ঢাকা , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলটি গুঁড়িয়ে দিলো দুর্বৃত্তরা বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নিলো শিক্ষার্থীরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রংপুরের বদরগঞ্জে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ে না যেতে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পাশে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজান ওই এলাকার মেনহাজুলকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়টি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজানের বাবা আব্দুল জলিল ৩৩ শতক জমি দান করেন বিদ্যালয়ের নামে। সে হিসেবে জমির খাজনা খারিজসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। তখন বিদ্যালয় নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না।

কিন্তু পরবর্তিতে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত হলে জমির অংশ নিয়ে বিরোধ দেখা দেখা দেয়। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজানের সঙ্গে একই এলাকার মেনহাজুল হক, আবু তাহের, আব্দুল হাই ও আইয়ুব আলীর বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে বিরোধ চরমে উঠে। তারা স্কুলের জমি তাদের বলে দাবি করেন। একপর্যায়ে মেনহাজুল হক ও তার অংশীদারদের দাবি প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজানের বাবা আব্দুল জলিল কৌশলে বিদ্যালয়ের নামে জমির একাংশ লিখে দিয়েছেন। ওই জমি আমাদের নামে আছে।

গতকাল সরজমিন দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে বিদ্যালয়ের বেড়ার ঘরগুলো দুমড়ে মুচড়ে দেয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টেবিল-বেঞ্চ। গোটা বিদ্যালয় মাঠটি বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে কোনোভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে না পারে। এ ছাড়া, বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে লম্বা গর্ত খুড়ে রাখা হয়েছে। এর পরেও শিক্ষার্থীরা বাঁশের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে বিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার রাতের অন্ধকারে গোটা বিদ্যালয়ের টিনের চালাসহ বেড়া গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। স্কুলে ঢুকতে না পেরে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভেতরে বইপত্র নিয়ে যে যার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। বিদ্যালয়ে না যেতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক জোহরা খাতুন, আলফা জাহান লিলি ও মনিরা খাতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলের সামনে একটি বাঁশ ঝাড়ে অবস্থান করছেন।

প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজান বলেন, পৈতৃক সূত্রে ওই জমি আমার বাবা স্কুলের নামে দলিল করে দিয়েছেন। খাজনা খারিজ করাও হয়েছে। জমি বিক্রি করে এখন তারা স্কুলের জমি তাদের বলে দাবি করছে। মূলত তাদের একজনকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা গোটা বিদ্যালয়টি বন্ধ করে রেখেছে। এমনকি গত শুক্রবার রাতের অন্ধকারে গোটা স্কুলের টিনসেডসহ আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়। এখন প্রকাশ্যে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা। এ অবস্থায় আমি স্কুলে যেতে পারছি না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের কারণে বিদ্যালয়ের অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাঠদান যাতে ব্যাহত না হয় এ জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল হক বলেন, যারা স্কুল ভেঙে দিয়ে পাটদান ব্যাহত করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

স্কুলটি গুঁড়িয়ে দিলো দুর্বৃত্তরা বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নিলো শিক্ষার্থীরা

আপডেট টাইম : ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অগাস্ট ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রংপুরের বদরগঞ্জে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ে না যেতে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পাশে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভেতরে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজান ওই এলাকার মেনহাজুলকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়টি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ওই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজানের বাবা আব্দুল জলিল ৩৩ শতক জমি দান করেন বিদ্যালয়ের নামে। সে হিসেবে জমির খাজনা খারিজসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। তখন বিদ্যালয় নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না।

কিন্তু পরবর্তিতে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত হলে জমির অংশ নিয়ে বিরোধ দেখা দেখা দেয়। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজানের সঙ্গে একই এলাকার মেনহাজুল হক, আবু তাহের, আব্দুল হাই ও আইয়ুব আলীর বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে বিরোধ চরমে উঠে। তারা স্কুলের জমি তাদের বলে দাবি করেন। একপর্যায়ে মেনহাজুল হক ও তার অংশীদারদের দাবি প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজানের বাবা আব্দুল জলিল কৌশলে বিদ্যালয়ের নামে জমির একাংশ লিখে দিয়েছেন। ওই জমি আমাদের নামে আছে।

গতকাল সরজমিন দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে বিদ্যালয়ের বেড়ার ঘরগুলো দুমড়ে মুচড়ে দেয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টেবিল-বেঞ্চ। গোটা বিদ্যালয় মাঠটি বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে কোনোভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে না পারে। এ ছাড়া, বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে লম্বা গর্ত খুড়ে রাখা হয়েছে। এর পরেও শিক্ষার্থীরা বাঁশের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে বিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার রাতের অন্ধকারে গোটা বিদ্যালয়ের টিনের চালাসহ বেড়া গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। স্কুলে ঢুকতে না পেরে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে একটি বাঁশ ঝাড়ের ভেতরে বইপত্র নিয়ে যে যার মতো দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। বিদ্যালয়ে না যেতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক জোহরা খাতুন, আলফা জাহান লিলি ও মনিরা খাতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলের সামনে একটি বাঁশ ঝাড়ে অবস্থান করছেন।

প্রধান শিক্ষক ইবনে মিজান বলেন, পৈতৃক সূত্রে ওই জমি আমার বাবা স্কুলের নামে দলিল করে দিয়েছেন। খাজনা খারিজ করাও হয়েছে। জমি বিক্রি করে এখন তারা স্কুলের জমি তাদের বলে দাবি করছে। মূলত তাদের একজনকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা গোটা বিদ্যালয়টি বন্ধ করে রেখেছে। এমনকি গত শুক্রবার রাতের অন্ধকারে গোটা স্কুলের টিনসেডসহ আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়। এখন প্রকাশ্যে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা। এ অবস্থায় আমি স্কুলে যেতে পারছি না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের কারণে বিদ্যালয়ের অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাঠদান যাতে ব্যাহত না হয় এ জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল হক বলেন, যারা স্কুল ভেঙে দিয়ে পাটদান ব্যাহত করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।