ঢাকা , বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

হুমকির মুখে ১২০টি পরিবার

কুড়িগ্রামে প্রশাসনের নাকের ডগায় দুধকুমর নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ১২ দিনব্যাপী এই কর্মযজ্ঞ চললেও সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সিন্ডিকেটের যোগসাজশের ফলে বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এতে ভূমিধস ও ভাঙন বিপর্যয়ে রয়েছে ১২০টি পরিবার। পাশাপাশি নদীর উপর পাইপ বসানোয় প্রতিদিন ঘটছে ছোটবড় নৌ-দুর্ঘটনা। এসব অনিয়ম যেন কেউ দেখার নেই।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর বাজারের পাশে নূরানী পাড়ায় দুধকুমর নদীতে ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। বন্যার পর প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র নদের মুখে বালু পড়ায় যাত্রাপুর বাজারের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এখন যাত্রাপুর বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র নৌপথ হলো দুধকুমর নদী। শীর্ণকায় দুধকুমর নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী-উলিপুর- রৌমারী-চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলার তিন শতাধিক চরের মানুষ এই পথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই ভাঙন কবলিত এলাকায়  ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে এই নূরানী ও ফারাজী পাড়া এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে দুধকুমর নদীতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও পাইলিং এর কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই নদীতে ও একই স্থানে ড্রেজার বসিয়ে গত ২১ আগস্ট থেকে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয় সিন্ডিকেটের লোকজন। ওই দিনই জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়।
প্রশাসনের নির্দেশে সেদিনই বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইপ সড়ানোর কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় অধিবাসী মনোয়ার হোসেন ড্রেজার মেশিনসহ সমস্ত মালামাল সড়িয়ে নেয়ার কথা বললে নাজির শফিকুল ইসলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে  চোটপাট করে বলেন, বেয়াদপ তুমি কথা বলো কেন? আমি আছি না। তার এমন আচরণে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার কথার ফলে ড্রেজার মেশিন সেখানেই রাখা হয়। পরে তিনি চলে গেলে রাতে ড্রেজার চালানো হয়। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে এলে ২৬শে আগস্ট সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগের দিন রোববার সারারাত ধরে মেশিনটি চলেছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দেয়া হলেও নাজির শফিকুল ইসলামের কারণে ড্রেজারটি সরানো হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৯শে আগস্ট) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবারো মেশিনটি চালু অবস্থায় পাওয়া যায়।
নাজির শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এ পর্যন্ত তিন দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার অপসারণের জন্য চাপ দেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে ড্রেজার ও পাইপ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তা না হলে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকার সোলেমান, মোতালেব, কাদের, সুরতজামাল ও আজিজুল জানান, ঠিকাদাররা পার্শ্ববর্তী চাকেন্দা খানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত চারতলা ভবণে বালু তোলার জন্য ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে এসব বালু।
এ সময় ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে বালু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও স্কুল কমিটির প্রভাবশালীদের নির্দেশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
নৌকার মাঝি যাত্রাপুরের এনামুল, দৈখাওয়ার মাহালম, চরযাত্রাপুরের কামাল জানান, ড্রেজারের পাইপের কারণে নদী পারাপারে অতিরিক্ত সময় লাগে ৩০/৪০ মিনিট। মুখোমুখি সংঘর্ষষের ঘটনাসহ নানা দুর্ঘনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, নদী তীরে ড্রেজার বসানোর পর গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে মেশিন সরানো হয়েছে। আবার তারা নদীর অপর পাড়ে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে। এটিই এখন মূল নদী। পাইপ বসানোয় নৌকা চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিনকে মোবাইলে অভিযোগের কথা বললে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান,  আপনি বলছেন বালু তুলছে। কিন্তু আমাদের  লোক বলছে মেশিন সরানো হয়েছে। এখন কার কথা বিশ্বাস করবো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এক সপ্তাহে কমিটি গঠন

হুমকির মুখে ১২০টি পরিবার

আপডেট টাইম : ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯

কুড়িগ্রামে প্রশাসনের নাকের ডগায় দুধকুমর নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ১২ দিনব্যাপী এই কর্মযজ্ঞ চললেও সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সিন্ডিকেটের যোগসাজশের ফলে বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এতে ভূমিধস ও ভাঙন বিপর্যয়ে রয়েছে ১২০টি পরিবার। পাশাপাশি নদীর উপর পাইপ বসানোয় প্রতিদিন ঘটছে ছোটবড় নৌ-দুর্ঘটনা। এসব অনিয়ম যেন কেউ দেখার নেই।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর বাজারের পাশে নূরানী পাড়ায় দুধকুমর নদীতে ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। বন্যার পর প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র নদের মুখে বালু পড়ায় যাত্রাপুর বাজারের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এখন যাত্রাপুর বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র নৌপথ হলো দুধকুমর নদী। শীর্ণকায় দুধকুমর নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী-উলিপুর- রৌমারী-চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলার তিন শতাধিক চরের মানুষ এই পথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই ভাঙন কবলিত এলাকায়  ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে এই নূরানী ও ফারাজী পাড়া এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে দুধকুমর নদীতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও পাইলিং এর কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই নদীতে ও একই স্থানে ড্রেজার বসিয়ে গত ২১ আগস্ট থেকে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয় সিন্ডিকেটের লোকজন। ওই দিনই জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়।
প্রশাসনের নির্দেশে সেদিনই বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইপ সড়ানোর কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় অধিবাসী মনোয়ার হোসেন ড্রেজার মেশিনসহ সমস্ত মালামাল সড়িয়ে নেয়ার কথা বললে নাজির শফিকুল ইসলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে  চোটপাট করে বলেন, বেয়াদপ তুমি কথা বলো কেন? আমি আছি না। তার এমন আচরণে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার কথার ফলে ড্রেজার মেশিন সেখানেই রাখা হয়। পরে তিনি চলে গেলে রাতে ড্রেজার চালানো হয়। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে এলে ২৬শে আগস্ট সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগের দিন রোববার সারারাত ধরে মেশিনটি চলেছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দেয়া হলেও নাজির শফিকুল ইসলামের কারণে ড্রেজারটি সরানো হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৯শে আগস্ট) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবারো মেশিনটি চালু অবস্থায় পাওয়া যায়।
নাজির শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এ পর্যন্ত তিন দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার অপসারণের জন্য চাপ দেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে ড্রেজার ও পাইপ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তা না হলে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকার সোলেমান, মোতালেব, কাদের, সুরতজামাল ও আজিজুল জানান, ঠিকাদাররা পার্শ্ববর্তী চাকেন্দা খানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত চারতলা ভবণে বালু তোলার জন্য ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে এসব বালু।
এ সময় ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে বালু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও স্কুল কমিটির প্রভাবশালীদের নির্দেশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
নৌকার মাঝি যাত্রাপুরের এনামুল, দৈখাওয়ার মাহালম, চরযাত্রাপুরের কামাল জানান, ড্রেজারের পাইপের কারণে নদী পারাপারে অতিরিক্ত সময় লাগে ৩০/৪০ মিনিট। মুখোমুখি সংঘর্ষষের ঘটনাসহ নানা দুর্ঘনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, নদী তীরে ড্রেজার বসানোর পর গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে মেশিন সরানো হয়েছে। আবার তারা নদীর অপর পাড়ে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে। এটিই এখন মূল নদী। পাইপ বসানোয় নৌকা চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিনকে মোবাইলে অভিযোগের কথা বললে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান,  আপনি বলছেন বালু তুলছে। কিন্তু আমাদের  লোক বলছে মেশিন সরানো হয়েছে। এখন কার কথা বিশ্বাস করবো।