ঢাকা , সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জবি শিক্ষার্থীদের অনশনে উসকানির অভিযোগ, যা বললেন ছাত্রদল কর্মী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির গণ অনশনে হ্যান্ড মাইক দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের একজন কর্মীর বিরুদ্ধে।অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আরিফুজ্জামান টিংকু। তিনি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা ও যুগ্ন আহ্বায়ক সুমন সর্দারের অনুসারী।

গতকাল রবিবার রাত ১০টায় ১২ জন অনশনরত শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সব দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরাও দাবি মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণার প্রক্রিয়াতে ছিল। ঠিক এ সময়ে শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি আরিফুজ্জামান। আমি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার রাজনীতি করি।’

জানা যায়, রবিবার রাত ১০টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় ১২ জন অসুস্থ হয়ে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে দাবি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরবর্তী সময়ে হঠাৎ হ্যান্ড মাইক দিয়ে আরিফুজ্জামান ঘোষণা করেন, ‘আপনারা যারা অনশন করতে চান, সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন। যতক্ষণ দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ আমরা এবার অনশন চালিয়ে যাব।’

পরে অনশনকারীরা তার পরিচয় জানতে চান। এ সময় বাংলা বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সুজন মোল্লার অনুসারী ছাত্রদল কর্মী সৌরভ আহমেদ ও আশরাফুল পরিচয় জানতে চাওয়াতে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ২নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌফিব মাহমুদ সোহানের ওপর হামলা করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন।

কোন কারণে কেন তিনি এমন ঘোষণা দিয়েছেন জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী আরিফুজ্জামান টিংকু বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন এই ঘোষণা দিতে বলেছে। তাই আমি এই ঘোষণা দিয়েছি।’

তবে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদার বলেন, ‘আমরা তাকে চিনি না।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকারের সঙ্গে আছে। তবে বিশৃঙ্খলাকারীদের দলে ঠাঁই নাই। কেউ কোনো প্রকার উসকানি ও বিশৃঙ্খলা করে তার ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দীন নাসিরকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘এত অসুস্থ হওয়া ও দাবি মেনে নেওয়ার পর তিনি কেন এখানে আসলেন, সবই সন্দেহজনক। তার বিরুদ্ধে তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে একটি মহল এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ দফা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফেরদৌস। রবিবার রাতে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় ফেরদৌস বলেন, ‘প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি যৌক্তিক আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, একটি মহল এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই আপনাদের সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে এই আন্দেলন প্রশাসনের বিরুদ্ধে না। ’

‘প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের আন্দোলন চলবে। তাই প্রশাসনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে, তারা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এখন আন্দোলন করছে। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা কখনো তাদের ফাঁদে পা দিবেন না,’ বলেন ফেরদৌস।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইনশাআল্লাহ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই বিজয়ের বেশে ফিরে আসব। সেই পর্যন্ত আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করা যাচ্ছে। প্রশাসনকে হেল্প করার জন্য ও প্রশাসনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। ’

ভিডিও বার্তায় ফেরদৌস বলেন, ‘এ আন্দোলন যদি ভিসি বিরোধী আন্দোলনের দিকে চলে যায়, তাহলে বুঝবেন এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের আন্দোলন প্রশাসনের পক্ষে। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে। যদি কেউ প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, ভিসির পদত্যাগ চায়, তারা আমাদের কেউ না। আর সোহান ভাই আমাদেরই ভাই, তার ওপর হামলা মানে আমাদের ওপর হামলা করা। এটি যারা করেছে ভিন্ন উদ্দেশ্যে করেছে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জবি শিক্ষার্থীদের অনশনে উসকানির অভিযোগ, যা বললেন ছাত্রদল কর্মী

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির গণ অনশনে হ্যান্ড মাইক দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের একজন কর্মীর বিরুদ্ধে।অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আরিফুজ্জামান টিংকু। তিনি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা ও যুগ্ন আহ্বায়ক সুমন সর্দারের অনুসারী।

গতকাল রবিবার রাত ১০টায় ১২ জন অনশনরত শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সব দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরাও দাবি মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণার প্রক্রিয়াতে ছিল। ঠিক এ সময়ে শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি আরিফুজ্জামান। আমি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার রাজনীতি করি।’

জানা যায়, রবিবার রাত ১০টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় ১২ জন অসুস্থ হয়ে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়ে দাবি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরবর্তী সময়ে হঠাৎ হ্যান্ড মাইক দিয়ে আরিফুজ্জামান ঘোষণা করেন, ‘আপনারা যারা অনশন করতে চান, সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন। যতক্ষণ দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ আমরা এবার অনশন চালিয়ে যাব।’

পরে অনশনকারীরা তার পরিচয় জানতে চান। এ সময় বাংলা বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সুজন মোল্লার অনুসারী ছাত্রদল কর্মী সৌরভ আহমেদ ও আশরাফুল পরিচয় জানতে চাওয়াতে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ২নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌফিব মাহমুদ সোহানের ওপর হামলা করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন।

কোন কারণে কেন তিনি এমন ঘোষণা দিয়েছেন জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী আরিফুজ্জামান টিংকু বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন এই ঘোষণা দিতে বলেছে। তাই আমি এই ঘোষণা দিয়েছি।’

তবে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন সরদার বলেন, ‘আমরা তাকে চিনি না।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকারের সঙ্গে আছে। তবে বিশৃঙ্খলাকারীদের দলে ঠাঁই নাই। কেউ কোনো প্রকার উসকানি ও বিশৃঙ্খলা করে তার ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দীন নাসিরকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘এত অসুস্থ হওয়া ও দাবি মেনে নেওয়ার পর তিনি কেন এখানে আসলেন, সবই সন্দেহজনক। তার বিরুদ্ধে তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে একটি মহল এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ দফা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফেরদৌস। রবিবার রাতে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় ফেরদৌস বলেন, ‘প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি যৌক্তিক আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, একটি মহল এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই আপনাদের সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে এই আন্দেলন প্রশাসনের বিরুদ্ধে না। ’

‘প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের আন্দোলন চলবে। তাই প্রশাসনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে, তারা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এখন আন্দোলন করছে। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা কখনো তাদের ফাঁদে পা দিবেন না,’ বলেন ফেরদৌস।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইনশাআল্লাহ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই বিজয়ের বেশে ফিরে আসব। সেই পর্যন্ত আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করা যাচ্ছে। প্রশাসনকে হেল্প করার জন্য ও প্রশাসনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। ’

ভিডিও বার্তায় ফেরদৌস বলেন, ‘এ আন্দোলন যদি ভিসি বিরোধী আন্দোলনের দিকে চলে যায়, তাহলে বুঝবেন এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের আন্দোলন প্রশাসনের পক্ষে। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে। যদি কেউ প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, ভিসির পদত্যাগ চায়, তারা আমাদের কেউ না। আর সোহান ভাই আমাদেরই ভাই, তার ওপর হামলা মানে আমাদের ওপর হামলা করা। এটি যারা করেছে ভিন্ন উদ্দেশ্যে করেছে।’