দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের জাতীয়করণে চিন্তা করছে সরকার। এজন্য সারা দেশে কত সংখ্যক স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আছে তা জানতে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদরাসা বোর্ড আলাদা বৈঠক করেছে। সমস্যা নিরসন করতে মন্ত্রণালয়ের ওয়ার্কিং কমিটি গত ৪ঠা মে সচিবালয়ে একটি বৈঠক করে। সেখানে স্বতন্ত্র শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিরসন করার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি এখন মন্ত্রী, সচিব হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে সায় পেলেই মিলবে জাতীয়করণের সবুজ সংকেত। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের দাবি দাওয়া কীভাবে নিরসন করা যায় তার একটি রূপরেখাও করা হয়েছে। শিক্ষকদের মূল দাবি জাতীয়করণ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কী হবে সেটা নির্ধারণ করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আমারা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। বাকিটা সরকারের সিদ্ধান্ত। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফ উল্ল্যা মানবজমিনকে বলেন, এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কারণ আমরা যে তালিকা দেবো সেটা দিয়েই হয়তো আগামীতে জাতীয়করণসহ অন্যান্য কার্যক্রম হবে। এজন্য এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। যাতে ভুয়া বা অন্য কোনো পন্থায় কেউ এখানে ঢুকে যেতে না পারে। প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ১৯৮৪-৮৫ সালে ১৮১৯৮টি মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন পায়। ১৯৯৪ সাল থেকে শিক্ষকরা ৫০০ টাকা হারে সম্মানী পেয়ে আসছে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১৫১৯টি মাদরাসার শিক্ষকদের সম্মানী ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হলেও সিংহভাগ ইবতেদায়ী শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একই সময় বেসরকারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী শিক্ষকদের সম্মানীর আদেশ জারি হলেও এখন শুধু বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা এ সুবিধা পাচ্ছেন।
সূত্র বলছে, এই অবস্থায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের দুঃখ কষ্ট লাঘব করতে ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সবাই শিক্ষকদের পক্ষে কথা বলছেন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায় তারাও এই সুযোগ সুবিধার দাবি রাখে। বৈঠকে যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়-১) বৈঠকে বলেন, এভাবে জাতীয়করণ করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় ভুয়া কিছু শিক্ষক এখানেও ঢুকে যেতে পারে। এজন্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে সারা দেশে কতজন শিক্ষক আছেন  তাদের তালিকা করতে হবে। বৈঠকে মাদরাসা বোর্ডের প্রতিনিধি জানান, জেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে ইতিপূর্বে এই তালিকা করা হয়েছে। সারা দেশে মোট ৩৫৪৩টি স্বতন্ত্র মাদরাসা আছে যার মধ্যে ১৫১৪টি ইনডেক্স নম্বর আছে। সভায় ডিপিই মহাপরিচালক জানান, মানবিক দিক থেকে এ  শিক্ষকরা তাদের দাবি দাওয়াগুলো মেনে নেয়ার যৌক্তিক দাবি রাখে। এ ছাড়া বর্তমান শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনে এসব শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন। মহাপরিচালক আরো জানান, তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আগে অবকাঠামো, ছাত্র-ছাত্রী, জমির অবস্থান ও শিক্ষকদের অবস্থান জেনে নিতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ পেশ করবে এবং বিদ্যালয় অনুবিভাগ সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য মাদরাসা বোর্ড সরবরাহ করবে।
কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৯৪ সালের একই পরিপত্রে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা ৫০০ টাকা করে ভাতা পেতেন। পরে ধাপে ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয় এবং ২০১৩ সালের ৯ই জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্ট্রার স্কুলকে জাতীয়করণ করে সরকার। এরপর থেকেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছে। প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর একাধিক স্মারকলিপি দিয়েছেন।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) সংখ্যা ৬ হাজার ৯৯৮টি। শিক্ষক আছেন ৩৪ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ৬ হাজার শিক্ষক মাসিক বেতন মাত্র এক হাজার টাকা পান। অন্যরা মোটেও পান না। এই অবস্থায় ক্লাস রুমে পাঠদান করতে ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা চাই বিষয়টি দ্রুত একটি সমাধান হউক।