন বলছিলেন, এটা আমার পাগলামি। কিছুদিন পরই থেমে যাব। তবে জাকারিয়া থামেননি। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁ গড়ে।

রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব সম্পর্কে জাকারিয়া জানান, মাটির বাড়িঘরের প্রতি মানুষের স্মৃতিকাতরতা আছে, ভালো লাগা কাজ করে। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটিয়ে মনটাও ভালো হয়। এমন চিন্তা থেকে আর গ্রামীণ নানা পদের খাবার নিয়েই এগিয়ে চলেছে মাটির ঘর।

তিনি আরো জানান, তার রেস্তোরাঁয় যেসব খাবার পরিবেশন করা হয়, তার সবই প্রাকৃতিকভাবে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে চাষ করা।

জানা গেছে, রেস্তোরাঁয় মূল খাবার হিসেবে থাকে দেশি লাল চালের ভাত, চিনিগুঁড়া চালের খুদের চচ্চড়ি, চাপা শুঁটকিসহ কয়েক পদের ভর্তা, পাঁচ মিশালী সবজি, তিনপদী ডাল, মাছ, দেশি মুরগির মাংস, রাজহাঁস। থাকে ফুলপিঠা, পাটি পিঠা, শামুক পিঠা আর দইয়ের লাচ্ছি ও মৌসুমি ফলের জুস।

রেস্তোরাঁটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। খাবারের দামও বেশ কম। দেশি লাল চালের (মানিকগঞ্জের জলাজমির বাউলা, নেত্রকোনার ঢেঁকিছাটা বিরই ও খুলনার আমন চাল) ভাত ৪০ টাকা, চিনিগুড়া চালের খুদের চচ্চড়ি ৫০টাকা, টকপাতা, ধনিয়াপাতা, সজপাতা, বেগুন, আলু, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, কাকরোল ভর্তা প্রতিটি ৩০ টাকা, টেপা শুটকি ভুনা ৪০ টাকা, পাঁচমিশালী সবজি ৫০ টাকা, তিনপদী ডাল ৪০ টাকা, মাছের রসা কালী বাউশ ২০০, শোল ১৮০, রুই ১৮০, বিলের নতুন পানির ছোট মাছ থাকে। দেশি মুরগী ১৬০, রাজহাঁস ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়।

ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি থাকে। এজন্য ফেসবুক পেজে বুকিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে। মাটির ঘরে কথা হয় রাজধানীর একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের সঙ্গে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি এসেছেন।

আব্দুর রহমান বলেন, ‘সবকিছুতে কেমন জানি মায়ের স্পর্শ পেয়েছি। মনপ্রাণ ভরে গেছে। মাটির পাত্রে বিষমুক্ত খাবার খাচ্ছি, ভাবতেই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।’

পেটভরে খেয়েদেয়ে দোলনায় দুলতে পারার সুবিধা রেখেছে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। আছে অবসর কাটানোর জন্য গাছতলা। ঘুরতে চাইলে কাছাকাছি দূরত্বে থাকা পর্তুগিজদের বানানো সাধু নিকোলাস ও সাধু আন্তুনির গির্জায় যেতে পারবেন।

কাছাকাছি কোথাও হাঁটাহাঁটি করতে চাইলে চলে যেতে পারেন রেস্তোরাঁর উল্টো দিকে। সেখানে টাটকা শাকসবজি আর মৌসুমি ফল নিয়ে বসে থাকেন আশপাশের বিক্রেতারা।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার কাছেই টঙ্গী মিরের বাজার ও কাঞ্চন ব্রিজের মাঝখানে পাঞ্জোরাতে অবস্থিত ‘মাটির ঘর’ রেস্তোরাঁ। উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে উলুখোলা বাজার পর্যন্ত গিয়ে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে মাটির ঘর রেস্তোরাঁয়।

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ ও গাউছিয়াগামী বিআরটিসি বাস পাবেন প্রতি ১৫/২০ মিনিট পরপর। এতে চেপে চলে যাবেন কাঞ্চন ব্রিজে (ভাড়া জনপ্রতি ২৫/৩০ টাকা)। সেখান থেকে অটো/লেগুনায় পাঞ্জোরা, একেবারে ‘মাটির ঘর’র সামনে।

এছাড়া টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে বাস/ লেগুনাতে করে যেতে পারবেন। টঙ্গী থেকে প্রথমে মিরের বাজার (ভাড়া ২০/৩০ টাকা), সেখান থেকে অটো/লেগুনাতে সরাসরি রেস্তারাঁয়।

মাটির ঘর রেস্তোরাঁর সামনে থেকেই অটোতে করে যেতে পারবেন জিন্দাপার্কে, ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। সেখানে কাটাতে পারবেন নিরিবিলি কিছু সময়।