ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়

১৩২ বছর ধরে যে বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সেটি হলো মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার পাঁচশ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৫ জন। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বইয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। বিদ্যালয়ে রয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ নয় একর। বিদ্যালয়ের স্কুল মূল ক্যাম্পাসের বাইরে একটি নিজস্ব খেলার মাঠ, তিনতলা বিশিষ্ট একটি, দ্বিতলা বিশিষ্ট একটি এবং একতলা বিশিষ্ট দুটি ভবন রয়েছে।

১৮৮৫ সালে তত্কালীন ত্রিপুরা জেলার অধীন মুরাদনগর থানার জন্ম হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা সদরের প্রাণকেন্দ্রে মনোরম পরিবেশে চট্টগ্রাম বিভাগের তত্কালীন প্রভাবশালী জমিদার উমালোচন মজুমদার প্রথমে বাঙ্গরা উমালোচন হাই ইংলিশ স্কুলরূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো দিতে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর তার নামেই এর নামকরণ করা হয়।

ব্রিটিশ শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হওয়ার পর বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় বাঙ্গরা উমালোচন হাই স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি রায় বাহাদুরের আবাসভূমিতে কুঁড়ে ঘরে চালানো হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ১৯২৫ সালে একটি কুচক্রি মহল সেই কুঁড়ে ঘরটি আগুনে পুড়িয়ে দিলে পরবর্তীতে টিনের ঘর হিসেবে নির্মাণ করা হলে সেটিও বছরখানেক পর আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলা হয়। তারপর থেকে বর্তমান জায়গায় প্রতিষ্ঠাতার ছোট ছেলে রায় বাহাদুর রূপেন্দ্র লোচন মজুমদারের অক্লান্ত চেষ্টায় একতলা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরু থেকে বিদ্যালয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, কসবা ও নবীনগর, কুমিল্লা জেলার হোমনা, বুড়িচং এবং দেবিদ্বার উপজেলার ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার সুবিধার্থে স্বয়ংসম্পূর্ণ একমাত্র আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান ও উত্তম ফলাফলের জন্য তত্কালীন জেলা ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্থান লাভ করে। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ীভাবে মঞ্জুরি দেয়। রায় বাহাদুর রূপেন্দ্র লোচন মজুমদার বিদ্যালটির নামে উত্সর্গ করে গেছেন প্রায় নয় একর সম্পত্তি।

এ বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিরডাপ এর প্রাক্তন পরিচালক দেবী প্রসাদ মজুমদার, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব রনজিত্ কুমার সেন, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি রেয়াজুল হক আজাদ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের ও হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মো. খোরশেদ আলম।

বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আমিও এ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম। আজ এ স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হতে পেরে গর্ববোধ করি। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার চতুর্থ প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এটি। তাই আশা করি বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়

আপডেট টাইম : ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০১৭

১৩২ বছর ধরে যে বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সেটি হলো মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার পাঁচশ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৫ জন। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বইয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। বিদ্যালয়ে রয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ নয় একর। বিদ্যালয়ের স্কুল মূল ক্যাম্পাসের বাইরে একটি নিজস্ব খেলার মাঠ, তিনতলা বিশিষ্ট একটি, দ্বিতলা বিশিষ্ট একটি এবং একতলা বিশিষ্ট দুটি ভবন রয়েছে।

১৮৮৫ সালে তত্কালীন ত্রিপুরা জেলার অধীন মুরাদনগর থানার জন্ম হওয়ার পর এটি দ্বিতীয় বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা সদরের প্রাণকেন্দ্রে মনোরম পরিবেশে চট্টগ্রাম বিভাগের তত্কালীন প্রভাবশালী জমিদার উমালোচন মজুমদার প্রথমে বাঙ্গরা উমালোচন হাই ইংলিশ স্কুলরূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো দিতে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর তার নামেই এর নামকরণ করা হয়।

ব্রিটিশ শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হওয়ার পর বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় বাঙ্গরা উমালোচন হাই স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি রায় বাহাদুরের আবাসভূমিতে কুঁড়ে ঘরে চালানো হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ১৯২৫ সালে একটি কুচক্রি মহল সেই কুঁড়ে ঘরটি আগুনে পুড়িয়ে দিলে পরবর্তীতে টিনের ঘর হিসেবে নির্মাণ করা হলে সেটিও বছরখানেক পর আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলা হয়। তারপর থেকে বর্তমান জায়গায় প্রতিষ্ঠাতার ছোট ছেলে রায় বাহাদুর রূপেন্দ্র লোচন মজুমদারের অক্লান্ত চেষ্টায় একতলা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরু থেকে বিদ্যালয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, কসবা ও নবীনগর, কুমিল্লা জেলার হোমনা, বুড়িচং এবং দেবিদ্বার উপজেলার ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার সুবিধার্থে স্বয়ংসম্পূর্ণ একমাত্র আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান ও উত্তম ফলাফলের জন্য তত্কালীন জেলা ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের স্থান লাভ করে। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ীভাবে মঞ্জুরি দেয়। রায় বাহাদুর রূপেন্দ্র লোচন মজুমদার বিদ্যালটির নামে উত্সর্গ করে গেছেন প্রায় নয় একর সম্পত্তি।

এ বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিরডাপ এর প্রাক্তন পরিচালক দেবী প্রসাদ মজুমদার, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব রনজিত্ কুমার সেন, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি রেয়াজুল হক আজাদ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজের ও হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মো. খোরশেদ আলম।

বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আমিও এ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম। আজ এ স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হতে পেরে গর্ববোধ করি। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার চতুর্থ প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এটি। তাই আশা করি বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হবে।