বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নবজাত শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে বেঁচে থাকে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভ করে।
মায়ের বুকের দুধে একশরও বেশি উপাদান রয়েছে, যা শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
শিশুর জন্য মায়ের দুধ সবচেয়ে ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার। তাছাড়া মায়ের দুধ মা ও শিশুর পারস্পরিক ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে কাজ করে এবং উভয়ের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। মায়ের দুধ বিশুদ্ধ।
এতে কোনোরকম ক্ষতিকর জীবাণু প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া মায়ের দুধ তৈরির বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। মায়ের শরীরে তা আপনাআপনিই তৈরি হয়।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে শুধু শিশুরাই উপকৃত হয় না, মায়েরাও সরাসরি উপকৃত হন অনেক দিক থেকে। অথচ মায়ের দুধের গুণাবলি ও উপকারিতা সম্বন্ধে অবগত হয়েও অনেক মা এ ব্যাপারে অবহেলা বা অনীহা প্রকাশ করেন।
এর প্রধান কারণ অজ্ঞতা বা অশিক্ষা এবং মায়েদের অসুস্থতা ও পুষ্টিহীনতা। সৌন্দর্যহানির বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে অনেকের মধ্যে, যা একেবারেই অবান্তর।
শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধকে বলা হয় শালদুধ বা কলস্ট্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, শালদুধে নবজাতকের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন ও অন্যান্য ক্যালোরিসমৃদ্ধ উপাদান উপযুক্ত পরিমাণে থাকে এবং তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জন্মের আধ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে এ দুধ অবশ্যই খেতে দেওয়া উচিত।
অজ্ঞতার কারণে আমাদের দেশে এখনো অনেক মা শালদুধকে বিষাক্ত মনে করে সন্তানকে তা পান করা থেকে বিরত রাখেন এবং ফেলে দেন। এটিও মারাত্মক ভুল। এর ফলে শিশু তার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং জন্মের অল্পদিনের মধ্যেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
অনেক শিশু জন্মের পর মায়ের দুধ খেতে চায় না এবং মাও এ ব্যাপারে অনেক সময় কোনো গুরুত্ব দেন না। এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী করা উচিত অর্থাৎ একে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। মায়ের দুধ সেরা দুধ, এর কোনো বিকল্প নেই। এ দুধ নিরাপদ, জীবাণুমুক্ত, সহজলভ্য।
সবচেয়ে মূল্যবান কথা-এটি শিশুর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি। মায়ের দুধ পান করলে শিশুর ডায়রিয়া, বিভিন্ন পেটের অসুখ, শ্বাসনালীর সংক্রমণ, খোস-পাঁচড়া, হাম ইত্যাদি কম হয়। পৃথিবীর কোনো খাবারই মায়ের দুধের বিকল্প হতে পারে না। জন্মের পর থেকে শিশু যখনই চায়, তখনই তাকে বুকের দুধ খেতে দেওয়া প্রত্যেক মায়ের কর্তব্য।
এতে বিরক্ত বা বিব্রত হলে চলবে না। এটি শিশুর মৌলিক অধিকার। শিশুকে তার এই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কোনোভাবেই উচিত নয়। বুকের দুধের বিকল্প খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন এবং শিক্ষিত ও সচেতন মায়েদের এগুলোর সহজ ও অবাধ ব্যবহার করতে দেখে গ্রামের সাধারণ মায়েরাও সহজেই গুঁড়োদুধের ওপর ঝুঁকে পড়ে এবং আকৃষ্ট হয়, যার পরিণাম কখনো শুভ হয় না।
এ ব্যাপারে প্রত্যেক মাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞাপনের আকর্ষণীয় প্রচারণায় প্রতারিত না হয়ে, বিভিন্ন কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণাকে দূরে ঠেলে দিয়ে এবং বুকের দুধের গুরুত্ব ও উপকারিতা পুরোপুরি উপলব্ধি করে প্রত্যেক মাকে সচেতন হতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ দিয়ে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান করে গড়ে তুলুন এবং পুষ্টিহীনতা ও রোগ-বালাই থেকে বাঁচান।