ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কীটনাশক সম্পর্কে অজ্ঞ কৃষক, হুমকিতে কৃষি

প্রতিনিয়ত বাড়ছে ফসলে কীটনাশক, বিষসহ নানা উপকরণের ব্যবহার। কিন্তু এসবের মূল ব্যবহারকারী কৃষকেরা জানেন না এতে জমি ও ফসলে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে। ক্ষতির পরিমাণও জানা নেই। ব্যবহারের পরিমাপ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ তারা।

অধিকাংশই কৃষকই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা পণ্য সরবরাহকারীদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব উপকরণ জমিতে প্রয়োগ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা মেলে না।

দেশের কৃষি প্রধান রংপুর অঞ্চলে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে। কৃষকদের দাবি, দিনদিন জমির উর্বরতা ও মান কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত কীটনাশক, বিষ প্রয়োগের ফলে দিনদিন জমির স্বাস্থ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবটা দীর্ঘমেয়াদি হবে। এভাবে চলতে থাকলে হুমকিতে পড়বে কৃষি জমির স্বাস্থ্য। সচেতনতা ও তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি কীটনাশক প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।

প্রায় ৩০ বছরের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষক আব্দুস ছামাদ বলেন, এক সময়ে জমিতে যে পরিমাণ সারসহ অন্যান্য উপকরণ দিতে হতো আজ তার কয়েকগুণ প্রয়োগ করতে হয়। এতেই তো পরিষ্কার জমির মান অবনতির দিকে যাচ্ছে।

পাশে থাকা আজিজার রহমান নামে এক কৃষক বলেন, আমরা তো জানি না কী প্রয়োগ করলে জমির ক্ষতি হবে। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের বিভিন্ন বিষ, কীটনাশক সরবরাহ করা হয়। আমরা তাদের কথা মতো কিনে নিয়ে জমিতে দেই। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কেউ চিন্তা করি না।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চর ধুবনী গ্রামের মাজেদুল ইসলাম বলেন, আগের মতো জমির উর্বরতা নাই। বিষ, পোকা মাকড়ের ওষুধ, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ ব্যবহার করলেই কেবল ফসল ভালো হচ্ছে। তবে অনেকেই ক্ষতিতেও পরেন।

সরেজমিনে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন কৃষি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগাছা নিধন থেকে শুরু করে জমিতে একাধিক কেমিক্যাল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। এসব কেমিক্যালযুক্ত ওষুধের প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকৃত কিংবা মানের দিক দিয়ে কেমন সেগুলোর কোনো খোঁজ খবর নেন না তারা।

কী কারণে কত পরিমাণ এসব বিষ, কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে তাও কেউ জানেন না। আবদুস রহিমসহ একাধিক কৃষক বলেন, ধরেন আগাছা নিধনের জন্য এক প্যাকেট বিষ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এটা সব ধরনের (সব ফসলের) জমিতেই আমরা ব্যবহার করছি। কারও জমিতে আগাছা কম আবার কারও জমিতে আগাছা বেশি আছে। তা বলে বিষের পরিমাণ কম বেশি হচ্ছে না।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কৌশলে এসব বিষ, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ কৃষকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কৌশলের মধ্য অন্যতম হলো বাকিতে বিক্রয়, অনেক বেশি ফলনের আশ্বাস, নানা রকম চমকপ্রদ তথ্য।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়ম বহির্ভূত কীটনাশক ব্যবহার জমি ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক মাটিকে দূষণ করে। মাটির গুণাবলী, উপকারী পোকা মাকড় ধ্বংস করে দেয়।

তার মতে, এর ফলে মানবদেহে চর্ম, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগও দেখা দিতে পারে। নিয়ম ছাড়া ব্যবহারের ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাটির প্রাণ শক্তি অণুজীবের।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় বলেন, এই রীতি অতীতে ছিলো। এখন বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবাই সচেতন। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কার্যক্রম চলছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কীটনাশক সম্পর্কে অজ্ঞ কৃষক, হুমকিতে কৃষি

আপডেট টাইম : ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

প্রতিনিয়ত বাড়ছে ফসলে কীটনাশক, বিষসহ নানা উপকরণের ব্যবহার। কিন্তু এসবের মূল ব্যবহারকারী কৃষকেরা জানেন না এতে জমি ও ফসলে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে। ক্ষতির পরিমাণও জানা নেই। ব্যবহারের পরিমাপ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ তারা।

অধিকাংশই কৃষকই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা পণ্য সরবরাহকারীদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব উপকরণ জমিতে প্রয়োগ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা মেলে না।

দেশের কৃষি প্রধান রংপুর অঞ্চলে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে। কৃষকদের দাবি, দিনদিন জমির উর্বরতা ও মান কমে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত কীটনাশক, বিষ প্রয়োগের ফলে দিনদিন জমির স্বাস্থ্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবটা দীর্ঘমেয়াদি হবে। এভাবে চলতে থাকলে হুমকিতে পড়বে কৃষি জমির স্বাস্থ্য। সচেতনতা ও তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি কীটনাশক প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।

প্রায় ৩০ বছরের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষক আব্দুস ছামাদ বলেন, এক সময়ে জমিতে যে পরিমাণ সারসহ অন্যান্য উপকরণ দিতে হতো আজ তার কয়েকগুণ প্রয়োগ করতে হয়। এতেই তো পরিষ্কার জমির মান অবনতির দিকে যাচ্ছে।

পাশে থাকা আজিজার রহমান নামে এক কৃষক বলেন, আমরা তো জানি না কী প্রয়োগ করলে জমির ক্ষতি হবে। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের বিভিন্ন বিষ, কীটনাশক সরবরাহ করা হয়। আমরা তাদের কথা মতো কিনে নিয়ে জমিতে দেই। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা কেউ চিন্তা করি না।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চর ধুবনী গ্রামের মাজেদুল ইসলাম বলেন, আগের মতো জমির উর্বরতা নাই। বিষ, পোকা মাকড়ের ওষুধ, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ ব্যবহার করলেই কেবল ফসল ভালো হচ্ছে। তবে অনেকেই ক্ষতিতেও পরেন।

সরেজমিনে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন কৃষি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগাছা নিধন থেকে শুরু করে জমিতে একাধিক কেমিক্যাল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। এসব কেমিক্যালযুক্ত ওষুধের প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকৃত কিংবা মানের দিক দিয়ে কেমন সেগুলোর কোনো খোঁজ খবর নেন না তারা।

কী কারণে কত পরিমাণ এসব বিষ, কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে তাও কেউ জানেন না। আবদুস রহিমসহ একাধিক কৃষক বলেন, ধরেন আগাছা নিধনের জন্য এক প্যাকেট বিষ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এটা সব ধরনের (সব ফসলের) জমিতেই আমরা ব্যবহার করছি। কারও জমিতে আগাছা কম আবার কারও জমিতে আগাছা বেশি আছে। তা বলে বিষের পরিমাণ কম বেশি হচ্ছে না।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কৌশলে এসব বিষ, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ কৃষকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কৌশলের মধ্য অন্যতম হলো বাকিতে বিক্রয়, অনেক বেশি ফলনের আশ্বাস, নানা রকম চমকপ্রদ তথ্য।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়ম বহির্ভূত কীটনাশক ব্যবহার জমি ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক মাটিকে দূষণ করে। মাটির গুণাবলী, উপকারী পোকা মাকড় ধ্বংস করে দেয়।

তার মতে, এর ফলে মানবদেহে চর্ম, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগও দেখা দিতে পারে। নিয়ম ছাড়া ব্যবহারের ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাটির প্রাণ শক্তি অণুজীবের।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় বলেন, এই রীতি অতীতে ছিলো। এখন বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবাই সচেতন। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কার্যক্রম চলছে।