বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঘন ঘন লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলাসহ হাওরাঞ্চলে বেড়েছে সৌর বিদ্যুতের চাহিদা। সৌর বিদ্যুতের কর্মীদের খবর দিলেই বাড়িতে লাগিয়ে (স্থাপন) দিয়ে যায়। খরচও তুলনামূলক অনেক কম।
এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আবেদন করে বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্টদের সন্তোষজনক আশ্বাস না পাওয়ায় হতাশ হয়ে শত শত আবেদনকারী বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে সৌরবিদ্যুতের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও ভাটি এলাকাগুলোর লোকজন তাই ব্যাপক হারে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আলোর চাহিদা মেটাচ্ছেন। শুধু গ্রাম নয় উপজেলা সদরেও বিদ্যুতের পাশাপাশি মানুষের বাসাবাড়ি কিংবা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য সৌর বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে গ্রাহকরা খুশি।
জানা গেছে, তাড়াইল উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের ধারাবাহিক লোডশেডিং, আকাশে মেঘ জমলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া, মাত্রাতিরিক্ত বিল আদায়, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহক হয়রানিসহ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করে বছরের পর অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় সাধারণ মানুষ পল্লী বিদ্যুতের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফলে বসতবাড়িতে বিকল্প বিদ্যুতায়ন করার মানসিকতা নিয়ে সাধারণ জনগণ সৌরবিদ্যুতের সংযোগ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
ব্যবহারকারীরা জানান – বাতি, বৈদ্যুতিক পাকা (ছোট ডিসি ফ্যান) ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সৌরবিদ্যুৎ এ অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তা ছাড়া যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছাতে এখনো সময়ের দরকার সেই এলাকাগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবাই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা শুরু করেছেন।
উপজেলার অজপাড়াগাঁয়ে সৌরবিদ্যুতের আলোতে বসতবাড়ি আলোকিত হতে দেখে মানুষ বিদ্যুতের জন্য উৎসাহী হয়ে পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় আরো কয়েকটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছে। পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, এ অঞ্চলে ধীরে ধীরে সৌরবিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট বড় প্রায় ২৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে গ্রাহকদের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন বিপণন কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে জানান, ১২ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে চাহিদা ও বিদ্যুৎ ক্ষমতা অনুযায়ী সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন (ইনস্টল) করেন তারা। মোট দামের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা এককালীন পরিশোধ করে বাকি টাকা ৩০ থেকে ৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ থাকায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা গ্রাহকদের কাছে বেশ সুবিধাজনক ও ব্যবহারযোগ্য হয়েছে।
তারা আরো জানান, ইতিমধ্যে তাড়াইল উপজেলার ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। প্রত্যান্ত গ্রামগুলোর পাশাপাশি যেসব এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ স্থাপন করা হয় নাই সেসব এলাকার মানুষ সৌরবিদ্যুতে বেশি উপকৃত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তারা। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তারা দেশ-বিদেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রতিনিয়িত ওয়াকিবহাল হচ্ছেন।
তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রী কলেজের হিসাব সহকারী অধ্যাপক্ষ মনোরঞ্জন তালুকদার এ প্রতিনিধিকে বলেন, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছে। উপযোগিতা থাকায় এ অঞ্চলের (উইন্ডমিল) বায়ুশক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেটি সৌরবিদ্যুতের চেয়েও কম ব্যয়ের হবে।