বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ যেন ঝড়ের তাণ্ডব হয়েছে। লণ্ডভণ্ড রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীদের বসার ব্যবস্থা বলতে কোনো কিছু নেই। বেঞ্চ-টেবিল আস্ত নেই কোনো শ্রেণি কক্ষে। দরজা-জানালা সবই ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে। অফিস রুমের আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়েছে। এক কথায় বিদ্যালয় ভবনের দেয়াল আর উপরের ছাদ ছাড়া কোনো কিছু নেই। ৩০শে ডিসেম্বর এ বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র ছিল।
বেলা ১২টার দিকে দু-দল সমর্থকের মধ্যে বিরোধে এই হাল হয় বিদ্যালয়টির। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ভোট গ্রহণকালে এ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করতে এসে হামলার মুখে পড়েন। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচান তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। কেন্দ্রের এই গোলযোগ থামাতে পুলিশ গুলি চালালে নিহত হয় ইসরাইল নামের এক কিশোর। নির্মাণ শ্রমিক ছিল সে। বিদ্যালয়ের পেছন দিকে বাড়ি রহিমার।
তিনি বলেন-‘আরে বাপরে বাপ ভূমিকম্প চালাইছে’। এই দরজা হেই দরজা সব ভাইঙ্গা লাইছে গ্রামের মানুষ আইয়া। সব দরজা ভাঙছে বেডারে (রবিউল মোকতাদিররে) ধরবার লাইগ্যা। তারে মাইরা লাইতো অই কিনা। মহিলা মানুষ আমরা চিল্লাইছি। আমরা ভাবছিলাম ওয়াল ভাইঙ্গা তারে পেছন দিয়া বাইর কইরা নিমু। এর মধ্যেই পুলিশ আইছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান-সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ চলছিল এই কেন্দ্রে। ১২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোটগ্রহণ হয়। ১২টার পর এমপি মহোদয় আমাদের কেন্দ্র ভিজিট করতে আসেন। তিনি আসার পর বিএনপির সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে হঠাৎ আক্রমণ করে। তারা প্রিজাইডিং অফিসারকে মারধর করে। কেন্দ্র দখল করে। এ সময় এমপি মহোদয় একটি রুমে আটকা পড়ার পর তার রুমের দরজা-জানালা ভেঙ্গে ফেলে তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে আহত করে।
গতকাল সকালে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে ২০/২২ জন শিক্ষার্থীর হাজিরা রয়েছে। দুটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছিল তাদের। এর আগের দিন বই বিতরণ হইছে। গতকালও এসেছে অনেক শিক্ষার্থী বই নিতে। কিন্তু নতুন বই পাওয়ার আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবারই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন জানান-৮টি শ্রেণি কক্ষের সব দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। বেঞ্চ ভাঙচুর হয়েছে। এই অবস্থায় ফ্লোরে ক্লাস চালাতে হবে। ৩৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানান প্রধান শিক্ষক। ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন তিনি। এতে ২টি আলমারি, একটি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট ট্রফি, ১০সেট টেবিল, ১০০টি উঁচু-নিচু বেঞ্চ, ১০টি দরজা, ৮টি জানালা, ৮টি চেয়ার, ৮টি প্লাস্টিকের সেফ, জ্যামিতির বক্স, শিশু শ্রেণির বিভিন্ন উপকরণ, ফাইলপত্র, বৈদ্যুতিক মালামাল সহ বিদ্যালয়ের সকল জিনিসপত্র ভাঙচুর ও নষ্ট করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ভোটের দিন এ কেন্দ্রেই দায়িত্ব পালন করছিলেন বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার।
তিনি জানান-সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। এরপরই হঠাৎ করে গণ্ডগোল শুরু হয়। কোনো ভাবেই নিজেকে সেইফ করতে পারছিলাম না। অফিস রুমে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার পরও ইটপাটকেল মারা হয় আমাদের ওপর। আরেকজন শিক্ষক ফাতেমা খাতুন জানান-বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। ক্লাস নিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যালয় ছাড়াও ঘটনার সময় আশপাশের বাড়িঘরে হামলা হয়। এ ঘটনার পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পুরুষ লোক। ঘটনার পর কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।